জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক চিহ্ন হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে বাংলাদেশের আরও দুটি পণ্য। বৃহত্তর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি ও বগুড়ার দই হতে যাচ্ছে এবারের মর্যাদাশীল দুটি পণ্য। যা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের পরিচিতিকে ইউনিক হিসাবে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) উপ-নিবন্ধক আলেয়া খাতুন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, একটি নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থলের কারণে কোনও পণ্যের গুণগতমান নিয়ে খ্যাতি তৈরি হলে নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পণ্যটিকে জিআই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ১১টি পণ্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এই বছর বগুড়ার দই ও শীতলপাটির জন্য আবেদন করা হয়। যা শিগগিরই স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। গেজেট প্রকাশ হলেই এই পণ্য বিশ্বের বুকে পরিচিতি পাবে।
২০২১ সালে শীতলপাটিকে বাংলাদেশের বিশেষায়িত পণ্য হিসেবে বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে ডিপিডিটির কাছে জিআই সনদের জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। অন্যদিকে ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর বগুড়ার দইকে জিআই পণ্য করতে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিপিডিটির কাছে আবেদন করে গুড়ার বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।
২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি। পরে সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইলিশ মাছ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম, বিজয়পুরের সাদামাটি, কালিজিরা, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, ঢাকাই মসলিন, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ির নাম। এসব পণ্য একক সত্ব শুধু বাংলাদেশের।
শীতলপাটি ও বগুড়ার দই তেমনই দুটি পণ্য। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের শীতলপাটি জায়গা করে নিয়েছিল মোগল রাজদরবার ও ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার রাজসভায়। পণ্যটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৭ সালে শীতলপাটির বুননশিল্পকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা- ইউনেসকো।
শীতলপাটি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি হয়। যা ব্যবহার শীতল অনুভূতি হয়। গরমের সহায়ক এই পাটি। যা শহর কিংবা গ্রামের জীবনে প্রতিদিনের সঙ্গী। এআটি পাটি তৈরি করতে সময় লেগে যাবে ১৫ থেকে ২০ দিন। দামও খুব বেশি নয়। ৫০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকার মধ্যেই ভালো ডিজাইনের শীতলপাটি পাওয়া যাবে। শুধু গরমে আরাম দিতেই নয়, ফুলদানি, শোপিস, খেলনা, জায়নামাজ, ফাইল ফোল্ডার, কলমদানি, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ছবি ও আয়নার ফ্রেম, ওয়ালমেট, জুতাও বানানো যায় এই শীতলপাটি দিয়ে।
অন্যদিকে প্রায় দেড় শ বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নীলকণ্ঠ ঘোষের হাত ধরে বগুড়ার দইয়ের যাত্রা শুরু। যা ধারাবাহিকতা বগুড়ার প্রসিদ্ধ খাবারে পরিণত হয় এটি। প্রায় সাত হাজার মানুষ এখন বগুড়ার দই তৈরির কাজে নিয়োগ রয়েছে। আর প্রসিদ্ধ এই খাবারটির দোকান রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। সম্পূর্ণ খাঁটি দুধে তৈরি হয় এই দই যা স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়৷