ভায়রা লিয়াকত আলীর সঙ্গে হযরত আলীর স্ত্রী সাবিনা খাতুনের অনন্ত ১০ বছর ধরে অনৈতিক সম্পর্ক চলছিল। শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের পরকীয়ার বিষয়টি জেনে যাওয়াই কাল হয় হযরতের। পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে হত্যার পর হযরতের লাশ গুম করে স্ত্রী ও তার দুলাভাই লিয়াকত।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে স্ত্রী সাবিনা ও তার দুলাভাই লিয়াকতকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। গ্রেপ্তারকৃতরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা ইউনিয়নের কুতিকুড়া গ্রামের আতলা বিল থেকে গত ৩০ আগস্ট অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে হযরতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, তিনি পার্শ্ববর্তী শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের পূর্ব বাঁশকান্দা গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করলেও কোনো ক্লু পাচ্ছিল না। তার মোবাইল ফোনটিও পাওয়া যাচ্ছিল না। নিহতের ভাই আবু নাসের এ বিষয়ে গত ৩১ আগস্ট হালুয়াঘাট থানায় মামলা দায়ের করলে তদন্তভার পায় ডিবি।
ডিবি পুলিশ জানায়, মামলার দায়িত্ব পেয়ে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে তারা। পরে নিহতের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে উদঘাটন হয় হত্যার রহস্য। হযরতের স্ত্রী সাবিনা খাতুন ও তার দুলাভাই লিয়াকত আলীকে বৃহস্পতিবার ডিবি পুলিশ হেফাজতে নেয়। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে তারা। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন মোদকের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তারা।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, লিয়াকত আলী ঢাকার উত্তরা এলাকায় কখনও রাজমিস্ত্রি শ্রমিক কখনও রিকশা চালাতো। প্রায় ১০ বছর আগে সাবিনা তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আশ্রয় নেয় দুলাভাইয়ের কাছে। বোন-দুলাভাইয়ের বাসায় থেকে বিভিন্ন বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো সাবিনা। এক পর্যায়ে সাবিনা ও লিয়াকতের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে বোনের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হলে দুই বছর আগে সাবিনা বাড়ি চলে যায়। গত ৯ মাস আগে সাবিনা ফের হযরতকে বিয়ে করে। কিন্তু দুলাভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কও রাখে সাবিনা। বিষয়টি এক মাস আগে জানতে পারেন হযরত। এ নিয়ে স্ত্রীকে শাসন শুরু করায় হত্যার পরিকল্পনা করে স্ত্রী ও তার দুলাভাই লিয়াকত।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২৯ আগস্ট সাবিনা মিথ্যা কথা বলে হযরতকে লিয়াকতের কাছে গোরকপুর বাজারে পাঠায়। পরে বেড়াতে যাওয়ার অজুহাতে নির্জন স্থানে নিয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হযরতকে হত্যার পর শরীরে কাদা মাখিয়ে পরিধেয় কাপড় মাটিচাপা দেয়। শ্যালিকা সাবিনাকে সতর্ক করে আত্মগোপনে চলে যায় লিয়াকত। যাবার সময় হযরতের মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায় সে। মোবাইল ফোনের সূত্রেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি পুলিশের ওসি সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, অনৈতিক সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে হযরতকে হত্যা করা হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই রহস্য উন্মোচন ও আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই আসামিই আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।