করোনার বিষবাষ্পে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে যে স্থবিরতা নেমে এসেছিল সময়ের পরিক্রমায় তা সচল হয়েছে। কেটে গেছে কালো মেঘের অমানিশা। মাঠে ফিরেছে প্রাণ-চাঞ্চল্য। শুরু হয়েছে স্থগিত হওয়া সব সিরিজ। স্বাস্থ্যবিধি আর কোভিডের কঠোর নিয়মনীতি মেনেই চলছে মাঠের খেলা। পিছিয়ে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও হাতছানি দিচ্ছে। চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে গড়াবে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরমেটের এ আয়োজন।করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে মাঠে গড়ায়নি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০২০ সালের আয়োজনের কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়ে যায়। অনেক জল ঘোলার পর আইসিসি জানিয়েছিল, ২০২০ সালের টুর্নামেন্টটা হবে ২০২১ এর অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতের মাটিতে। তবে ভারতের করোনা পরিস্থিতি আবারও দুশ্চিন্তায় ফেলে আয়োজকদের। সিদ্ধান্ত বদলে যায়। বদলানো হয় ভেন্যু।
ভারত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম, শারজাহ স্টেডিয়াম ও ওমান ক্রিকেট একাডেমি-এ চারটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপের খেলা।
আয়োজনের তারিখ, ভেন্যু সবই ঠিক। এখন অপেক্ষা মাঠের লড়াই শুরুর। বিশ্বকাপের মঞ্চে কেমন করবে বাংলাদেশ দল? এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। সাবেক টাইগার ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুলের কাছে এমন প্রশ্নই ছিল সময় সংবাদের পক্ষ থেকে। সময় সংবাদের নিয়মিত অনুষ্ঠান `খেলার ক্ষণে`কে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন তিনি।
মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলের সামনে প্রায় ১৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ আছে। জিম্বাবুয়ের পর এবার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টির সিরিজ শুরু হচ্ছে। এরপর নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ আছে। এ টুর্নামেন্টগুলো শেষ হলে বোঝা যাবে আমরা কতদূর যেতে পারি। স্বাভাবিকভাবে বলতে হয়, আমরা টি-টোয়েন্টিতে ফরমেটে বেশি শক্তিশালী নই। তবুও এই দলের ওপর আস্থা আছে। তরুণ ক্রিকেটারদের প্রমাণ করার ক্ষমতা আছে।
টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া শামীম পাটোয়ারী নজর কেড়েছেন জিম্বাবুয়ে সিরিজে। শামীম পাটোয়ারীকে নিয়ে আশাবাদী আশরাফুলও।
তিনি বলেন, শামীম পাটোয়ারী ভালো ফিল্ডার এবং ব্যাটসম্যান। আশা করি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সে দলে থাকবে। অজি পেসারদের বিপক্ষে ভালো করার সুযোগ আছে তার।
টি-টোয়েন্টি ফরমেটে উন্নতি করার বিষয়ে আশরাফুল জানান, ২০০৬ সালে আমরা এ ফরমেটে খেলা শুরু করেছিলাম। ২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিলাম। তখন ভেবেছিলাম এ ফরমেটে দ্রুত উন্নতি করবে বাংলাদেশ। কিন্তু এ খেলায় যারা অভিজ্ঞ তারা বেশি সফল। পাশাপাশি পাওয়ার হিটিং এবং মাঠের হিসাব-নিকাশ আছে। আমাদের দলে পাওয়ার হিটিং ব্যাটসম্যান নেই তেমন। এছাড়া এ ফরমেটে খেলাও কম হয় আমাদের। এর সমাধান হতে পারে ঘরোয়া লিগে বেশি বেশি খেলা আয়োজন করার মধ্যদিয়ে।
টিম বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা সাকিব আল হাসান। তার ব্যাটে ভর করে অনেক জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতেও বড় ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত ফরমেটে সাকিব আল হাসানের পারফরমেন্স নিয়ে আশরাফুল জানান, আমার মনে হয় সাকিবের তিন নম্বর পজিশনে খেলা উচিত। আমাদের দলে পাওয়ার হিটার নেই। সাকিব সার্কেল ব্যবহার করে শট খেলতে পারে ভালো। পাওয়ার প্লে ব্যবহারের জন্য তাকে ওই পজিশনে দরকার।
এছাড়া টি-টোয়েন্টি ফরমেটে সৌম্য সরকারকে বেশি মনযোগ দেওয়ার ব্যাপারে জোর দেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার আশরাফুল।
বাংলাদেশ দলের অলরাউন্ডারদের সম্পর্কে আশরাফুল জানান, `অনেক অলরাউন্ডার আছে দলে। অলরাউন্ডারদের কামব্যাক করার সুযোগ করে দিতে হবে। এখানে বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন।
বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে ‘খেলার ক্ষণে` অনুষ্ঠানকে সিনিয়র সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদ বলেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে শিরোপা প্রত্যাশী তিনটি দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলবে। যা বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাবে। প্রস্তুতি সর্বোচ্চটাই হওয়া উচিত। আমাদের সমস্যা হলো আমরা বর্তমানে বাঁচি। কিন্তু বোর্ড, ম্যানেজমেন্টের উচিত দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করা যাতে প্রস্তুতি ভালো হয় এবং প্রাথমিক পর্বটা সহজে উতরে যায়।
উল্লেখ্য বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডে খেলবে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আয়ারল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, নামিবিয়া, নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড ও ওমান। এখান থেকে চারটি দল যাবে পরের পর্বে। সেখানে সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান।