নিজাম উদ্দিন আহমেদ---
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই সব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া দলটির অর্জন পাহাড়সম। টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এখন আওয়ামী লীগ।
দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা টানা প্রায় ১৪ বছর ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার যোগ্য নেতৃত্ব দেশকে নানা দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্যে দিয়েও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিচ্ছে। অর্জনের এই ধারাবাহিকতায় এবারের যুক্ত হয়েছে নতুন মাইলফলক পদ্মা সেতু। আগামী ডিসেম্বরে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল বা বঙ্গবন্ধু সুড়ঙ্গ বা কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ হল কর্ণফুলী নদীর নিচে অবস্থিত নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গ সড়ক। এই সুড়ঙ্গটি কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এই সুড়ঙ্গ মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। বঙ্গবন্ধু টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার। এই সুড়ঙ্গটি নির্মাণ হলে এটিই হবে বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ। চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এই সুড়ঙ্গ নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে। কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ অবস্থান করবে ১৫০ ফুট গভীরে।
নির্মিত হয়েছে মেট্রোরেল।
তবে অমসৃণ দীর্ঘ এই চলার পথে আওয়ামী লীগের সামনে এসেছে নানা বাধা-বিপত্তি, দুর্যোগ-দুর্বিপাক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা থেকে শুরু করে, সামরিক জান্তাদের রোষানল, নিষেধাজ্ঞা, হামলা-মামলাসহ কণ্টকাকীর্ণ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে দলটিকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন সামনের দিনগুলোতেও নানা চ্যালেঞ্জ ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে আওয়ামী লীগকে। তাদের মতে, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ক্ষমতাসীন দলটির অন্যতম চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত দেশ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়েও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ছাড়া করোনার ধাক্কা না কাটতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র
এগুলো মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে আওয়ামী লীগকেই। পাশাপাশি দলকে তৃণমূল পর্যন্ত আরও সুসংগঠিত করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে তাদের। সবার আস্থা অর্জন করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনেরদায়ও আওয়ামী লীগেরই বেশি। তবে নেতারা বলছেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তারা এগিয়ে যাবেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল বাঙালির তথা বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণ। আমরা চাই সেই লক্ষ্যে দলটি এগিয়ে যাক। কিন্তু ইতিহাস থেকে দেখা গেছে এই দলের বাইরে তো তাদের শত্রু আছেই, এমনকি ভেতরেও অনেক শত্রু ঘাপটি মেরে আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তার প্রমাণ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজ করেছে খন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর; তারাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। ২০০৪ সালের ২১ অাগষ্ট জাতীর জনকের কন্যা শেখ হাসিনা সহ পুরো দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যা করে এই দলকে নেতা শূন্য করতে যে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিলো সেটাও ইতিহাসের একটা অংশ হিসেবে স্বরণীয় হয়ে আছে।
রাষ্ট্রীয় পেস্টোপোষকতার পিছনে যারা কাজ করেছে সেটাও এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, আজ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যারা আছেন, তাদেরকেও সেই ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। চলার পথে এই অগ্রযাত্রায় কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র যেন আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। কাজেই দেশ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর চেতনা কোনোভাবেই যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে আওয়ামীকলীগের সব নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ (খোকা) বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দল। তাই তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে। আমাদের স্বাধীনতার যে ঘোষণা আছে, আমাদের সংবিধানের যে অঙ্গীকার আছে, যেমন মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সাম্য, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা, এগুলো আমাদের দেশের ‘ফাউন্ডিং প্রিন্সিপাল’। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতি হিসেবে আমরা এগুলো থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছি। আমাদের প্রত্যাশা, স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল হিসাবে আওয়ামী লীগ এগুলো প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নেবে। আমি এটাও মনে করি এগুলো প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের একার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
আবুল কালাম ভুইয়া বলেন আওয়ামী লীগ দেশের সর্ববৃহত্তম রাজনৈতিক দল। আর রাজনৈতিক দলকে সব সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই চলতে হয়। দলটি জেষ্ট নেতারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। নেতাকর্মীরা একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ পঁচাত্তর-পরবর্তী পর্যায় থেকে আজকের অবস্থানে তার নিজস্ব মহিমার প্রমাণ রেখেই টিকে আছে। আগামী দিনেও এই ধারাবাহিকতা থাকবে।
রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠিন সম্পাদক আলী আকবর বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, শান্তি ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়বে। করোনা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ যে চ্যালেঞ্জই আসুক আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক, রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে জনগণের পাশে ছিলেন এবং থাকবে। আগামী দিনেও সব সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মোকাবিলায় নেতাকর্মীরা প্রস্তুত।
বিশ্লেষকদের মতে, এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাংগঠনিকভাবেও আওয়ামী লীগের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে অতীতের তুলনায় তৃণমূল আওয়ামী লীগ বেশ নাজুক অবস্থায় আছে। এমপি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্ব অব্যাহত। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ঠাঁই দেওয়া হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের।
এভাবে বিশেষ ব্যক্তির বলয় তৈরি করাসহ নানাবিধ কারণে তৃণমূল প্রধান দলটির অবস্থা অতীতের চেয়ে কিছুটা দুর্বল বলে তারা মনে করেন। এ ছাড়া ক্ষমতায় থাকার পরও দলের প্রভাবশালীদের দ্বারা অনেক নেতা হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছেন। আবার অনেকে অভিমান দলের কার্যক্রম থেকে স্থবির থাকছেন। সামনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ প্রস্তুতিও শুরু করেছে। তাই এই সংকট দূর করে তৃণমূলকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
|