দীর্ঘ দেড় যুগ অপেক্ষার পর ইমিগ্রেশনের পূর্ণতা পাচ্ছে দেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। এ ইমিগ্রেশনের সুবিধা চালু হওয়ার সাথে সাথে শুরু হবে বাংলাদেশসহ চারটি দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর সাথে অর্থনৈতিকভাবে বদলে যাবে দেশের সর্বোত্তরের পঞ্চগড় জেলাটি। আজ দুই দেশের মন্ত্রী এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় জেলা প্রশাসন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল (এমপি) এবং ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) ড.বিজয় কুমার সিং এবং ঢাকাস্থ হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শিংলা প্রমুখ। গত রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড.মো.মোজ্জাম্মেল হক খানের সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্র“য়ারি) ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর দিন নির্ধারণ হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয় বলে সাংবাদিকরে অবহিত করেছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
বাংলাবান্ধাই দেশের একমাত্র চেকপোষ্ট, যেখান দিয়ে একই সাথে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান এ চারটি দেশে সহজ যোগাযোগ সম্ভব এবং আশা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে চীনও এর সাথে যুক্ত হতে পারে। ইমিগ্রেশন চালু হলে এ দেশগুলো লাভবান হবে এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে হিমালয়কন্যা খ্যাত পঞ্চগড় আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পরিণত হবে শিল্প ও পর্যটন নগরীতে।
১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের মধ্যে ত্রি-দেশিয় ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের পথচলা শুরু হয়। এরপর ২০০৪ সালের ২২ মে স্থলবন্দরের ওয়ার হাউজসহ অবকাঠামোর উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ এবং নেপালের মধ্যে সীমিতভাবে পণ্য আনা নেয়া শুরু হয়। ২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখ্যার্জি ও বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী যৌথভাবে ত্রি-দেশিয় স্থলবন্দর হিসেবে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দরের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
বাংলাবান্ধার ভৌগোলিক অবস্থান ভারতের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, নেপালের কাকরভিটা এবং ভুটানের ফুয়েন্টসলিং শহরের বেশ কাছাকাছি। এই স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু হলে কম খরচে উভয় দেশের মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। বাংলাবান্ধা থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে ভারতের শিলিগুড়ি, ১০ কিলোমিটার দূরে জলপাইগুড়ি, ৫৮ কিলোমিটার দূরে দার্জিলিং, ৬১ কিলোমিটার দূরে নেপালের কারকরভিটা তথা মিচি শহর এবং ৬৮ কিলোমিটার দূরে ভুটানের ফুয়েন্টসলিং শহর অবস্থিত। এজন্য দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা এই স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন সুবিধা দাবি করে আসছিলেন।
ইমিগ্রেশনে উদ্বোধনের খবরে পুরো পঞ্চগড় জুড়ে চলছে খুশির আমেজ। দীর্ঘ ১৮ বছরের দাবী আদায়ে আজকের এই সাফল্য। এ সাফল্যের আনন্দের বাতাস বইছে সর্বত্র। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন সুবিধা উদ্বোধন হওয়ার খবরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট, পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, পঞ্চগড় নাগরিক অধিকার কমিটি এবং তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহীন।