গাজীপুরে সরকারি নীতিমালার কোন প্রকার তোয়াক্কা না কারায় ৪৬ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত
25, May, 2021, 9:47:14:PM
রবিউল আলম গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে মাদ্রাসার সুপার সরকারি নীতিমালার কোন প্রকার তোয়াক্কা না কারায় ৪৬ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জয়দেবপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া মনিপুর মোস্তাফিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, মনিপুর মোস্তাফিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৪৬ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী এবার জেএডিসির (অষ্টম) সমাপনি পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার কারণে ২০২০ সালের জেএডিসি ফাইনাল পরীক্ষার আসনে বসা হয়নি তাঁদের।
সরকার ঘোষিত দিন তারিখ অনুয়াযী জেএডিসি দাখিল (অষ্টম) শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৪৬ জন শিক্ষার্থীর নিকট থেকে নির্ধারিত ফি গ্রহণ করেন প্রিন্সিপাল একেএম আব্দুর রহমান। তিনি সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই জেএডিসির সরকারি রেজিস্ট্রিশন ও পরীক্ষা নির্ধারীত ফি`র বাইরে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে আদায়কৃত রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বোর্ড কর্তৃকপক্ষ`কে অর্থাৎ সরকারি কোষাগারে দেননি তিনি।
এদিকে করোনাকালিন ২০২০ সালে সরকার কর্তৃক অটোপাশের ঘোষণা আসায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের পাশের সনদের জন্য গেলে প্রথমে দেই দিচ্ছি বলে কালক্ষেপন এবং বিভিন্ন তালবাহানা করলে এক পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশন ফি না দিয়ে আত্মসাৎ করার বিষয়টি ধরা পড়ে।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি রেজিস্ট্রিশন ফি-এর টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও সুপার ঢুঁকিয়েছেন নিজের পকেটে।
পরবর্তীতে নিজেকে রক্ষার জন্য মনিপুর মোস্তাফিয়া দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণী থেকে অটোপাশ হওয়ার কোন সনদ শিক্ষার্থীদের নামে না থাকলেও নবম শ্রেণীতে ভর্তি করে নতুন বই বিতরণ করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপার একেএম আব্দুর রহমান বলেন, এদের অটোপাশের সনদের বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। তিনি সব ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আশ্বস্থ করেছেন।
পাশের সনদ ছাড়া নবম শ্রেণিতে ভর্তি ফি গ্রহণ ও বই বিতরণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অভিভাবকরা মাদ্রাসা প্রধানের (সুপার) সাথে একাধিকবার দেখা করার পরও জেএডিসি পরীক্ষার অটোপাশের সনদ বা রেজিস্ট্রিশনের বিষয়ে আশ্বাস না পেয়ে সন্তানের শিক্ষা ভবিষ্যত নিয়ে দুঃশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।
অষ্টম শ্রেণি থেকে যারা ভালো গ্রেডিং পয়েন্ট পেয়ে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার কথা এবং ভালো ফলাফলের আশাবাদি ছিলেন, তাঁদের ভবিষ্যত পড়ালেখা এখন প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে মনিপুর মোস্তাফিয়া দাখিল মাদ্রাসার একজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। শিক্ষার্থীদের জীবন চরম অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছেন সুপার মহোদয়। তিনি আরও বলেন, সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের ফি জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হলে আজ এসব শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন এমন সমস্যায় পড়তে হতো না।
মনিপুর মোস্তাফিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ও ভাওয়ালগড় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মো. লিটন মিয়া`র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাদ্রাসার সুপার শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করেন নি কিংবা করতে পারেননি তা সুপার এবিষয়ে কিছুই জানন নি। তবে তিনি বিষয়টি জানার পর শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট না হওয়ার বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল আহমেদকে অনুরোধ করা হলে উপমন্ত্রী তাঁকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই মুহুর্তে পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। এসময় তিনি বলেন, এর সকল দায়ভার মাদ্রাসা সুপারকেই নিতে হবে।
মাদ্রাসা সুপার একেএম আব্দুর রহমানের নিজের মালিকানাধীন আরও দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। আইনগতভাবে বৈধ কি-না তা জানতে চাইলে মাদ্রাসার সভাপতি ও ভাওয়ালগড় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মো: লিটন মিয়া বলেন,আমি এ বিষয়ে আগে অবগত ছিলাম না। সাধারণ সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে গাজীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আফরোজা আক্তার রোবা বলেন, এরকম যদি কোনো ঘটনা মনিপুর মোস্তাফিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ঘটে থাকে তাহলে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।