নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

পাপিয়াকাণ্ডে আলোচনার তুঙ্গে থাকা গুলশানের পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিনের মদ বেচাকেনার হিসাব চেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। রোববার (৮ মার্চ) অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রোর উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা গণমাধ্যমকে বলেন, ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের বারে মদ কেনা-বেচা এবং মজুদের তালিকা এবং সেই সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ওয়েস্টিন হোটেলে মোট সাতটি মদের বার লাইসেন্স রয়েছে। এগুলো হল- হোটেলের ২৩ তলায় প্রাগো বার, ৬ তলায় সুইমিং পুল বার এবং তৃতীয় তলায় আছে টেস্ট বার, লিভিং রুম বার, লবি বার, ডেইলি ট্রিটস বার, ব্যাংকোয়েট বার ও গেস্টরুম বার।

শামীমা নূর পাপিয়ার বিপুল পরিমাণ মদ কেনার তথ্য প্রকাশের প্রেক্ষাপটে হোটেল ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষের কাছে এসব বারে মজুদকৃত বিদেশি মদ-বিয়ার আমদানির কাগজপত্র চেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। একই সঙ্গে হোটেলে মজুদকৃত মদ ও মদজাতীয় পানীয় কাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে, তারও তালিকা দিতে বলা হয়েছে।

উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, গত সপ্তাহের শেষের দিকে চিঠি দিয়ে দ্রুত তাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব জানিয়েছিল, পাঁচ তারকা মানের হোটেল ওয়েস্টিনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট ভাড়া করে মাসের পর মাস থাকাকালে পাপিয়া প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে মদের বিল দিতেন। মোট ৫১ দিনে বার ব্যবহারের জন্য পাপিয়া ১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদে পরিশোধ করেন।

একইসঙ্গে ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক পাপিয়ার ‘যৌনসেবার কারবারের’ কথাও সেসময় জানিয়েছিল র‌্যাব। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত সপ্তাহে ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষের কাছে মদের হিসাব চেয়ে চিঠি পাঠায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মুসলমান নাগরিকদের জন্য মদ অবৈধ। কোনো মুসলমান চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া মদ বা মদ জাতীয় পানীয় পান করতে পারবেন না। তবে বিদেশিসহ অন্যদের পরিবেশনের জন্য মদ বিক্রির লাইসেন্স দেয়া হয়।

মুকুল চাকমা জানান, ওয়েস্টিন হোটেলে মোট সাতটি অনুমোদিত বার রয়েছে। বারে মদ সংগ্রহ দুই পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। হোটেল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন থেকে কিনবে অথবা নিজেরা আমদানি করবে। এর বাইরে কোনোভাবেই তারা মদ কেনা-বেচা করতে পারবে না।

অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসার পর তারা আলোচনা করে ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

অনুমোদিত বারের কাছ থেকে প্রতিমাসেই এসবের হিসাব নিয়ে থাকলেও পাপিয়াকাণ্ডের কারণে সেই সময়টির কেনা-বেচায় গুরুত্ব দিচ্ছে অধিদপ্তর। মুকুল চাকমা বলেন, তদন্তে কোনোরূপ সমন্বয়হীনতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমনকি শুধু ওয়েস্টিন নয়, আরও নামীদামি কিছু হোটেলেও বার রয়েছে, সে সবের ব্যাপারেও খোঁজ নিচ্ছি আমরা বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে হোটেল ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে হোটেলটির জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তা সাদমান সালাহউদ্দিনের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আপনার সঙ্গে দু’মিনিট পরে কথা বলছি। পরে ফোন করা হলে তিনি আর ফোন ধরেননি।