আসন্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে পাকিস্তান এবং স্বাগতিক কিউইদের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যে সিরিজের নাম ‘বাংলাওয়াশ’ ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
সেই ‘বাংলাওয়াশ’ সিরিজে উল্টো নিজেরাই ওয়াশ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হারের পর আজ (৯ অক্টোবর) নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল সাকিব আল হাসানের দল। যেখানে বলা চলে লড়াই ছাড়াই হার মেনে নিতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ।
ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে এদিন টসে হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। আর নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে মাত্র ১৩৭ রান। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো টি-টোয়েন্টিতে এই রান তোলা অমার্জনীয় অপরাধতুল্য।
কিন্তু বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি খেলার সামর্থ্য বিবেচনায় কিংবা খেলার ধরণ দেখে এই রানটাই অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে ম্যাচে ৫০ ডট দেওয়ার পর বাকি ৭০ বল বিবেচনায় ১৩৭ রান তো স্পেশাল কিছুই। তাও শেষদিকে নুরুল হাসান সোহান ১২ বলে অপরাজিত ২৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বলে রক্ষা।
হ্যাগলি ওভালের আউটফিল্ড আজ কিছুটা স্লো-ই ছিল। উইকেট থেকেও শুরুতে পেসাররা দারুণ সুইং পাচ্ছিলেন। নিউজিল্যান্ড স্পিনারদের বল দেখে তো এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল খেলা বোধহয় মিরপুরের উইকেটে হচ্ছে। বল ধীর হয়ে আসছিল।
কিন্তু এরকম পিচে খেলে অভ্যস্ত বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা যেন রান করতে খাবি খাচ্ছিলেন রীতিমতো। হ্যাগলি ওভালের মতো মোটামুটি ছোট মাঠেও বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ছক্কা মারতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯তম ওভার পর্যন্ত। তাও সোহানের ব্যাটের সৌজন্য।
কেবল ছক্কার দুর্গতি নয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট দিয়েও তাদের কষ্টের বর্ণনা করা যায়। ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করা নাজমুল শান্ত খেলেছেন ২৯ বল। এরমধ্যে চার মেরেছেন ৪টি। যার মধ্যে পুল শটে একটি চার ব্যতীত পুরো খেলায় এই ক্রিকেটারের ব্যাটিং দেখে আত্মবিশ্বাসের অভাব মনে হচ্ছিল।
মেহেদী হাসান মিরাজ তো প্রথম ওভারে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পরও করতে পেরেছেন মাত্র ৫ রান। লিটনও ছিলেন না সেরা ছন্দে। একবার রান আউট এবং ক্যাচের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এই ব্যাটসম্যান ১৫ রান করতে খেলেছেন ১৬ বল। ব্রেসওয়েলকে কাউ কর্ণারে মারতে গিয়ে বরাবর ক্যাচে দিয়ে ফিরেছেন।
চারে নামা আফিফ তো শুধু চেষ্টাই চালিয়ে গিয়েছেন। ক্যাচও তুলেছেন বেশ কয়েকবার। যার মধ্যে বেঁচে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। তবুও শেষ পর্যন্ত ২৪ রান করতে খরচ ২৬ বল। লিটনের মতো স্ট্রাইক রেট ১০০ এর নিচে ছিল আফিফেরও।
একই দশা মোসাদ্দেক এবং ইয়াসির আলীরও। মোসাদ্দেক ২ এবং ইয়াসির করেছেন মোটে ৭ রান। তাদের আউটের ধরণ দেখাটাও দৃষ্টিকটু ছিল। সাকিব দলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন বটে। তবে তাকেও দেখে বোঝা যাচ্ছিল ক্লান্তি এখনো ছাড়েনি তাকে। এদিকে ম্যাচ শেষে ডানহাতি-বামহাতি কম্বিনেশনের বিষয়ে বলছিলেন। আধুনিক ক্রিকেটে এই চিন্তাটাই তো বেমানান হয়ে উঠছে দিন দিন।
বাংলাদেশের এমন সেকেলে চিন্তার দিনেই ইংলিশদের দুই ডানহাতি ওপেনার ১১ ওভারে তুলেছিলেন ১৩২ রান। কবে নাগাদ এমন ধ্যান-ধারণা থেকে বেরোবেন সাকিবসহ অন্যরা?
এদিন বোলাররাও দারুণ কিছু দেখাতে পারেননি। তাসকিন তো ৪ ওভারে দিয়েছেন সাড়ে ৮ ইকোনমিতে ৩৪ রান। শরিফুল ১ উইকেট পেয়েছেন বটে তবে তার জন্য ১০ এর বেশি ইকোনমিতে ৩৯ রান দিয়েছেন। হাসান মাহমুদের বোলিং কিছুটা আশা দেখাতেই পারে। তবে টাইগার পেসারদের প্রতি বিশ্বাস রাখাটাই নিজের জন্য বড় অবিশ্বাস্য বিষয় হয়ে উঠছে।
টাইগার ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির জন্য নতুন পোস্ট বানিয়ে টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে উড়িয়ে আনা হয়েছে শ্রীধরন শ্রীরামকে। শুরু থেকেই ইমপ্যাক্টের পেছনে ছুটছেন তিনি। এছাড়া সময় চেয়েছেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিবও। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপ এবং আরব আমিরাতের বিপক্ষে ক্রিকেটারদের উপস্থিতি ছাড়া অন্য ম্যাচগুলোতে ঠিক জমছে না এই জুটির কর্মযজ্ঞ।
এদিকে সপ্তাহ না পেরোতেই বাজবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দামামা। এখনো যদি ইমপ্যাক্ট ক্রিকেট খেলতে না পারেন ক্রিকেটাররা। ফল আদায়ের কৌশল যদি বের করতে না পারেন অধিনায়ক-কোচ, সাকিব-শ্রীরাম জুটি। তবে এই টি-টোয়েন্টি খেলিয়া আমরা কী করিব?