টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ-
মির্জাপুরে বনের ভেতরে অবৈধ কয়লার চুল্লি স্থাপন করে বনের কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির অভিযোগ উঠেছে। এতে বনজ সম্পদ ধ্বংস, পরিবেশ বিপর্যয়সহ চুল্লির আশপাশে গাছপালা ও ফসলি জমি নষ্ট এবং লোকজনের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাঁশতৈল তেলিপাড়া মৌজার মাঝামাঝি অংশে এই চুল্লি স্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে বাঁশতৈল তেলিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ওই স্থানে একসঙ্গে ১৬টি চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। ২৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিক চুল্লিতে কাঠ পোড়ানোর কাজ করছেন। কেউ তাজা গাছের অংশ চুল্লিতে ঢোকাচ্ছেন আবার কেউ তৈরিকৃত কয়লা বস্তা বোঝাই করছেন।
বাঁশতৈল গ্রামের বিল্লাল হোসেন, গায়রাবেতিল গ্রামের মজিবুর রহমান ও কাহারতা গ্রামের হাবিবুর রহমান যৌথভাবে এই চুল্লি পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাঁশতৈল বিট কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর সরকারি বনভূমি রয়েছে। বিশাল এই বনভূমিতে গজারি, গর্জন, সেগুন, আকাশমণিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ রয়েছে। তবে এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর বনের জমি বেদখল রয়েছে।
এসব জায়গায় আম-কাঁঠালসহ আরও অনেক প্রকার ফলদ গাছ রয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক বনায়নের আওতায় প্রচুর বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়েছে। অবৈধ চুল্লি ব্যবসায়ীরা বনাঞ্চলের এসব গাছ রাতের আঁধারে কেটে চুল্লিতে পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে থাকেন। ফলে শত চেষ্টা করেও বনের গাছ চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বন বিভাগ ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বনের ভেতরে এই চুল্লি স্থাপন করা হয়েছে। কারখানার শ্রমিক লতিফ খান, জামাল মিয়া, রোকন মিয়া ও রিপন মিয়া জানান, তাঁরা চুক্তি ভিত্তিতে চুল্লিতে গাছের অংশ বোঝাই করে থাকেন। এ ছাড়া আগুন জ্বালিয়ে তা পুড়িয়ে কয়লা তৈরি ও কয়লা বস্তাবন্দী করার আলাদা লোকজন রয়েছে।
বাঁশতৈল গ্রামের বাসিন্দা অবৈধ চুল্লির ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ফুলখাতুন বেগম, নকিম উদ্দিন ও রহিম মিয়াসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, চুল্লির ধোঁয়ায় আমাদের আম, কাঁঠাল, কলা, বেগুনসহ কোনো ফল ও সবজিই এখন আর হয় না। বাড়িঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অনেকের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন অসুখ দেখা দিয়েছে।
তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, গায়রাবেতিল, নয়াপাড়া, বংশীনগর, আজগানা, কুড়িপাড়া, পাথরঘাটা, তরফপুর, খাটিয়ারহাটসহ বেশ কিছু এলাকায় এসব হয়ে থাকে। প্রশাসনের লোকজনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু চুল্লিগুলো ভাঙা হচ্ছে না। তাঁরা অবৈধ চুল্লি অপসারণের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে চুল্লির তিনজন মালিকের মধ্যে একজন হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এই ব্যবসায় এখন আর তেমন লাভ হয় না। পরিবেশের ক্ষতি হলে প্রয়োজনে বন্ধ চুল্লি বন্ধ করে দেব।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, ‘ছয় মাস আগেও অভিযান চালিয়ে ওই চুল্লিগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছিল। করোনাকালের সুযোগে আবার চুল্লি তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
|