বিশেষ প্রতিনিধিঃ নরায়ণগঞ্জ, বন্দর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে মুছাপুর ইউনিয়ন অন্যতম। এই ইউনিয়নের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচন নিয়ে বছর জুড়ে আলোচিত সমালেচিত হয়ে ওঠে জেলাজুড়ে । মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরেই জাতীয় পার্টি ও আওয়ামীলীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে। এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব যেন জাতীয় পার্টি – আওয়ামীলীগের মধ্যে প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে বলে জনসাধারণের অভিযোগ।
সম্প্রতি কবরস্থানের গাছকাটাকে কেন্দ্র করে মুছাপুর ইউনিয়নন আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতা চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের অনুসারী জাতীয় পার্টির নেতা সাখাওয়াত হোসেন সাখার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কবরস্থানে গাছকাটা নিয়ে মসজিদের ভেতরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। এসময়ের আওয়ামীলীগের মজিবুরের বাড়ি ঘর ও প্রাইভেটকার ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছেন উভয় পক্ষ। ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের পর মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিপক্ষে অবস্থান নেন মজিবুর রহমান ও তার নেতাকর্মীরা। মাকসুদ চেয়ারম্যানও মুছাপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে করোনা কালিন বিক্ষোভ মিছিল করে পাল্টা অবস্থান নেন।
এরপর থেকেই মাকসুদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা রাজাকার পূত্র আখ্যা দিয়ে নানা সমালোচনায় মেতে উঠেছে। এদিকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ও মাকসুদ চেয়ারম্যানের আতœীয়স্বজন আওয়ামীলীগের লোকজনকে নানা ভাবে নাজেহাল করে তুলছেন বলে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীর অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুর ১০১ তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে একটি ছবি তুলেন বন্দর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আউয়াল বেপারী। ওই ছবি ৩০ এপ্রিল রাত ৯ টার দিকে আউয়াল বেপারীর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি পোস্ট করেন। পরবর্তীতে এই ছবি দেখে মাকসুদ চেয়ারম্যানের ভাতিজা খালেদ হোসাইন মোহন কমেন্টস করেছেন। চামচাগিরি কইরা আর কয়দিন, নেতাগিরি করার শখ মিটাই দিমু আবার কুড়িপাড়া পাইলে।
মাকসুদ চেয়ারম্যানের ভাতিজা কর্তৃক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে হুমকি প্রদর্শনে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বন্দর উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দ। এ সংক্রান্তে রোববার (২মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে
নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক নিজামউদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া খোকন এক বিবৃতিতে জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও কোন অপশক্তির শক্তিতে রাজাকার পরিবারের সদস্যরা এখনো এই স্বাধীন বাংলাদেশে একজন স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের বন্দর উপজেলা শাখার দপ্ত সম্পাদক আব্দুল আউয়াল বেপারীকে এভাবে প্রকাশ্যে ফেসবুকে হুমকি দেয় তা খুবই বিব্রতকর ও অসাম্প্রদায়িক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। অবিলম্বে এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের সুস্থ তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত হুমকিদাতা মাকসুদ চেয়ারম্যানের ভাই ওমর হোসেনের ছেলে খালেদ হোসাইন মোহনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
ফেইজবুকে হুমকি দাতার বিরুদ্ধে আব্দুল আওয়াল বেপারী জান মাল ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বন্দর থানায় উপস্থিত হয়ে একটি জিডি করেছেন। যার নং (৪৫)তাং-২/৫/২০২১ ইং।
এদিকে মসজিদে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বন্দর থানাধীন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নাসিক ২৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা ইসলাম পলু’র ছেলে আল-আমিনকে মারধরের ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় রোববার (২রা মে) ভুক্তভোগীর ইসলাম পলু বাদি হয়ে মাকসুদ চেয়ারম্যানসহ ৪ জনকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। যার নং (১২৭)২১ইং। আদালতের এই মামলায় আসামি করা হয় মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন(৫০), বন্দর কুড়িপাড়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিন (২২),বন্দর চাপাতলি এলাকার মৃত সামাদ মিয়ার ছেলে ইকবাল(৪৫), কুড়িপাড়া এলাকার মৃত আলীম মিয়ার ছেলে তাওলাদ (৫০)।
অন্যদিকে মুছাপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী একে অপরের দিকে অভিযোগ করচ্ছে।