কাউনিয়ায় চরাঞ্চলের মানুষের আকুতি, জারোত মরি গেইনো বাহে
3, January, 2023, 6:36:35:PM
সারওয়ার আলম মুকুল
কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ
তীব্র শীতে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা নদী বেষ্টিত ২২টি চরাঞ্চলের মানুষের আকুতি ’হামাক এ্যাখান কম্বল দেন বাহে, জারোত হামরা মরি গেইনো। হামার পাকে কায়েও দেখে না, একনা দয়ার নজরে দেখ বাহে। এ আকুতি বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সমাজের উচ্চ বিত্ত মানুষের কাছে।
সরেজমিনে চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে গত বছরের তুলনায় এ বছর শীতের তীব্রতা বেশী হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষরা পড়েছেন মহাবিপদে। আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাবে হাড় কাপানো শীতের তীব্রতায় নিরুপায় হয়ে পড়েছে উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্ঠিত ২২টি চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ। গত কয়েকদিন সূর্যের দেখা নেই, সেই সাথে সিড়সিড় হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডা বাতাসে চরাঞ্চল থেকে শুরু করে উপজেলার সর্বত্রই নতুন করে শীত জেঁকে বসেছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে। আর মধ্যবিত্তরা পরেছে চরম বিপাকে। তারা না চাইতে পাচ্ছে না সয্য করতে পাচ্ছে। অনেকে খড় কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে। বিশ^নাথ গ্রামের বৃদ্ধা নুরবানু বেওয়ার জানান, এবার পৌষ মাসোত ক্যানবা এতো ঠান্ডা বাহে, গরম কাপরের অভাবত হামরা গুলা মরিগেইনু বাহে, হামার ভিতি কায়ো দেখে না। হামাক একটা কম্বল দিয়া জারত খাকি বাচান বাহে। অতিশীতের কষ্ট থেকে তার এই আর্তনাদ। শুধু বিশ^নাথ গ্রামেই নয়, এ চিত্র তিস্তা পারের দারীদ্রক্লীষ্ট চর নাজিরদাহ, চরপল্লীমারী, চর একতা, ধুমগাড়ার চর, প্রাণনাথ চর, চরসাব্দী, গোপিডাঙ্গা চর, আরাজি হরিশ্বর, গদাই, চর ঢুষমারা, তালুকশাহবাজ, হরিচরণশর্মা, চরগণাই, হয়বতখাঁ, বিনোদমাঝী, আজমখাঁ, টাপুর চরসহ চরাঞ্চলের অবস্থা আরও ভয়াবহ অবস্থা। তিস্তা নদীর কোল ঘেষা রংপুরের কাউনিয়ায় ৮৩টি গ্রামের ২২টি গ্রামই হলো তিস্তার চরাঞ্চল। এ চরাঞ্চলে প্রায় দেড়লক্ষ মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ দারীদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। চরাঞ্চলের ওই সব মানুষের দুঃখের কথা কেউ জানেনা। জানলেও ওদরে কথা কজনইবা মনে রাখে ? ওদেরই একজন হতভাগ্য ঢুসমারা চরের সেকেন্দার আলী জানান হামার কষ্ট চিরকাল, কত সরকার আইসে যায় হামার যেমন কষ্ট তেমনে থাকে। হামরা কী এই দ্যাশের মানুষ নোয়াই বাহে ? তাদের দাবী দেশে সরকার আছে, এনজিও আছে কেউ তাদের খোজ নেয়না। শুধু ভোট আসলে আর সুদের টাকার জন্য ওরা ওইসব চরে আসে আর সান্ত¦নার বাণী শোনায়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আহসান হাবীব সরকার জানান, এখন পর্যন্ত সরকারী ভাবে ২ হাজার ৭৬০টি কম্বল এবং ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা তারিন বলেন সরকারী যা বরাদ্দ পেয়েছি তা ইউনিয়ন পরিষদে দেয়া হয়েছে, চেয়ারম্যান সাহেবরা বিতরণ করছেন। এলাকাবাসী বলছেন লাখো মানুষের জন্য কম্বল মাত্র ২৭’শ যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তারা বলছেন সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় এমপি বাণিজ্যমন্ত্রীসহ বেসরকারী ভাবেও সাহায্যের হাত বাড়ানো দরকার।