রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার একটি পৌর সভা সহ ৪টি ইউনিয়নের পাশ দিয়ে আকা-বাঁকা পথে প্রবাহমান এক সময়ের খরস্ররোতা তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে বর্তমানে প্রায় হাটু পানিতে পরিনত হয়েছে। এ বছর শীত মৌসুমে পানি প্রবাহ অস্বাভাবিক ভাবে হ্রাস পেয়ে ডালিয়া পয়েন্ট থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৭৫ কিঃমিঃ নদীর অধিকাংশ স্থান এখন কংকাল সার ধু-ধু বালুচর, নদীর বুকে চলছে বিভিন্ন ফসলের চাষ। তিস্তা নদীর উজানে ভারত সরকার পশ্চিম বঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে একটি খালের মাধ্যমে শুকনো মৌসুমে নদী থেকে দের হতে দুই হাজার কিউসেক পানি মহানন্দা নদীতে নিয়ে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশে তিস্তা নদীর এ আবস্থা। ভারত তিস্তা থেকে পানি প্রত্যাহার করায় তিস্তা বাঁধ প্রকল্প প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নদীতে পানি না থাকায় জেলায় মৎস্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জীব বৈচিত্রতা হুমকির মধ্যে পড়েছে। মৎস্য জীবিদের কর্মহীনতা, কৃষিতে সেচ, আরসেনিক সমস্যাসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ লেগেই আছে। নদীর বুক জুরে এখন ধু-ধু বালুচর আর ফসলের মাঠ। চলছে ধান, গম, আলু, পিয়াজ, মরিচ, কুমড়াসহ নানা ধরনের রবি শস্যর চাষ। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের পরিকলপনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় এবং স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ড্রেজিং না করায় নদীর তল দেশ ভরাট হয়ে বর্তমানে মরা খালে পরিনিত হয়েছে। নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে শত শত মাঝি পরিবার বেকার হয়ে পড়েছে। নদীতে পানি না থাকায় চীলমারী বন্দর ও বুড়িমারী বন্দরের সাথে নৌ যোগে মালামাল পরিবহন প্রায় বন্ধ রয়েছে দীঘকাল থেকে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ডালিয়া পয়েন্ট সূত্রে জানাগেছে স্থানীয় ভাবে চাষীরা তিস্তার ডান ও বাম তীরে ইনলেকট্র কালচারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত পাম্প দিয়ে সেচ কাজে পানি ব্যবহার করা এবং শুস্ক মৌসুমে তিস্তার পানি সরবরাহ কমে যাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে তিস্তার পানি প্রবাহ অস্বাভাবিক হ্রাস পেয়েছে। এতে করে চলতি মৌসুমে চাষীরা বোর চাষ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। নদীর পানি হ্রাস ও উজানের পাহাড়ী ঢলে বালু পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সু স্বাদু মাছ সহ অনান্য মাছ না থাকায় নদীকে ঘিরে জেলে পরিবার গুলোর আয়ের উৎস বন্ধ হয়েগেছে। নদীকে ঘিরে জীবন জীবিকা নির্বাহকারী শাতশত মৎস্যজীবি পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। নদী ড্রেজিং না করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে আসংখ্য বাঁক ও চরের সৃষ্টির ফলে বর্ষা কালে নদীর পানি ধারন ক্ষমতা কমে যায় এবং কাউনিযা এলাকার উভয় তীরের প্রায় ৩০ কিঃমিঃ গ্রাম গুলো নদী ভাঙ্গন ও বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধির ফলে নদী ভাঙ্গনে ফসলী জমি সহ বাড়ি ঘর হারিয়ে নিঃশহয়ে পরে শতশত পরিবার। বেশ কয় বছর থেকে শোনা যাচ্ছে তিস্তা মহা পরিকল্পনার কিন্তু তার বাস্তব মুখ আজও দেখা যায় নি। এখার মানুষ তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী জানিয়েছে।