পানি সংকটে আমন আবাদে দেরি, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা কৃষকের
আবু ইউসুফ ভালুকা,ময়মনসিংহ থেকে
চলতি মৌসুমের শুরুতে চাহিদামতো বৃষ্টি না হওয়ায় ময়মনসিংহে আমনের আবাদ শুরু হয়েছে দেরিতে। এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। পাশাপাশি জ্বালানি তেল ও সারের দাম বেড়েছে। দুঃসময়ে দেশের শেষ ভরসা ছিলো কৃষি। করোনার ছোবলে দেশ যখন থমকে ছিলো, তখনও কৃষির চাকা ছিল সচল। নির্ভরতার সেই কৃষি এখন বড় সংকটে। কেননা দেশের প্রায় ৯০ ভাগ জমি চাষ হয় ডিজেল নির্ভর সেচ ব্যবস্থায়। লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ায় তাই সেচ নিয়ে চিন্তায় কৃষকরা। গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির ধাক্কায় দুর্ভোগে পড়েন কৃষকরা। এরপর গত সপ্তাহে বাড়ানো হয় সারের দাম।
এবার ডিজেল-কেরোসিনের নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। কৃষকের টিকে থাকাই এখন কঠিন হয়ে পড়বে বলে সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন। কৃষকেরা বলছেন, সব মিলিয়ে আমন আবাদে খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, লোকসান পোষাতে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবারে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ হাজার ৮৯৫ হেক্টর। কিন্তু এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৮০ হাজার ৫ হেক্টর। একে তো অনাবৃষ্টিতে পানির জন্য কৃষকের হাহাকার এর ওপর ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে বাড়ছে সেচ খরচ। তাই চলতি মৌসুমের ধান আবাদ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ কৃষকের কপালে।
কৃষকেরা জানান, আমন মৌসুমে তাঁদের মূল ভরসা বৃষ্টি। কিন্তু ভরা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় ধান লাগাতে বেশ কয়েক দিন দেরি হয়েছে। যার ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ধান উঠবে। এর প্রভাব পড়বে ধানের বাজারে।
ভালুকা উপজেলার এলাকার কৃষক আবদুল মান্নান। গত বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায় তিনি জমিতে ধান লাগাচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার সময় মতো বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টির আসায় থাকতে গিয়ে প্রায় এক মাস ধান আবাদে পিছিয়ে পড়েছি। মাঝে কয়েক দিন বৃষ্টি হয়েছে, সেই কারণ এখন ধান লাগাতে শুরু করেছি। কিন্তু কয়েক দিন পরেই আবার সেচ দেওয়া লাগবে। এর মধ্যে যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে বিকল্প পথে পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আবার শোনা যাচ্ছে, জিকের পাম্প একটা নষ্ট হয়ে গেছে, তাই চিন্তায় আছি।’
জিন্নাহ আলী নামের ভালুকা এলাকার আরেক কৃষক বলেন, ‘যেসময় ধানের গোছা মোটা হয়ে যাওয়ার কথা, এবার সেই সময় চারা রোপণ করা হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবেই এমনটা হয়েছে। ধানের ভরা মৌসুমেও চাহিদা মতো বৃষ্টির দেখা না মেলায় সেচের জন্য শ্যালোমেশিন ওপর নির্ভর হতে হচ্ছে। কিন্তু ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেখানেও কৃষককে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। সঙ্গে বেড়েছে সারের দামসহ কীটনাশক এবং শ্রমিকের দাম। ফলে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। ধানের যা দাম তাতে কৃষকেরা আর পুষিয়ে উঠতে পারছে না। এতে আমন আবাদ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, সারের পর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এই দুইয়ের প্রভাবে ফসলের উৎপাদন খরচ যে হারে বাড়বে সে তুলনায় দাম পাবেন কিনা তা নিয়েই শঙ্কায় তার।
বিশেষ করে আমন চাষীরা বলছেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় এবার উৎপাদন খরচ বাড়বে মণ প্রতি কমপক্ষে দুইশ’ টাকা। ফলে ধানের দাম বাড়বে অবধারিতভাবে।