বিধবা ও বয়স্ক ভাতার কার্ড কপালে জোটেনি অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা বৃদ্ধা
3, March, 2021, 1:59:4:AM
মোঃ বাবুল হোসেন পঞ্চগড়
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এক বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছেন মো. ইউসুফ আলী (৩৮) নামের এক যুবক। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে পা হারাতে বসেছেন তিনি। ছেলের এমন অবস্থা দেখে পাশে বসে কাঁদছেন বৃদ্ধা মা খাইরুন নেছা (৬৫)।
উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বামনাপাড়া গ্রামে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট একটি ঘরে ভাঙা পা নিয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছেন ইউসুফ আলী। পাশে মাটিতে বসে কাঁদছেন তার মা খাইরুন নেছা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউসুফ আলী একই এলাকার মৃত আবু হোসেনের ছেলে। ছয় ভাই তিন বোনের মধ্যে ইউসুফ পঞ্চম। ইউসুফ রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতেন। সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে এখন বৃদ্ধা মায়ের ঘাড়ে বোঝা হয়ে পড়ে আছেন।
ইউসুফ আলী জানান, এক বছর আগে কাজ শেষে রাতে অটোগাড়িতে করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। এতে তার বাঁ পা ভেঙে যায়। তখন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে চিকিৎসা চালাতে বলেছেন চিকিৎসক।
এ অবস্থায় ভাইয়েরা তাকে সহায়তা দেন। কিন্তু ভাইদের আর্থিক অবস্থা ভালো না বিধায় চিকিৎসা খরচ বন্ধ করে দেন। ফলে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায় তার। ছয়-সাত মাস ধরে চিকিৎসা চালাতে না পারায় পা অচল হয়ে পড়ে। এখন তাকে শুয়ে-বসে থাকতে হয়। খাওয়া-দাওয়া, প্রস্রাব-পায়খানা সবকিছু বিছানায় সারতে হয়। তার দেখাশোনা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা। এখন ছেলের পাশে বসে শুধু চোখের পানি ফেলছেন।
প্রতিবেশীরা জানান, ইউসুফ আলী রাজমিস্ত্রির কাজ করে বৃদ্ধা মায়ের সংসার চালাতেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পা অচল হয়ে যায়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার মা। প্রতিবেশীদের সামর্থ্য নেই। তবে সবাই সহায়তা করলে ইউসুফ সুস্থ হয়ে উঠবে।
খাইরুন নেছা , আমি বৃদ্ধা মানুষ। ছেলে উপার্জন করে খাওয়াত। দুর্ঘটনায় পা ভেঙে এখন বিছানায় পড়ে আছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সবার সহায়তা চাই।
স্বামী হারানোর এক যুগ পেরিয়ে গেছে। চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে বার বার গিয়েও একটা বিধবা ভাতার কার্ড পাইনি। ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও পাইনি বয়স্ক ভাতার কার্ড।
খাইরুন নেছা
হাফিজাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) সৈয়দ আলী বলেন, খাইরুন নেছা ও তার ছেলে ইউসুফ আলীকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। খাইরুন নেছা বিধবা ও বয়স্ক ভাতার জন্য এসেছিলেন। তিনি পৌরসভার ভোটার; তাই ইউনিয়ন থেকে ভাতার কার্ড দেওয়া হয়নি। ভোটার এলাকা স্থানান্তর করলে তাকে ভাতার কার্ড দেব বলেছি।
হাফিজাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মুসা কলিমুল্লাহ বলেন, খাইরুন নেছা ও তার ছেলে ইউসুফ আলীকে সহায়তা দিয়েছি। তারা আমার ইউনিয়নের ভোটার নয়; এজন্য তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না। ভোটার এলাকা স্থানান্তর করলে সরকারি সুবিধা পাবেন তারা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেব। তারা আবেদন করলে সহায়তার চেষ্টা করব।