বাংলাদেশে প্রথম জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য প্রকাশ করে, সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক।
এ ভাইরাসে সংক্রমণের কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটউট।
১৯৪৭ সালে আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় প্রথম একটি বানরের দেহে এবং ১৯৫২ সালে নাইজেরিয়ায় প্রথম মানবদেহে জিকা ভাইরাস সনাক্ত করেন গবেষকরা। এ পর্যন্ত প্রায় ২৩টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ কারণে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারাবিশ্বেই সতর্ক অবস্থা ঘোষণা করে।
এরপরই দেশের বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস সনাক্তকরণে নানা পদক্ষেপ নেয় সরকার। এরই মধ্যে দেশে এই ভাইরাসে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক। এ সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সতর্ক থাকারও আহবান জানান।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, "জিকা ভাইরাস এমনিতে কোন প্রাণঘাতি ভাইরাস নয়। যদি গর্ভবতী মাকে জিকা ভাইরাসবাহী মশা কামড় দেয় তাহলে গর্ভস্থ সন্তানের উপর জিকা ভাইরাসের বিশেষ ধরণের প্রভাব পড়ে থাকে। সেজন্য গর্ভবতী মায়েদেরকে মশার কামড় থেকে বেঁচে থাকতে হবে।"
এদিকে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ রয়েছেন এবং জিকা ভাইরাস সংক্রমণের এখনও পর্যন্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটউট-আইইডিসিআর-এর পরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, "এই অঞ্চলে আমরা এমন কোন কিছু দেখছি না যে, ছোট মাথার বাচ্চার জন্মগ্রহণ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে আমরা যখন কেসটা পেলাম, তাতে বুঝা যাচ্ছে আমাদের এখানে কিছুটা হলেও আছে। তবে এটাও বলা যায় আমাদের এখানে তেমন কোন সংক্রমণ নেই।"
জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, সবাইকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, "এই রোগের লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। কখনও কখনও লালচে দানা হতে পারে। শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়। এই রোগ থাকে বাঁচতে প্রধান কাজ হচ্ছে মশা নিয়ন্ত্রণ করা। মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।"
২০১৪ সালের আগস্ট মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক ব্যক্তির রক্তের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়।
জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ
এদিকে, জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হবার পরামর্শ দিয়েছেন, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের তার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। তিনি আরো জানান, এই ভাইরাস আক্রান্ত হলে কারো মৃত্যু হয় না।
ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, "পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত একজন মানুষও জিকা ভাইরাসে মারা যায়নি। এই ভাইরাসটি আমাদের দেহের যে ৫টি প্রধান অঙ্গ রয়েছে মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, লিভার, কিডনি এবং রক্তনালী এগুলোর একটিকেও আক্রান্ত করে না। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায় না। শুধুমাত্র এডিস মশা এই ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে।"