আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি। বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ভরাট হওয়া চরকগাছিয়া জিনবুনিয়া খালটি খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়মানুযায়ী খাল খনন না করে টাকা উত্তোলন করে নিচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া খালটির একটি অংশে খনন করতে গিয়ে এক বাসিন্ধার বসতঘর ও জমি রক্ষায় ঠিকাদার ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩.৯৭৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চরকগাছিয়া জিনবুনিয়া খালটি খননের কাজ পায় পটুয়াখালীর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজাদ এন্টারপ্রাইজ। এ খালটি খননের তদারকির দায়িত্বে আছেন বরগুনা পাউবো এসও মোঃ আমিনুল ইসলাম সোহাগ।
সরেজমিনে খালটির খননকৃত কাজ দেখতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন খালটি ভরাট থাকার কারনে ওই এলাকার ২ হাজার কৃষক পরিবারের প্রায় ৫ হাজার একর ফসলী জমির কৃষি কাজে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে আসছে। খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় তারা সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পানির অভাবে কৃষি কাজ করতে পারছিলেন না। এলাকার কৃষকদের বহুদিনের দাবী ছিলো এ খালটি পুনঃখনন করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করনের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে প্রতিটি গ্রামের খাল খনন কর্মসূচি দেখে আশার প্রদীপ দেখতে শুরু করে ওই এলাকার ভূক্তভোগী কৃষকরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও খনন কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এসও মোঃ আমিনুল ইসলাম সোহাগের যোগসাজসে সিডিউল অনুযায়ী খনন কাজ না করায় ওই এলাকার কৃষকদের সে আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে।
এ খালটি খননের জন্য ওই এলাকার অনেক কৃষক ও বাসিন্ধারা নিজেদের রেকর্ডীয় জমি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন। প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খালের মধ্যে সিডিউল অনুযায়ী কোন স্থানেই খনন কাজ করা হয়নি। যে স্থান থেকে ওই খননকৃত খালে পানি নিঃস্কাসন হওয়ার কথা সেই কালভার্টের নিকটতম স্থানেই প্রস্থ্য ৪০ থেকে ৪৫ ফুটের স্থলে মাত্র ২০ থেকে ২৫ ফুট খনন করা হয়েছে।
স্থানীয় ভূক্তভোগী কৃষকরা একাধিকবার এ খাল খননে অনিয়মের কথা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের দায়িতপ্রাপ্ত সুপারভাইজার বেল্লাল হোসেনকে বললেও কোন কাজ হয়নি। বেল্লালের সাফ কথা এখানে আমার কিছুই করার নেই। আমি শুধু কাজ দেখাশুনার দায়িত্বে আছি মাত্র। ঠিকাদার ও পাউবো এসও আমাকে যেভাবে খাল খনন করতে বলছে আমি সেভাবেই খাল খনন করছি। আপনারা আমাকে না বলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও এসওকে বলেন।
এ বিষয়ে ভূক্তভোগী কৃষক আতাহার উদ্দিন বলেন, আমাদের পরিবারের প্রায় ৬ একর রেকর্ডিও জমি এই খালে কাটা হয়েছে। এলাকার স্বার্থে ও পানি নিঃস্কাসনের জন্য আমরা কোন বাঁধা দেইনি। কিন্তু খালের মাথায় দিকে খাস জমি আছে প্রায় ৫০/৬০ ফুট। সেখানে কাটা হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ ফুট।
সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ সেলিম মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মাননীয় এমপি সাহেবের সহযোগীতায় আমাদের দুঃখ লাগব হয়েছে। কিন্তু খালটি খনন সঠিকভাবে না হলে এলাকার ২ হাজার কৃষক পরিবারের প্রায় ৫ হাজার একর জমির কৃষিকাজ ব্যাহত হবে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এসও মোঃ আমিনুল ইসলাম সোহাগ মুঠোফোনে বলেন, সিডিউল অনুযায়ী খাল খনন করা হচ্ছে। এখানে কোন অনিয়ম করা হয়নি। ঠিকাদারকে সাথে নিয়ে উৎকোচ গ্রহন করে খালের পারের একটি ঘর না ভেঙ্গে খাল খনন করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে খাল খননের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মেসার্স আজাদ এন্টারপ্রাইজের সত্ত¡াধিকারী আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে বলেন, সিডিউল অনুযায়ী ও তদারকির দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এসও যেভাবে খাল খনন করতে বলছেন আমরা সেভাবেই খাল খনন করতেছি।