দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোন পথে? রওশনের নাম ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে : জি এম কাদের আমাদের কোনো বিরোধ নেই সবাই এক রয়েছি দল ভালোভাবে চলছ
জাতীয় পার্টি এখন কোন পথে? আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি কোন দিকে হেলে পড়বে দলটি? ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো এবারও ক্ষমতার ‘উচ্ছিষ্ট ভোগ’ রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করবে; নাকি গণমানুষের ভোটের অধিকারের পক্ষ্যে থাকার নাটক করবে? এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-তর্ক-বিতর্ক চলছে। নেটিজেনরা নানান মন্তব্য ছুঁড়ে দিচ্ছেন। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রায় বছরখানেক ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮১ বছর বয়সি রওশন এরশাদ দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে না জানিয়ে ২৬ নভেম্বর কাউন্সিলের আহ্বান করেছেন। এ কাউন্সিল ডাকার পরের দিন দলটির সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার আবেদন করেছেন। জাতীয় সংসদে বর্তমানে রওশন এরশাদবিরোধী দলীয় নেতা ও জিএম কাদের উপনেতা। এ নিয়ে দলটির ভেতরে তোলপাড় চলছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও এ নিয়ে উৎসুক রহস্য।
জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী জাতীয় পার্টি জন্মের পর থেকে খুবই কম সময় গণমানুষের পক্ষ্যে থেকেছে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম এইচ এম এরশাদের ‘আনপ্রেডিকটেবল’ চরিত্রের কারণে দলটির প্রতি মানুষের বিশ্বাসের এই ঘাটতি। প্রবাদের ‘রাজা মিয়ার মাথায় বল কোন পক্ষের গোলপোষ্টে যাবে’ বলা মুশকিল, দলটির এই অবস্থা। ’৯০-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে জাতীয় নির্বাচন এলেই আলোচনায় চলে আসে জাতীয় পার্টি কোন শক্তির সঙ্গে থাকবে? এক সময় তৃণমূল পর্যায়ে কর্মী-সমর্থক থাকলেও ‘সুবিধাবাদী’ কৌশল এবং ‘ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট ভোগ’ দলটির গণভিক্তি কার্যত দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে এখন দলটির প্রার্থী করার মতো নেতাকর্মী খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে জাতীয় নির্বাচনে ‘ফ্রন্ট ও জোট’ সংস্কৃতির সুবিধায় দলটি জাতীয় সংসদে বিরোধীদল হিসেবে রয়েছে। কিন্তু দলটির নেতারাও মাঝেমধ্যে স্বীকার করেন ‘জাতীয় পার্টির স্বাতন্ত্র পরিচিতি ক্রাইসিসে’ রয়েছে। দেশ-বিদেশের কেউ দলটিকে বিরোধী দল মনে করেন না; কেউ ডাকে সরকারের ‘নাচের পুতুল’ কেউ বলেন, ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলো চায় সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতারাও তাদের দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে যে, আসন্ন নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো বিজয়ী হওয়া সহজ হবে না। দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবারও জাতীয় পার্টিকে নিজেদের পাশে চেয়েছে। কিন্তু দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সম্প্রতি সময়ের বক্তব্য ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলেছে। জিএম কাদের ‘ভারতপন্থি নেতা’ হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি গণমানুষের পক্ষ্যে অবস্থান নিয়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছেন। যা সরকারের বিপক্ষে যাচ্ছে এবং আগামীতে তাকে (জিএম কাদের) নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে আশঙ্কায় দলের নেতৃত্বে রওশনকে বসিয়ে আওয়ামী লীগের ‘নাচের পুতুল’ করে রাখার চেষ্টা চলছে। ফলে জাতীয় পার্টিতে ফের ভাঙনের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া রওশন এরশাদ ঘোষিত কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত কমিটিতে নাম রয়েছে পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা, মুজিবুল হক চুন্নু, সালমা ইসলাম। অথচ এরা সবাই জিএম কাদেরের সঙ্গে মিটিং করছেন এবং সংসদীয় দলের বৈঠক করে স্পিকারের কাছে জিএম কাদেরকে সংসদ নেতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে কে জিএম কাদেরের পক্ষে আর কে রওশন এরশাদের পক্ষে বোঝা মুশকিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির এক নেতা বলেছেন, দলটির সিনিয়র নেতা সবাই সুবিধাবাদী। এরা সরকারের উচ্ছিষ্ট খেতে যেমন চায়; তবে সরকার পড়ে গেলে জিএম কাদেরের সঙ্গে থাকবে।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, জাতীয় পার্টি খুবই ভালোভাবে চলছে। আমাদের দলে কোনো বিরোধ নেই। সবাই এক আছে এবং একসঙ্গে থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে চিন্তা করার কিছুই নেই।