প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই বঙ্গবন্ধু-প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর, দাবী ভুক্তভোগিদের
6, March, 2021, 1:14:22:AM
মোঃ বাবুল হোসেন পঞ্চগড় :
পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহলের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলীম মাদ্রাসায় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারির এই ঘটনায় মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় মমিনুল ইসলামকে প্রধান করে আদালতে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এদের মধ্যে তিনজন বর্তমান জেল হাজতে রয়েছে।
মামলায় জানানো হয়, তালা ভেঙে মাদ্রাসার লাইব্রেরী কক্ষে ঢুকে টেবিলে উঠে প্রধান আসামী মমিনুল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানানো ছবি মেঝেতে ফেলে অবমাননা করে।
এদিকে, মামলাটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করছেন বিবাদীপক্ষ। তাদের দাবি, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সেদিন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিজেরাই এসব ভাঙচুর করেন।
শুক্রবার (৫ মার্চ) দুপুরে এক প্রতিবাদ সভায় এ দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগিরা। বিলুপ্ত ওই ছিটমহলের একটি বাড়িতে প্রতিবাদ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন, মামলার আসামী মমিনুল ইসলাম ও হারুনুর রশিদ।
মমিনুল বক্তব্যে বলেন, গত ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের পর এখানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলিম মাদ্রাসা, মফিজার রহমান কলেজ, রাজমহল উচ্চ বিদ্যালয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিবন্ধী স্কুল’ নামের চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজি করে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলছে অধ্যক্ষ মোজাম্মেলের ভাই মফিজার রহমান। বিভিন্ন কৌশলে তিনি চার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই সভাপতি পদ দখল করে নিজের পছন্দ মত যোগ্যতা যাচাই না করেই তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনদের। ছিটমহলের শিক্ষিত বেকারদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার থাকলেও বঞ্চিত করেছেন তিনি। এছাড়া তার খেয়াল খুশি মত শিক্ষক ছাটাই করেন।
মমিনুল বলেন, মফিজারের এহেন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আমি সোচ্চার ছিলাম। ছিটমহলবাসীর হয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। এর মধ্যেই আজিমুল ইসলাম নামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলিম মাদ্রাসার এব শিক্ষককে মৌখিক ভাবে চাকুরিচ্যুত করে মফিজার এবং তার ভাই মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক। এঘটনায় আজিমুল ইসলাম আমাকে স্বাক্ষী করে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি একটি অভিযোগের ভিত্তিতে মাদ্রাসাটিতে তদন্তে আসেন রংপুর বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের উপ পরিচালক। সেখানে মফিজার রহমানসহ মাদ্রাসার সকল শিক্ষক উপস্থিত ছিলো। আমিও সেখানে স্বাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থেকে উপ পরিচালক মহোদয়ের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেই। তদন্ত শেষে উপ পরিচালক চলে গেলে মফিজার ও তার ভাই অধ্যক্ষ মোজাম্মেলসহ ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষক আমার উপর পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা করে। এক পর্যায়ে আমাকে মাদ্রাসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে বেধরক মারপিট করে এবং তারা নিজেরাই বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে আমাকে উদ্ধারের জন্য স্থানীয়রা মাদ্রাসা মাঠে সমবেত হয় এবং পঞ্চগড় সদর থানায় খবর দেয়। পরে সদর থানার উপ পরিদর্শক আব্দুল কাইয়ুমসহ পুলিশের একটি দল গিয়ে আমাকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করেন। তখনও মাদ্রাসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর হয়নি বা কেউ করেনি।
তিনি বলেন, অভিযোগ তোলা হয়েছে আমি এবং আমাকে উদ্ধার করতে আসা লোকজন মাদ্রাসার আসবাবপত্রসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করেছি। আমি হলফ করে বলতে পারি আমাকে ফাঁসাতে মফিজারসহ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনার দুইদিন পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের নাটক করেছে। একই সাথে স্বার্থ হাসিলের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননা করেছে।
মমিনুল আরো বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনা হলেও ৬ ফেব্রুয়ারি তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছে। বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হলে ৭ ফেব্রুয়ারি ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন দেই।
হারুনুর রশিদ বলেন, সেদিন পুলিশ এসে মমিনুলকে উদ্ধার করে এবং মফিজার ও মোজাম্মেলসহ বাকীদেরকে থানায় নিয়ে যায়। যদি আমরা অপরাধীই হতাম তাহলে সেদিন পুলিশ আমাদেরকে আটক করলোনা কেন?
এদিকে, পঞ্চগড় সদর থানার উপ পরিদর্শক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ওইদিন কোন ছবি ভাঙচুরের দৃশ্য দেখা যায়নি।