সৈয়দ নুহু উল আলম নবীন, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি। মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক দখল করে পুরোদমে আউশ ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে। কৃষকরা ক্ষেত থেকে ধান কেটে সড়কে রেখে মাড়াই কাজ সেরে নিচ্ছে। এতে মানুষ ও যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ধানের অবশিষ্ঠাংশ (খর) রাস্তায় পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করেছেন সড়কে চলাচলরত গাড়ী চালকরা। দ্রæত দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক থেকে ধান মাড়াইয়ের কাজ বন্ধের দাবী জানিয়েছেন চালকরা।
জানা গেছে, পটুয়াখালী – আমতলী - কলাপাড়া মহাসড়কের শাখারিয়া থেকে বাদ্রা পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার এবং আমতলী-তালতলী সড়কের মানিকঝুড়ি থেকে কচুপাত্রা ১২ কিলোমিটার ও সাহেব বাড়ী স্ট্যান্ড থেকে গাজীপুর বন্দর ১২ কিলোমিটারসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আভ্যন্তরীন পাঁকা সড়কে কৃষকরা ধান মাড়াই করছে। এ সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন সহ¯্রাধিক পরিবহন বাস, ট্রাক, পিক আপ, টেম্পু, অটো রিক্সা, মাহেন্দ্র ও মোটর সাইকেল চলাচল করে। এ সড়কগুলোর দু’পাশে শতাধিক স্থানে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষেত থেকে আউশ ধান কেটে সড়কে রেখেই মাড়াই কাজ করছে। মাড়াই শেষে ধানের অবশিষ্ঠাংশ খরকুটা সড়কে বিছিয়ে রেখে দিচ্ছেন। এগুলো পঁচে সড়ক পিচ্ছিল আকার ধারন করছে। এর ওপর দিয়ে গাড়ী চলাচল করছে, এতে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছে গাড়ী চালকরা। দ্রæত সড়ক থেকে ধান মাড়াই কাজ বন্ধের দাবী জানিয়েছেন গাড়ী চালকরা।
বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পটুয়াখালী আমতলী - কলাপাড়া মহাসড়কের শাখারিয়া, ব্রীক ফিল্ড, কেওয়াবুনিয়া, মহিষকাটা, চুনাখালী, সাহেববাড়ী, আমড়াগাছিয়া, ঘটখালী, ছুরিকাটা, মানিকঝুড়ি, খুড়িয়ার খেয়াঘাট, আকনবাড়ী, ফকিরবাড়ী, খলিয়ান, কল্যাণপুর ,বান্দ্রা এবং মানিকঝুড়ি - তালতলী সড়কের দক্ষিণ পশ্চিম আমতলী, আলিশার মোড়, আড়পাঙ্গাশিয়া, মধ্য তারিকাটা, গাজীপুর বন্দর, মৃধা বাড়ী স্ট্যান্ড, কুকুয়া, আজিমপুর ও তারিকাটা নামক স্থানের সড়কের দু’পাশের তিন ভাগের একভাগ সড়ক দখল করে কৃষকরা ধান আটি বেঁধে রেখে দিয়েছেন। আবার অনেক স্থানে মাড়াই মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করছে। ধান মাড়াই শেষে ধানের অবশিষ্ঠাংশ খরকুটা সড়কে ফেলে রেখে দিয়েছেন। ওই ফেলে রাখা খরকুটা ভিজে নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট ঘর কুটার উপর দিয়ে গাড়ী চলাচল করছে।
বাস চালক আবদুস সালাম ও মজিবর বলেন, সড়কের বিভিন্ন স্থানে ধান মাড়াই করছে। ওই ধানের খরকুটা কৃষকরা সড়কে ফেলে রেখেছে। ওই কুটা পচে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। এতে গাড়ী চালাতে সমস্যা হয়।
অটোচালক ইসমাইল বলেন, সড়কে ধান মাড়াই করে খরকুটা সড়কে ফেলে রাখায় গাড়ী চালাতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কৃষকরা খরকুটা এমন ভাবে রেখে যান বোঝাই মুসকিল রাস্তা ভালো না মন্দ। ফলে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। দ্রæত সড়ক থেকে ধান মাড়াই বন্ধের দাবী জানাই।
মানিকঝুড়ি গ্রামের কৃষক রিপন মিয়া বলেন, বাড়ীতে ধান মাড়াইয়ের মাঠ না থাকায় সড়কে ধান মাড়াই করছি। এতে সড়কের ক্ষতি হয় আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, ধান মাড়াই শেষে দ্রæত সড়ক থেকে খর কুটা পরিস্কার করে দেব। ছুড়িকাটা গ্রামের কৃষক শাহজাহান বলেন, বৃষ্টির কারনে এখন সবখানে কাঁদা পানি। তাই বাধ্য হয়ে সড়কে ধান রেখে মাড়াই করছি।
ফকির বাড়ী স্ট্যান্ডের গৃহবধূ আয়শা বেগম বলেন “ মোরা ধানের কুডা রাস্তায় না হুগাইলে কি দিয়া রান্না হরমু”।
বরগুনা বাস মালিক সমিতির লাইন সম্পাদক অহিদুজ্জামান সজল মৃধা বলেন, সড়ক দখল করে ধান মাড়াই করলে যেমন সড়কের ক্ষতি হয় তেমনি গাড়ী দূর্ঘটনার আশংঙ্কা থাকে। তিনি আরো বলেন, অনতিবিলম্বে সড়কে ধান রাখা ও মাড়াই বন্ধের জন্য প্রশাসনের সৃদুষ্টি কামনা করছি।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম, সড়কে ধান মাড়াই করা অন্যায় হলেও মাড়াইয়ের স্থান না থাকায় কৃষকরা সড়কে ধান মাড়াই করছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ কায়সার হোসেন বলেন, মানুষ ও যানবাহন চলাচলে সড়কে বাঁধা সৃষ্টি করা যাবে না। সড়ক ও জনপথ বিভাগ অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
|