এক্সক্লুসিভ -
বাঙলাদেশের মেলা: কিছু অজানা অধ্যায়

ছবি: মাসুম হাসান 

 

মাসুম হাসান

নানা রকম মেলা, পার্বনের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রতিবছর বাংলাদেশে বৈশাখি মেলা,বইমেলার পাশাপাশি কিছু মেলা অনুষ্ঠিত হয় যা স্বীয় বৈশিষ্ট্যে অন্যমেলা থেকে একটু আলাদা। আসুন সেরকম কিছু মেলা সম্পর্কে জেনে নেই।

 

||--- ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মাছের মেলা ---||

 

 

 

মাছের মেলা বলতেই বোঝা যায় হরেক রকম মাছের এক বিশাল সমারোহ। মজার ব্যাপার হলো মাছের এরকম একটা মেলা বহুকাল ধরে হয়ে আসছে। এটা বগুড়া জেলা শহর হতে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ নামক স্থানে প্রতিবছর বসে। এই মেলার পেছনে একটা প্রচলিত কাহিনী রয়েছে।

 

প্রচলিত কাহিনীঃ

মেলা শুরুর সঠিক সময় কেউই জানে না বা এ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে জানা যায় প্রায় চারশত বছর পূর্বে মরা বাঙালি নদীর জলে প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবারে অলৌকিক ভাবে এক বিশাল কাতলমাছ(মতান্তরে অন্য কোন মাছ) জেগে ওঠে এবং তার পিঠে সোনার ঝুড়ির মত দেখতে পাওয়া যায়। এরপর থেকে প্রতিবছর ঠিক এই সময়টায় এই দৃশ্য দেখার জন্য গ্রামবাসীরা জড়ো হতে থাকে। এসময় এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে এই মেলা সংগঠনের স্থানে প্রাচীন এক বটগাছের নিচে। যিনি এই মাছের নিকট অর্ঘ্য নিবেদন করেন এবং একসময় এখানে আশ্রম গড়ে ওঠে এবং সন্ন্যাসী পূজার আবির্ভাব হয়। এসময় ধীরে ধীরে লোক সমাগম বাড়তে থাকে যার ফলে একসময় এই মেলার গোড়াপত্তন হয়। সেই থেকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মেলায় মানুষ জন জড়ো হয়ে বেচাবিক্রির মাধ্যমে মেলাটি আজকের অবস্থায় আসে।

 

কখন মেলা বসেঃ

প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ তিন দিনের মধ্যকার বুধবার অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলা বসে। তবে মেলা চলে এই বুধবারের আগের তিনদিন থেকে শুরু করে পরের দুইদিন পর্যন্ত।

 

মেলার প্রধান আকর্ষণঃ

 

মেলার অন্যতম আকর্ষণ বিভিন্ন প্রজাতির বৃহদাকৃতির মাছ। নানা প্রজাতির বড় বড় মাছ এখানে পাওয়া যায়; বিশেষ করে নদীর বড় বড় বাঘাইর, আইড়, বোয়াল, কাতলা, পাঙ্গাস, সামুদ্রিক টুনা, ম্যাকরেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেচা-কেনা হয়। তবে চাষকৃত বিভিন্ন ছোট বড় আকারের মাছও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়াও মাছ সম্পর্কিত বিভিন্ন দ্রব্য,ঘরবাড়ির জিনিসপত্র, আসবাবপত্র, বাঁশ ও বেতের জিনিস, নানা জাতের মাছের আকৃতির বিশাল আকৃতির মিষ্টি বিক্রি হয়। এছাড়াও সার্কাস, নাগরদোলা ও পালাগানের ব্যবস্থা করা হয়।

 

||--- বউ শাশুড়ি মেলা ---||

 

 

 

আমার দেখা এ যাবৎ অদ্ভুত মেলার মধ্যে বউ শাশুড়ি মেলা অন্যতম। এই বছর ৮ ও ৯ মার্চ লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ অদ্ভুত এই মেলার আয়োজন করে। ইউপি চেয়ারম্যান এম জি মোস্তফা কিছুটা নতুনত্ব আনার জন্য এরকম একটা আয়োজন করেন বলে জানান।

 

ভাববেন না এখানে বউ- শাশুড়ি ক্রয় বিক্রয় হয়। এখানে আগত শাশুড়ি বউয়ের মধ্য থেকে আদর্শ শাশুড়ি বউ নির্বাচন করা হয়। আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেক শাশুড়ি বউ অংশগ্রহন করে। এবছর অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উপজেলার সিংগীমারী গ্রামের আবু বরকতের স্ত্রী আঞ্জুমান আরাকে আদর্শ শাশুড়ি ও একই গ্রামের আমির হোসেনের স্ত্রী বিউটি বেগমকে আদর্শ বউ ঘোষণা করা হয়।

 

অন্যান্য আয়োজনঃ

মেলায় খেলনাসামগ্রী ও মণ্ডা-মিঠাইয়ের স্টলের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অন্যরকম মেলা বেশ কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে ইতিমধ্যে।

 

এছাড়াও এরকম আরও একটা মেলার খবর পাওয়া যায় যা এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে হয় এই জেলারই কালীগঞ্জ উপজেলার ২নং মদাতি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। মেলাটির আয়োজন করা হয় প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়িত এইচআর এইচ প্রকল্পের অধীনে। মেলার উদ্দেশ্য ছিল, উপজেলার ৯টি ওয়ার্ডের বউ-শাশুড়ির মধ্যে নিরাপদ প্রসব ও সচেতনতা বাড়ানো। কোন বেচাকেনা না থাকা সত্ত্বেও বেশ ভীড় ছিল দর্শনার্থীদের।

 

||--- জামাই মেলা ---||

 

 

বউ-শাশুড়ির মেলা থাকবে আর জামাই মেলা থাকবে না তা কি হয়। জামাই মেলা নাম হলেও এখানেও জামাই বেচাকেনা হয় না। এই মেলার উদ্দেশ্য সাধারণত মেয়ে জামাইকে আপ্যায়ন করা শ্বশুরবাড়ি কর্তৃক। বছরের অন্যান্য সময় গ্রামবাসীরা অপেক্ষা করে এই ব্যতিক্রমধর্মী মেলার জন্য।

 

স্থান এবং প্রচলিত ইতিহাসঃ

"জামাইমেলা" এ সম্পর্কে একটু ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম যে দেশের কয়েক জায়গায় বিভিন্ন সময়ে প্রায় একই নামে মেলা হয়ে থাকে। যেমনঃ

 

জামালপুরের জামাইমেলাঃ

ভারত বিভক্তির আগ পর্যন্ত বারুনি স্নান উপলক্ষে চৈত্র মেলা বসত যাকে কেন্দ্র করে হিন্দু মুসলমান সবাই উৎসবে মেতে উঠত। ভারত বিভক্তির পর এই মেলা `জামাইমেলা` নাম ধারণ করে।

 

বগুড়ার জামাইমেলাঃ

চৈত্রসংক্রান্তি আর পয়লা বৈশাখে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নের পাঠান গ্রামে এ মেলা বসছে আনুমানিক ২০০বছর ধরে। প্রাচীন এ মেলায় লোকসমাগম বেড়ে যাওয়ায় পাশের নিমাইদীঘিতেও আরেকটি মেলা বসছে এক দশক ধরে। এটা "জামাইমেলা" নামেই পরিচিত।

 

টাঙ্গাইলের শতবর্ষের জামাইমেলাঃ

প্রতিবছর ১২ বৈশাখ টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুরে অনুষ্ঠিত হয় জামাই মেলা। রসুলপুরের বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করা হয় মেলার। রসুলপুরসহ আশপাশের ৩০টি গ্রামের হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে মেলায়। দ্বিতীয়দিন বসে বউমেলা আর প্রথমদিন জামাইমেলা।

 

কিশোরগঞ্জ এর জামাই-বউ-মাছমেলাঃ

কিশোরগঞ্জের সর্ববৃহৎ কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাঁই বার আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ্ শামসুদ্দিন বুখারী (র.) ওরস উপলক্ষে ৮০০ বছর ধরে চলে আসছে এই মেলা। এটা "জামাই-বউ-মাছমেলা"। জানা যায়, ১২২৫ খ্রিস্টাব্দে বার আউলিয়ার সাথে হযরত শাহ্ সামসুদ্দিন আউলিয়া (র.) তিনজন সহচর শাহ্ নাছির, শাহ্ কবির ও শাহ কলন্দরকে সঙ্গে নিয়ে ধর্ম প্রচারের জন্য কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাঁই আস্তানা স্থাপন করেন।

 

শেরপুর( বগুড়া) এর কেল্লাপোষী অথবা জামাইবরণ মেলাঃ

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় গত পাঁচ শতাব্দী ধরে প্রতিবছরের জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি সময়ে উৎসবে মেতে উঠে এই অঞ্চলের মানুষ। আর এই উৎসবের উপলক্ষ্য ৪৫৯ বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী কেল্লা পোষী মেলা। স্থানীয়দের ভাষায়, যাকে ‘জামাইবরণ’ মেলাও বলা হয়ে থাকে। কেল্লাপোষী মেলা সম্পর্কে তেমনি একটি লোকগাঁথার কথা জানা যায়। ১৫৫৬খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ মেলা হয়ে আসছে বলে কথিত আছে। এ সম্পর্কে জানা যায়, বৈরাগ নগরের বাদশা সেকেন্দারের একজন ঔরসজাত এবং একজন দত্তক ছেলে ছিলেন। ঔরসজাত ছেলের নাম ছিল গাজী মিয়া আর দত্তক ছেলের নাম কালু মিয়া। গাজী মিয়া দেখতে খুবই সুদর্শন ছিলেন। তারা রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে ফকির সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে ঘুরতে ঘুরতে ব্রাহ্মণ নগরে আসেন। সেখানে ব্রাহ্মণ রাজমুকুটের একমাত্র কন্যা চম্পা গাজীকে দেখে মুগ্ধ হন। একপর্যায়ে তারা দু’জন দু’জনকে ভালবেসে ফেলেন। পালিত ভাই কালু মিয়া বিষয়টি জানতে পেরে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুকুট রাজার নিকট যান। মুকুট রাজা ফকির বেশী যুবকের এরূপ স্পর্ধা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বন্দী করেন। এতে গাজী মিয়া কঠিন আঘাত পান। তিনি মুকুট রাজার নিকট থেকে ভাই কালু মিয়াকে উদ্ধারের জন্য কেল্লাপোষী নামক একটি দূর্গ নির্মাণ করেন। পরে রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করে ভাইকে উদ্ধার এবং তার কন্যাকে বিয়ে করেন। আর তিথি অনুযায়ি ওই দিনটি ছিল জৈষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষে কেল্লাপোষী দূর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপি আনন্দ উৎসব চলে এবং সেখানে মাজার গড়ে তোলা হয়। মেলা চলাকালে সেখানে ভক্তরা আসর বসায়। ওই দিনগুলোকে অম্লান করে রাখতে প্রতি বছর তিন দিনব্যাপি এ মেলা বসে।

 

নানা আয়োজনঃ

প্রায় সব জামাইমেলার ক্ষেত্রে একইরকম আয়োজনের ব্যবস্থা রাখা হয়। গ্রামের গেরস্থরা মেলা উপলক্ষে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করে। মেলার কয়দিন মেয়ে-জামাইকে নানা উপহার, সেলামি দেয়া ছাড়াও সব ধরণের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। এই উৎসব আনন্দে শরিক হতে দূরে বিয়ে দেয়া মেয়ে আর জামাইরা অপেক্ষায় থাকে সারা বছর। মেলা উপলক্ষে শশুড়বাড়ি এসে সবকিছুকে ছাড়িয়ে জামাইরা মন ভরে উপভোগ করে শ্বশুড়বাড়ির আদর-আপ্যায়ন।

 

গোপালপুরের মেলা বিশাল এলাকা জুড়ে বসে। এই মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের সবকিছুর সাথে গেরস্থের প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র, ফার্নিচার ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী গোপালপুরের বিখ্যাত নানা রকমের মিষ্টির পসরা নিয়ে বসে দোকানিরা। বিশেষ করে মেলার বালিশ মিষ্টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আগত দর্শনার্থীদের। 

 

অন্যান্য সব মেলার ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাদের জামাইদের হাজার হাজার টাকা দেওয়া হয়। সেই টাকার সাথে কিছু টাকা যোগ করে শ্বশুর বাড়ির জন্য এই মেলা থেকে বড় বড় মাছ, মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়। কোন কোন গ্রামে মেলা থেকে মাছ না কিনলে সেই মাছ বাড়িতে নেওয়া যায় না। বড় বড় মাছ নিয়ে তাই এখানে আগমন ঘটে মাছ বিক্রেতাদের। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় শ্যালক শ্যালিকার দাবী অনুযায়ী জামাইকে অনেক কিছু কিনে দিতে হয়। 

 

 

শেরপুরের জামাইবরণ মেলায় জামাইদের মোটা অংকের সেলামী দেওয়া হয়। সেই টাকায় খাসী কিনে আনেন জামাইরা। এছাড়া মাটির হাড়ি পাতিল ভরে মিষ্টান্ন, চিড়া মুড়ি অন্যান্য সামগ্রী কিনে আনেন এবং শ্যালক শ্যালিকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান। সার্কাস, নাগোরদোলা, হুন্ডা, যাদু, পতুল নাচ খেলা দেখিয়ে দিনব্যাপি আনন্দ শেষে ছাতা, ছোটদের কাঠের ও ঝিনুকের তৈরি খেলনা সামগ্রী নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরেন। এছাড়া মাদার খেলা, লাঠিখেলা, যাত্রা, পুতুলনাচ এসব অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে। "মাদার খেলা"র "মাদার" নামের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রচলিত আছে যে বহু আগে কিছু জটাধারিণী মহিলা ছিলেন যারা অন্যান্য সাধু সন্যাসীর সাথে মিলে মানুষের রোগমুক্তি করতেন। এদেরকে "মাদার" বলা হত। এভাবেই উৎসব উৎসাহের মধ্য দিয়ে জামাইমেলা বসে প্রতিবছর।

 

||--- বউ মেলা ---||

 

 

 

প্রতি বছর সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের মিলনস্থল তাড়াশের নওগাঁর শাহ শরীফ জিন্দানী (রহ.)-এর মাজারে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ওরশের শেষ দিন এ মেলা বসে। এটা "জামাই-বউ" মেলা নামেও পরিচিত বলে জানা যায়।

 

নানা ধরণের ঘর গৃহস্থালির জিনিসপত্র, মিষ্টান্ন, কসমেটিক আরও বহু জিনিস্পত্র কিনতে ভীড় জমান বউ শাশুড়িরা। মেলার নাম "জামাই-বউ" মেলা হলেও সব বয়সের সব ধর্মের মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে মেলা প্রাঙ্গণ।

 

||--- জসীম মেলা ---||

 

 

 

এটি পল্লিকবি জসীমউদ্দীন স্মরণোৎসব মেলা। ফরিদপুর শহরের কাছেই কবির জন্মভিটা অম্বিকাপুরে প্রতিবছর এ মেলা বসে থাকে।

এ মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকে পল্লিগীতি ও বিচারগানের আসর।

 

এছাড়াও এ মেলাতে থাকে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি, মাটির হাড়ি, মাটির পুতুল, লোহার সামগ্রী ও বাঁশ-বেতের গৃহসামগ্রী। আর খাদ্যবস্ত্তর মধ্যে থাকে বৈচিত্র্যময় মিষ্টির সমাহার ও ঝালযুক্ত পিয়াজু, মোগলাই, সিঙাড়া, পুরি আরও কত কি!

অন্যদিকে বিচিত্র রকমের দর্শক রুচির দিকে মেলা কমিটির লোকদের থাকে সতর্কচোখ, তাই তারা সার্কাস, পুতুলনাচ ও মৃত্যুকূপ সার্কাসের আয়োজন মেলা প্রাঙ্গণে রেখে থাকেন।

 

||--- বিষুব সংক্রান্তির মেলা ---||

 

 

বাংলা বছরের শেষ দুদিন এবং পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ধুমধামের সঙ্গে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের যে উৎসব উদযাপিত হয় তারমধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব ও মেলার নাম হচ্ছে-"বৈসাবি"। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন মুখ্য আদিবাসীগোষ্ঠী- চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমাদের মধ্যে এ উৎসব পরিচিত যথাক্রমে বৈসুক, সাংগ্রাইন ও বিজু নামে, যাদের আদ্যক্ষর নিয়ে ইদানীং এ অঞ্চলের সকল আদিবাসীগোষ্ঠীর জন্য এ উৎসবকে অভিহিত করা হয়েছে ‘বৈ-সা-বি’ নামে।

 

`ফুল বিজু’, ‘মূল বিজু’ এবং ‘গোর্য্যাপর্য্যার দিন’ মিলে মোট তিন দিন চলে চাকমাদের বিজু উৎসব ও মেলা।

 

ছেলেমেয়েরা সবাই মিলে প্রতিবেশীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ঘুরে ঘুরে বিজু খেয়ে থাকে। প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঘুরতে এদিন কোনো দাওয়াতের প্রয়োজন হয় না। প্রতি বাড়িতে পাজনসহ খাবারের বিভিন্ন আয়োজন থাকে। সম্ভবত পাঁচ অণ্ণ (পাঁচন) শব্দ থেকেই পাজন শব্দের উৎপত্তি। ন্যূনতম পাঁচ পদের সবজির সংমিশ্রণে রান্না করা তরকারিকে পাজন বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে একশ পদেরও বেশি সবজি দিয়ে পাজন রান্না করা হয়। এ পাজন ছাড়াও থাকে পিঠা, পায়েস, সেমাই, শরবত ইত্যাদি নানা ধরণের খাবার ও পানীয়। পাজনের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের আপ্যায়ন করা হয় ঘরে তৈরি মদ দিয়ে। সাধারণত মূল বিজুর দিনে ভাত এবং মাছ-মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় না।

 

||--- রথের মেলা ---||

 

 

 

সাধারণত বাংলা বছরের আষাঢ় মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথের মেলা বসে থাকে। তবে বাংলাদেশের মধ্যে সাভারের ধামারাইয়ের রথের মেলা সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ। এছাড়াও বাংলাদেশের কুষ্টিয়া শহরের রথখোলার মেলা, রাজশাহী জেলার পুঠিয়ার রথের মেলা, সিলেটের জৈন্তপুরের লামাপাড়া রথযাত্রার মেলা, গোপালগঞ্জের মোকশেদপুরের রথযাত্রার মেলা, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের রথযাত্রার মেলা, ঢাকা তাঁতীবাজার ও রাধাগোবিন্দ মন্দিরের উল্টোরথ মেলা, কুমিল্লার জাহাপুর মুরাদনগরের উল্টোরথ মেলা, ফেনীর ট্রাঙ্করোডের উল্টোরথ মেলা এবং গাইবান্ধার কালিবাড়ির উল্টোরথ মেলাও বেশ প্রসিদ্ধ।

 

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রাকে স্মরণ করে প্রতিবছর এদেশের সনাতনধর্মাবলম্বীরা বহু স্থানে এ ধরণের রথযাত্রার মেলা করে থাকে।

 

রথের মেলাতে মৃৎশিল্প, বাঁশ-বেত-কাঠ শিল্পসহ মেয়েদের বিবিধ প্রসাধন সামগ্রী, মন্ডা-মিঠাই, মৌসুমী ফলমূল বেচকেনার পাশাপাশি থাকে সার্কাস, পুতুল নাচের আয়োজন। এছাড়া শিশুদের আনন্দ-বিনোদনের জন্যে থাকে নাগরদোলা, ইয়ারগান দিয়ে বেলুন ফোটানো বা শূটিংয়ের ব্যবস্থা।

 

 

ব্লগার কাণ্ডারি অথর্ব ভাই আরও দুটো মেলার কথা বললেন কমেন্ট এ। ধন্যবাদ ভাইকে। তার ব্যাপারে কিছু তুলে ধরলাম।

 

||-- রাস মেলা --||

 

সুন্দরবনে দুবলার চরে প্রতি বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা রাতে অনুষ্ঠিত হয় রাস মেলা। অসংখ্য সনাতন ধর্মাবলম্বী অংশ নেন এ মেলায়।

 

এছাড়াও দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কান্তনগরে কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী রাস মেলা হওয়ার কথাও শোনা যায়।

 

প্রচলিত ইতিহাসঃ

ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, ১৯২৩ সালে হরিচাঁদ ঠাকুরের বনবাসী ভক্ত হরিভজন এ মেলা শুরু করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবতা শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগে কার্তিকের পূর্ণিমা রাতে পাপমোচন ও পুণ্যলাভের আশায় গঙ্গাস্নানের জন্য স্বপ্নে আদেশ পান। তখন থেকেই এ মেলার শুরু। আবার অনেকে মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণ বনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসলীলা করেছিলেন এ কার্তিকের পূর্ণিমা রাতে। সে উপলক্ষেই এ মেলা বসে। এজন্যই এর নাম হয় "রাসমেলা"।

 

এদিন যা যা হয়ঃ

 

সনাতনধর্মীরা সূর্যোদয়ের আগেই সাগরপাড়ে বসে থেকে প্রার্থনা করে। যখন সূর্যোদয়ের পর জোয়ার আসে তখন সেই পানি স্পর্শ করার সাথে সাথে পুন্যার্থীরা সাগরে স্নান করেন। তাদের মতে এতে তাদের পাপ মুছে সাগরে মিশে যায় এবং তারা পুণ্যবান হন।

 

সকালে পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে সারাদিন মেলা ও নানা অনুষ্ঠান চলে। রাতে ওড়ানো হয় ফানুস। পরদিন স্নানের মধ্য দিয়ে এই মেলার ইতি টানা হয় অথবা তিনদিন যাবত এ মেলা চলতে পারে।

 

 

||-- বউ মেলা --||

 

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌরসভার জয়রামপুর গ্রামে শত বছরের পুরোনো বটগাছের নিচে বসে বউ মেলা। হিন্দুধর্মাবলম্বী লোকজন এ মেলার আয়োজন করে থাকেন। এ মেলায় সাধারণত নববধূ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের নারীরা আসেন। পুরোনো বছরের ঝগড়া বিবাদকে দূরে ঠেলে দিয়ে একজন বাঙালি বধূ যাতে নতুন বছরে স্বামীর সংসারকে ধনসম্পদে ভরিয়ে তুলতে পারেন, সে আশা নিয়ে নারীরা এ মেলায় আসেন।

 

লেখকবার্তা সম্পাদক, দৈনিক নতুন বাজার ৭১.কম

[ সূত্রঃ ইন্টারনেট, বিভিন্ন ব্লগ, নিউজ, লোকাল ইনফো এবং ইভেন্ট]

 

অ্যামফিটামিন পাচারের নিরাপদ ট্রানজিট বাংলাদেশ!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রপ্তানি পণ্যের আড়ালে বিদেশে পাচারের সময় গত বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে জব্দ করা ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন চীন অথবা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে বলে মনে করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের যুক্তি, ইউরোপের দেশগুলোতে বহুল প্রচলিত ভয়ঙ্কর এ মাদক বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে উৎপাদন হয় চীন ও মিয়ানমারে। কাজেই এ দুটি দেশের একটি থেকেই হয়তো এ দেশে এসেছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা মূল্যের এ মাদক। কর্মকর্তারা মনে করছেন, শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে এটি অস্ট্রেলিয়ায় পাচারের চেষ্টা চলছিল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ধারণা, বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেড (ফেডেক্স) কুরিয়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মী এ পাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আন্তঃদেশীয় অপরাধী চক্র বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছিল। এদিকে বুধবার মাদক জব্দের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬ জনের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর থানায় মামলা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মামলার আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেডের (ফেডেক্স) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অর্থ) খন্দকার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ ও সিনিয়র ম্যানেজার (অপারেশন) রাসেল মাহমুদ, ইউনাইটেড এক্সপ্রেসের জেনারেল ম্যানেজার গাজী শামসুল আলম, এক্সপোর্ট কার্গোর ভেতরে এমজিএইচ গ্রুপের লোডিং সুপারভাইজার কাজল থুটোকিশ গোমেজ, কার্গো হেলপার/লোডার মো. হামিদুল ইসলাম ও মো. নজরুল ইসলাম।

এ নিয়ে গতকাল দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গো ভিলেজে কাস্টমস বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধির উপিস্থিতিতে তৈরি পোশাকের প্যাকেট থেকে ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম সন্দেহজনক দ্রব্য উদ্ধার করে। ৩৪০ কার্টন পণ্যের মধ্যে ৭টিতে জিন্সের প্যান্টের আড়ালে এগুলো পাচার করা হচ্ছিল। এগুলো ছিল ১৪টি বড় ও ১৪টি ছোট প্যাকেটে। এসব প্যাকেট কার্বনের লেয়ার দ্বারা প্রস্তুত পাতলা অ্যালুমিনিয়ামের। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে নমুনা টেস্ট করে এতে অ্যামফিটামিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর ‘ক’ তফশিলভুক্ত মাদক।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, জব্দকৃত অ্যামফিটামিন পাউডারের আনুমানিক মূল্য প্রতি কেজি দুই কোটি টাকা। সেই হিসাবে জব্দ ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন পাউডারের মূল্য প্রায় ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, নেপচুন ফ্রেইট লিমিটেডের উত্তরার আশকোনায় একটি অফিস রয়েছে এবং ওই অফিসের রুবেল হোসেন নামের এক ব্যক্তি ওই সাত কার্টনে তৈরি পোশাক-জিন্সের প্যান্ট অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর জন্য ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লিমিটেডে বুকিং দিয়ে যায়। বনানীর ইউনাইটেড ফ্রেইটের পরামর্শক্রমে ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লিমিটেড প্রথমবারের মতো নেপচুন ফ্রেইট লিমিটেডের ওই সাতটি কার্টন গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ইউনাইটেড এক্সপ্রেস কার্টনগুলো বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেডে (ফেডেক্স) প্রেরণ করে। ফেডেক্স তার হাবে সংরক্ষণ করে ও যথাসময়ে কার্গো ভিলেজে পাঠায়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর ওপর নজরদারি রাখছি। কেউ যাতে কোনোভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসকে ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে মাদকের চোরাচালান করতে না পারেন।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, নথিপত্র অনুযায়ী, এই মাদকের গন্তব্য ছিল হংকং হয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। প্রাপক, দাস সিং ৩৪ কলম্বিয়া রোড, মেলবোর্ন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ৫ খুনির কে কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া পলাতক ৫ খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে বন্দী বিনিময় চুক্তি না থাকায় ৫ খুনির সম্ভাব্য অবস্থান জানার পরও তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা সমস্যা দেখা দিয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে পলাতক খুনিদের মধ্যে কেবল ব্যাংকক থেকে আসামি বজলুর হুদাকে আইনি পক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও বাকি ৫ আসামিকে ফিরিয়ে আনার পথ রুদ্ধ হয়ে আছে বন্দী বিনিময় চুক্তি না থাকার কারণে। আত্মস্বীকৃত আরেক খুনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত নুর চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় হারালে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্য ৪ খুনিকে আইনি প্রক্রিয়ায় দেশে আনা যাবে কিনা তা অনিশ্চিত থেকেই যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পলাতক ৬ খুনির মধ্যে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া আবদুল মাজেদ গোপনে দেশে ফেরার পর গ্রেফতার হন। পরে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক খুনি এসএইচএমবি নূর চৌধুরীর অবস্থান জানার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করে তার সম্ভাব্য অবস্থান কানাডা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি লে. কর্নেল এএম রাশেদ চৌধুরীর সম্ভাব্য অবস্থান আমেরিকায়। আরেক খুনি পলাতক লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করছে। তার অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব না হলেও পাকিস্তান বা লিবিয়ায় অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হয়। লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদের অবস্থান শনাক্ত না হলেও তারও সম্ভাব্য অবস্থান লিবিয়া ও জিম্বাবুয়ে বলে জানা গেছে। রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে সম্ভাব্য অবস্থান ভারত বা পাকিস্তান বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুকে নিজ পরিবারে হত্যা মামলায় এখনো যে ৫ খুনি বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোর তৎপড়তা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখা। আত্মস্বীকৃত ওই ৫ খুনিকে গ্রেফতারে পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখা থেকে সম্প্রতি ১৯৩টি দেশের ইন্টারপোল শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করে জারি করা রেড নোটিশ রিভিউ করা হয়েছে। তবে বন্দী বিনিময় চুক্তি না থাকায় আত্মস্বীকৃতি খুনিদের ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। ৫ খুনির সর্বশেষ অবস্থানের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের অসহযোগিতার কারণে ৪ খুনির অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ৫ খুনির মধ্যে দু’জনের অবস্থান পাকিস্তানে থাকতে পারে। কিন্তু কূটনৈতিক তৎপরতার দুর্বল অবস্থানের কারণে পুলিশ সদর দফতরের সব চেষ্টা বার বার বিফলে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখার এআইজি মহিউল ইসলাম জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ৫ খুনির মধ্যে কে কোথায় রয়েছে তা নিশ্চিত হতে বাংলাদেশ পুলিশের সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছে। ২০১৯ সালে নতুন করে ১৯৪টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখা আন্তরিকতা দিয়ে খুনিদের ফেরার বিষয়ে আইনি বাধাগুলো পর্যালোচনা করে যাচ্ছে।

এআইজি মহিউল ইসলাম জানান, ৫ খুনিকে গ্রেফতারে সহযোগিতা চেয়ে ২০০৯ সাল থেকে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। গত বছর রেড নোটিশ দু’বার রিভিউ করা হয়েছে সফলভাবে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে। আমরা ৫ খুনিকে ফিরিয়ে আনার জন্য সবদিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পুলিশ সদর দফতরের এ বিষয়ে আন্তরিকতার অভাব নেই।

পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি (ইন্টারপোল) শাখা সূত্রে জানা গেছে, আত্মস্বীকৃত খুনি নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, রিসলাদার মোসলেউদ্দিন, আবদুর রশিদ, শফিকুল হক ডালিমের অবস্থান কোথায় রয়েছে তা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে ১৯৪টি দেশের সঙ্গে যোাগযোগ করা হয়েছে ইন্টারপোলের মাধ্যমে। এর মধ্যে ভারতসহ কয়েকটি দেশ থেকে বলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কেউ তাদের দেশে নেই। কিন্তু ভারতের কলকাতায় ভিন্ন পরিচয়ে আত্মগোপনে ছিল সদ্য ফাঁসি কার্যকর হওয়া খুনি ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদর (বহিষ্কৃত)। পরে কলকাতা থেকে অতি গোপনে দেশে ফিরে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া মাজেদকে গ্রেফতার করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। অন্যদিকে, বার বার যোগাযোগ করা সত্ত্বেও পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ থেকে কোন রেসপন্স পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টার পর নুর চৌধুরীর অবস্থান কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরীর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত রাশেদ চৌধুরী রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আইনের কারণে রাশেদ চৌধুরী রাজনৈতিক আশ্রয় হারাতে পারেন। যদিও রাশেদ চৌধুরী রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে দেশটির আদালতে আইনজীবী নিয়োগ করেছে। তবে তার রাজনৈতিক আশ্রয় হারানোর সম্ভবনা রয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। তাকে ফিরিয়ে আনার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে রিসালাদার মোসলেউদ্দিন পাকিস্তান অথবা ইন্ডিয়ায় রয়েছে বলে তথ্য ছিল। যোগাযোগের পর ইন্ডিয়া সরকার জানিয়েছে মোসলেউদ্দিন তাদের দেশের নেই। কিন্তু পাকিস্তান রেসপন্স করেনি। আবদুর রশিদের সম্ভাব্য অবস্থান ফ্রান্স, ইতালি, লিবিয়া, থাইল্যান্ড অথবা ইউকে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শফিকুল ইসলাম ডালিমের অবস্থান চায়না, ইউকে, কেনিয়া লিবিয়া অথবা থাইল্যান্ডে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব দেশের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুরও তার পরিবারকে হত্যার সঙ্গে জড়িত খুনিদের মধ্যে যারা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গিয়েছিল তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনমন্ত্রীকে প্রধান করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছিল সরকার। সেই ট্রাস্কফোর্সে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ট্রাস্কফোর্সের সদস্য। মূলত পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে কে কোথায় অবস্থান করছে এর তথ্য বের করার পর তা ট্রাস্কফোর্সকে জানানো হয়েছে। ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরোয়ানার নথিও পৌঁছে দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশের কাছে। এ বিষয়ে এখন ট্রাস্কফোর্স কাজ করছে। এখন তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি গঠিত ট্রাস্কফোর্সই তদারকি করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে উভয় দেশে ‘ল ফার্ম’ নিয়োগ করা হয়েছে ।

২০১০ সালের ২৮ মার্চ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীকে সভাপতি করে এ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।২০১৪ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান সরকার নতুনভাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ওই টাস্কফোর্সটি পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত টাস্কফোর্স ইতোমধ্যে একাধিক সভায় মিলিত হয়েছে এবং জাতির পিতার হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের ইতোমধ্যে স্থাবর সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের ছবি সম্বলিত তথ্য প্রেরণপূর্বক তাদের অবস্থান চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন সফরের সময় অনুরোধ জানান তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এর তিন মাস পর, অর্থাৎ ২৭ মে মার্কিন আইনি পরামর্শক সংস্থা স্কাডেন এলএলপিকে রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনার কাজে যুক্ত করা হয়। সংস্থাটির পক্ষে মামলার তদারক করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাবেক আইনি পরামর্শক গ্রেগরি ক্রেইগ। এরপর বিষয়টি নিয়ে তারা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন মার্কিন অ্যাটর্নি জন স্টুয়ার্ট ব্রুসের সঙ্গে। পাকিস্তানে পলাতক এক খুনির বিষয়ে জানতেও পাকিস্তান দূতাবাসকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজ পরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল খুনি সেনাসদস্যরা। ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত এই হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রাণ হারান সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের, ও কর্নেল জামিল। ইতিহাসের এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে সেদিন আরও প্রাণ দিয়েছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, ভগ্নিপতি আবদুল রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ রিন্টু খানসহ অনেকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। বঙ্গবন্ধুর তদানীন্তন এপিএস মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। সিআইডির তৎকালীন এএসপি আবদুল কাহার আকন্দ মামলাটি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট (নং ৭) দাখিল করেন ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি। চার্জশিটে ২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে ১১ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন জজ কোর্ট থেকে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ে ১৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর উচ্চ আদালত থেকে ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৩ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ২০১০ সালে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড (ফাঁসি কার্যকর) করা হয়। ২০০১ সালে এক আসামি জিম্বাবুয়েতে মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানা যায়। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল রেডনোটিশধারী আসামি লে. আবদুল মাজেদ করোনার কারণে ভারতের কলকাতায় আত্মগোপনে থাকার পর দেশে ফিরলে ফাঁসি কার্যকর হয়।

এর আগে ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে, পলাতক খুনিদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করা হয়। এরআগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর ’বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা যাবে না’ মর্মে তৎকালীন সরকারের ’ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাতিল করে এই খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা ৫ আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকরে আপিল বিভাগের ’ক্লিয়ারেন্স’ নিশ্চিত হয়ে গেলে আসামিদের শেষ আইনি আশ্রয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। দণ্ডাদেশ কার্যকর হওয়া আসামিরা হচ্ছে- সাবেক লে. কর্নেল ফারুক রহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ (অর্টিলারি), শাহরিয়ার রশিদ খান, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) এবং সাবেক মেজর বজলুল হুদা। বজলুল হুদাকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে সরকার ব্যাংকক থেকে এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাবেক লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে (ল্যান্সার) দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদ্য অবসর নেয়া সিআইডি এডিশনাল ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ জানিয়েছেন, ঘটনার ২১ বছর পর হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার পর বিভিন্ন সরকারের আমলে অনেক আলামত নষ্ট করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও দীর্ঘ সময় পর অক্লান্ত পরিশ্রম করে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ১শ’ দিনের মধ্যে মামলা তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে খোদ তদন্তকারী কর্মকর্তা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছিল। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসামি বজলুল হুদাকে ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খুনিদের দেশে ফেরাতে রাষ্ট্রীয় এবং আইন অনুযায়ী প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে খুনি রাশেদকে মুজিববর্ষের মধ্যেই ফেরত আনার আইনি প্রক্রিয়া চলছে। কানাডা সরকারের সঙ্গে নূর চৌধুরীকে কীভাবে আনা যায়—সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। অবস্থান নিশ্চিত হলেই তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (অব.) ভারতে আটক থাকলেও আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

ওসি প্রদীপের ক্রসফায়ার আয় ২০০ কোটি টাকা!

চট্রগ্রাম প্রতিনিধিঃ

২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর টেকনাফ থানায় যোগ দেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তার যোগদানের পরপরই স্বপ্নের সেই মেরিন ড্রাইভ সড়ক পরিণত হয় ‘ক্রসফায়ারের’ আতঙ্কময় এলাকা হিসেবে।

গেল দুই বছরে শুধু মেরিন ড্রাইভেই শতাধিক লাশ ফেলেছেন প্রদীপ। মানুষের রক্তে তিনি এমনই আসক্ত হয়েছিলেন- প্রতিদিন মাদক নির্মূলের নামে ক্রসফায়ার করে রক্তের ঘ্রাণ নিতেন ভয়ঙ্কর কিলার টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তার ক্রসফায়ারের রোষানল থেকে শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেনি মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, তাদের সাবেক সহকর্মী মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানও। যার হত্যার ঘটনায় প্রদীপরাজ্যেরও পতন হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুধু টেকনাফেই গত ২২ মাসে প্রদীপের আমলে তার হাতে ১৪৪টি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মারা গেছে ২০৪ জন। তাদের অর্ধেকের বেশি লাশ পড়েছিল স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভে। যারা তার হাতে মারা গেছে, তাদের পরিবারগুলোও বর্তমানে নিঃস্ব হয়ে গেছে। যাকে ক্রসফায়ার করা হতো, তাকে ক্রসফায়ারের আগে অন্তত ১০ থেকে ১২ দিন থানা হাজতে রাখা হতো। এমন ঘটনাও রয়েছে— মাসের পর মাস হাজতেই রাখা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে থানা হাজতে থাকা ব্যক্তির পরিবার পরিজনের কাছ থেকে ক্রসফায়ার না দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আদায় করা হতো লক্ষ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি স্বর্ণালংকার। কিন্তু শেষ সম্বল পর্যন্ত প্রদীপের হাতে তুলে দিয়েও বাঁচতে পারেনি অনেকেই।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর গণমাধ্যমে বলেন, দীর্ঘজীবনে অনেক পুলিশ অফিসার দেখেছি। কিন্তু টাকার জন্য রক্তের ঘ্রাণ নেওয়ার অফিসার দেখি নাই। ক্রসফায়ারের নামে মানুষ খুন করা ছিল ওসি প্রদীপের নেশা। টেকনাফে তার কর্মজীবনে অন্তত দুই শত কোটি টাকা এই ওসি প্রদীপ নিয়ে গেছে।

নুরুল বশর আরও বলেন, যদি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা টেকনাফের হাতেগোনা ৫-৬ জন লোককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাহলে তার ক্রসফায়ার ও চাঁদাবাজির লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এর মধ্যে রয়েছেন টেকনাফের দুই জন বিখ্যাত গরু ব্যবসায়ী। এদের একজন টেকনাফ সদরের গুদারবিল এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু ছৈয়দ। অপরজন সাবরাংয়ের ৫নং ওয়ার্ডের আছারবনিয়ার ইউপি সদস্য শরীফ প্রকাশ শরীফ বলি। এই দুই গরু ব্যবসায়ী মিয়ানমার থেকে গরু এনে টেকনাফ হয়ে বিক্রি করত চট্টগ্রামে। আর গরু বিক্রির টাকা চট্টগ্রামে বুঝে নিতো ওসি প্রদীপের লোকজন। পরে টেকনাফের ক্রসফায়ারের চাঁদাবাজির টাকা জমা হতো দুই মেম্বারের হাতে। এভাবে চলেছে প্রদীপের ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মত আটক ও ক্রসফায়ারের হুমকি বাণিজ্য।

এদের পাশাপাশি রয়েছে স্বর্ণ কেনার আরেক মহাজন। যার নাম চট্টগ্রামের সজল ধর। যার কাছে প্রদীপের কোটি কোটি টাকার স্বর্ণালংকার বিক্রি হতো। যেসব মাদক ব্যবসায়ীদের ঘরে অভিযান হতো বা যাদের হাজতে আটকে রাখা হতো তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা আদায়ের পাশাপাশি আদায় করা হতো স্বর্ণলংকার। ওই স্বর্ণালংকার যেত সজল ধরের কাছে।

একইভাবে টাকা আদায়ের আরেক মেশিন ছিল টেকনাফ কমিউনিটি পুলিশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল হোসাইন। এই নুরুল হোসাইন প্রতিনিয়ত পুলিশের হাতে আটক আসামিদের পরিবারের স্বজনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করতো লক্ষ লক্ষ টাকা। জানা গেছে, নুরুল হোসাইন গত ২৭ জুলাই সেন্টমার্টিন থেকে আটক করা পূর্বপাড়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে মাছ ব্যবসায়ী জুবাইরকে ক্রসফায়ার থেকে বাঁচানোর হুমকি দিয়ে জুবাইরের ভাই ইউনুচ থেকে দুই দফায় ওসি প্রদীপের নাম ভাঙিয়ে ১০ লাখ টাকা নেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) পর্যন্ত জুবাইরকে থানা হাজতে রেখে দেয় পুলিশ। পরে দালাল নুরুল হোসাইনের বিরুদ্ধে উপজেলা কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন স্থানে টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করে আটককৃত জুবাইয়ের ভাই ইউনুচ।

সূত্রমতে, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গত ২৪ জুলাই রাতে উখিয়ার কুতুপালং গিয়ে মৌলভি বখতিয়ার নামের একজন ইউপি সদস্যকে ধরে নিয়ে যান। এছাড়া একই অভিযানে আটক করে তাহের নামের আরো একজন রোহিঙ্গাকে। এক দিন পর দু`জনের ভাগ্যে জোটে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, মৌলভি বখতিয়ারের ঘর থেকে ১০ লাখ নগদ টাকা এবং ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, ঘটনার পর একটি বিশেষ সংস্থার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে নিহত মৌলভি বখতিয়ারের স্ত্রী জানিয়েছেন, সেই রাতে ওসি প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে পুলিশি অভিযানে নগদ ৫১ লাখ টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মৌলভি বখতিয়ারের এক ছেলেকে ডেকে নিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় আরো বিপুল অঙ্কের টাকা। অর্থ স্বর্ণালংকার সব হাতিয়ে নিয়ে ইউপি সদস্য বখতিয়ারকে দেওয়া ক্রসফায়ার।

সূত্র আরও জানায়, টেকনাফের হোয়াইক্যং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সহসভাপতি মুফিদ আলমকে ক্রসফায়ারের নামে ধরে নিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করা হয়। একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাকের আলমকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় ২০০টি ইয়াবা দিয়ে।

এদিকে গত ২২ মাসে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ইয়াবা মামলা ও ক্রসফায়ারের হুমকি বাণিজ্যের আপাত অবসান ঘটে ৩১ জুলাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে তার কিলিং মিশনের অন্যতম সহযোগী ইন্সপেক্টর লিয়াকত কর্তৃক গুলি করে হত্যার ঘটনায়।

এই ঘটনায় আদালতের নির্দেশমতে গত বুধবার (৫ আগষ্ট) রাতে ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি ও ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২নং আসামি করে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হল এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এসআই টুটুল ও কনস্টেবল মো. মোস্তফা। এই মামলার সূত্র ধরে চট্টগ্রাম থেকে আটক হয় বহু বির্তকিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। পরে জামিন না মঞ্জুর করা হয় ওসি প্রদীপসহ এই মামলার সাত আসামির।

এসব বিষয় নিয়ে কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যদি ঘটনার পর কোন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করত তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হতো।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার পর কক্সবাজারের এই পুলিশ সুপার গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘শামলাপুরের লোকজন ওই গাড়ির আরোহীদের ডাকাত সন্দেহ করে পুলিশকে খবর দেয়। এই সময়ে পুলিশ চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গাড়ির আরোহী একজন তার পিস্তল বের করে পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ওই ব্যক্তি মারা যান।’

পুলিশ সুপার তখন আরও জানিয়েছিলেন, ‘এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। দুজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ পিস্তলটি জব্দ করেছে। এ ছাড়া গাড়িতে তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা, কিছু গাঁজা এবং দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেন।’

পুলিশ সুপারের এই দাবি নিয়ে তখনই সন্দেহ তৈরি হয় বিভিন্ন মহলে।সূত্র : চট্টগ্রাম প্রতিদিন।

প্রতারক শাহেদের সুন্দরী রক্ষিতা ছিল যারা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এক জীবনে কোনো ব্যক্তি এত প্রতারণা করতে পারে তা অবিশ্বাস্য! বহুরূপী শাহেদ তার সাম্রাজ্য শাসনে ব্যবহার করেছেন সুন্দরী নারীদেরও।

শাহেদের রক্ষিতা হিসেবে কাজ করে এমন পাঁচজন সুন্দরী নারীর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। এর মধ্যে তিনটি নাম ঘুরে ফিরে উঠে আসছে। তারা হলেন- তরুণী লিজা, সাদিয়া ও হিরা মণি।

শনিবার (১১ জুলাই) দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে। খবরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রতারণায় শাহেদ করিম সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করত। শাহেদ তরুণীদের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে কাজ বাগিয়ে নিত। অনেক সময় সরবরাহকারীদের দিয়ে কাজ করিয়ে বিল দিতেন না।

লিজা, সাদিয়া ও হিরা মণির মতো অন্তত চার-পাঁচ তরুণী শাহেদের হয়ে কাজ করত। এমন অভিযোগের বিষয়ে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি।

এদিকে, শাহেদের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অফিস দখলে রাখা, আর মাসের পর মাস ভাড়া বকেয়া রাখার অভিযোগ রয়েছে রিজেন্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে। মিরপুরে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে এখনো অর্ধকোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি ভবন মালিকের। আর উত্তরায় রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের ভাড়া বকেয়া রয়েছে ৮ মাসের।

উত্তরা শাখা সিলগালা করে দেয়ার পর রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখাও এখন বন্ধ। হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় ঝুলছে তালা। চলে গেছেন রোগীরা। শাখার প্রধান নির্বাহী রাশেদসহ অন্য কর্মকর্তারাও হাসপাতাল থেকে লাপাত্তা।

এদিকে, উত্তরায় রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয় ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে নাম ভাঙান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের। নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল হিসেবে পরিচয় দেন মোহাম্মদ শাহেদ, এমন অভিযোগ ভবন মালিকের।

জানান, চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও দখলে রেখেছে রিজেন্ট গ্রুপ। বকেয়া রয়েছে ৮ মাসের ভাড়া। টাকা চাইলে দেয়া হতো হুমকি।

বাড়ির মালিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়েছেন। এবং উনি যখন আসে তখন সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে কয়েকজন থাকে।

সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দেয়া রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. শাহেদের বাবা সিরাজুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) রাতে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তবে বাবার মরদেহ নিতে যাননি শাহেদ কিংবা পরিবারের কেউ।

ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ৪ জুলাই সিরাজুল ইসলামকে আমাদের এখানে ভর্তি করান শাহেদ। তখন আমাদের বলা হয়েছিল তার করোনা নেগেটিভ। কিন্তু লক্ষণ থাকায় আমরা পরীক্ষা করে পজিটিভ পাই। শাহেদের বাবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। তার নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য জটিলতা ছিল।

ডা. আশীষ কুমার আরও বলেন, শাহেদকে আমি বলেছিলাম, যেহেতু আপনার হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড, তাই রিজেন্টে নিয়ে যান। তখন তিনি তার হাসপাতালে কোনও সার্ভিস না থাকার কথা জানান।

এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শাহেদের স্ত্রীর ফোন নম্বরে মারা যাওয়ার খবর জানান। পরে দুজন ব্যক্তি এসে মৃতদেহ নিয়ে যান। দুজনের কেউই তাদের পরিবারের সদস্য নন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শাহেদ বা তার প্রতিষ্ঠানের কাউকে খুঁজে না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে। সমস্যা এড়াতে তারা জিডি করেছে।

এ বিষয়ে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, আমরা শুরুতে ভুয়া টেস্টের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু এখন দিন যতই যাচ্ছে দেখছি অসংখ্য জঘন্য অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল শাহেদ। যাদের সঙ্গে তার ব্যবসা ছিল, তাদের সঙ্গেই প্রতারণা করেছে। অভিযানের পর অসংখ্য মানুষ আমাকে কল করে তার প্রতারণার ফিরিস্তি তুলে ধরছে। পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তার থেকে পদ্মাসেতু প্রকল্পের জন্য নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে সাপ্লাই দিয়ে আর টাকা দেয়নি। সিলেটের জৈন্তাপুর থেকে একজন কল করে জানিয়েছে, তার থেকে বালু এনে সাপ্লাই দিয়ে সে টাকা আর পরিশোধ করেনি। এছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ ও বদলির কথা বলে কোটি কোটি টাকা সে হাতিয়ে নিয়েছে। অবাক করা বিষয় হল পুলিশের এসপি পদমর্যাদার একটি বদলির জন্যও সে প্রতারণা করেছে।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লাহ বুলবুল গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সাধারণত এ ধরনের অভিযান পরিচালনার আগে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে গোয়েন্দা তদন্ত করি। এই অভিযানের আগেও আমরা টানা চার-পাঁচদিন তদন্ত করেছি। আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল, হাসপাতালটিতে পিসিআর মেশিন না থাকার পরেও টেস্ট করে রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে। বিনিময়ে নেয়া হচ্ছে টাকা। এরপর কিছু ভুয়া পরীক্ষার প্রমাণ আমরা পাই। কিছু সার্টিফিকেট আমাদের হাতে আসে সেগুলো আইইডিসিআরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। কিন্তু সেখানে এসব রিপোর্টের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। মূলত এ দু’টি অভিযোগ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করলেও পরে তার প্রতারণা দেখে বিস্মিত হই।

করোনা নিয়ে যতো প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

করোনা মহামারিকে ঘিরেও সক্রিয় নানা প্রতারক চক্র। করোনা পরীক্ষা, চিকিৎসা, প্লাজমা দান, করোনা চিকিৎসক, ওষুধ, রোগী সেজে প্রতারণা করে আসছে এসব চক্র। এর বাইরে নকল সুরক্ষা সামগ্রী, স্যানিটাইজার, মাস্ক নিয়েও আরেক শ্রেণির চক্র প্রতারণা করছে। সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে প্রতারণা করে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ। প্রতারক চক্রের কাছে টাকা খুঁইয়ে হয়রানি আর ভোগান্তির শিকার হয়েছেন অনেকেই। সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জালে ধরা পড়েছে এ ধরনের চক্রের অনেক সদস্য।  
করোনা পরীক্ষায় প্রতারণা: সোমবার করোনা ডেডিকেটেড রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় এলিট ফোর্স র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে করোনা নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের নানা প্রতারণার বিষয় উঠে এসেছে।

হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা না করেই রোগীদের রিপোর্ট প্রদান, রোগীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করে আসছিল। বিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও অর্থ  হাতিয়ে  নেয়ার পাঁয়তারা করছিলো হাসপাতালটি। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠানটির দু’টি শাখা থেকে সাতজনকে আটক করে এবং অসংখ্য ভুয়া রিপোর্টের কাগজ, বিলসহ নানা অনুষঙ্গ জব্দ করা হয়েছে। গতকাল হাসপাতালটির দুটি শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এদিকে করোনা পরীক্ষা নিয়ে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা করেছে এমন এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি’র তেজগাঁও ডিভিশন। তারা হলেন- হুমায়ুন কবির। এই দম্পতির নেই কোনো নমুনা সংগ্রহের বৈধ অনুমতি। স্যাম্পল পরীক্ষার ল্যাবও ছিল না।  শুধুমাত্র একটি কম্পিউটারকে পুঁজি করে অনলাইনে দুটি সাইট খুলে করোনা রোগীদের টার্গেট করতেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে কোথাও ফেলে দিতেন সেই নমুনা। পরে বাসায় এসে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আদলে হুবহু করোনার সার্টিফিকেট তৈরি করে ইচ্ছামতো পজেটিভ নেগেটিভ রেজাল্ট তৈরি করে রোগীর মেইলে পাঠিয়ে দিতেন। বিনিময়ে তারা রোগীর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতেন। প্রতারণার শিকার হয়ে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিএমপি’র তেজগাঁও ডিভিশন তদন্ত করে এর সত্যতা পায়।
প্লাজমা সহায়তা প্রতারণা: প্রায় দুই লাখ সদস্যের ফেসবুক গ্রুপ ‘বাংলাদেশ প্লাজমা ব্যাংক’। গ্রুপটিতে প্লাজমা সাহায্যপ্রার্থী ও দাতারাই মূলত সদস্য। এই গ্রুপে প্লাজমা সহায়তা চেয়ে বেশকিছু সদস্য প্রতারিত হয়েছেন। গ্রুপ এডমিন এমন ২২টি মোবাইল নম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেন। তদন্ত করতে গিয়ে প্লাজমা দানের কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেয়া চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)। ডিবি জানিয়েছে, প্লাজমা প্রতারণা চক্রের সদস্যরা প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে করোনা রোগীর জন্য প্লাজমার সন্ধান করা ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করে। তারপর তারা নিজেদেরকে করোনা মুক্ত দাবি করে প্লাজমা দানের প্রস্তাব করে। পরে প্লাজমা সাহায্যপ্রার্থীদের কাছে তারা যাতায়াত খরচ, খাবার দাবারের জন্য অর্থ দাবি করে। অর্থ নেয়ার জন্য তারা একটি বিকাশ নম্বর দেয়। সাহায্য প্রার্থীরা অর্থ পাঠানোর পর প্রতারক চক্রের সদস্যরা মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দেয় অথবা সাহায্যপ্রার্থীর মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেয়। ডিবি জানিয়েছে, প্লাজমার নামে প্রতারণা করে এমন অন্তত ছয়টি চক্রকে তারা শনাক্ত করেছেন। এসব চক্র অসহায় রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে যাদের দুর্লভ নেগেটিভ রক্ত। যারা কোথাও প্লাজমা দাতা খুঁজে না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন এমন রোগীদের টার্গেট করে। প্রতারকরা প্রথমে সাহায্যপ্রার্থীর কাছে জানতে চায় তাদের অবস্থান কোথায়। অবস্থান জানার পর প্রতারকরা তাদের অবস্থান আরো দূরে কোথাও জানায়। সেখান থেকে আসা-যাওয়ার খরচ, খাবারের টাকা বাবদ সাহায্যপ্রার্থীর কাছে টাকা দাবি করে। এভাবে পার্টির অবস্থা বুঝে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে।
করোনা আক্রান্ত মা ফারজানা ইয়াসমিনের জন্য প্লাজমা সহায়তা চেয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন রুশনাল শাহ আদিব। মাকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মতে শেষ ভরসাই ছিল প্লাজমা। পরিচিত কারো কাছেই প্লাজমা সহায়তা না পেয়ে তিনি বি নেগেটিভ প্লাজমা চেয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এরপরই প্রতারক চক্রের সদস্য আদিবের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। এক প্রতারক তাকে প্লাজমা দেয়ার নিশ্চয়তাও দেয়। তাই আদিব ওই প্রতারককে টাকা দেন। কিন্তু ওই প্রতারক টাকা নেয়ার পর মোবাইল বন্ধ করে রেখে দেয়। বার বার কল করে আদিব তার ফোন সুইচ অফ পায়। এদিকে বাবার জন্য প্লাজমা চেয়ে খোদ এক চিকিৎসকও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি হলেন- নাফিসা  তাবাসসুম। প্লাজমা চেয়ে তিনিও ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। তখন প্রতারকরা সেই পোস্ট দেখে টাকা পাঠানোর কথা বলে। টাকা পাঠানোর পর আর সেই প্রতারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কার্ড প্রতারণা: একটি বিশেষ কার্ড ‘ভাইরাস শাট আউট’ গলায় ঝুলিয়ে রাখলে এক মাস করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যাবে বলে প্রতারণা করে আসছিলো একটি চক্র। ঢাকা জেলা প্রশাসন ও ওষুধ অধিদপ্তর  অভিযান চালিয়ে এমন বেশকিছু কার্ড উদ্ধার করেছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। পরে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট মাহনাজ হোসেন জানান, কার্ড ঘাড়ে থাকলে এক মাস করোনামুক্ত থাকা যাবে- এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্ষতিকর চিকিৎসা সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছিল। এটা এক ধরনের প্রতারণা। তিন জানান, প্রতিটি ভাইরাস শাট আউট কার্ড ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করতো তারা। অথচ এই কার্ড করোনা প্রতিরোধে সক্ষম নয় উল্টো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কার্ডে এক ধরনের কেমিক্যাল উপাদান ক্লোরাইন ডাই অক্সাইড থাকে। ম্যাজিস্ট্রেট মাহনাজ হোসেন আরো বলেন, এটি আন্তর্জাতিক  চক্রান্তের অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। একইভাবে ঢাকার উত্তরা থেকে আরো বেশকিছু ভাইরাস শাট আউট কার্ড জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অকার্যকর কার্ড কিনে এমন শত শত মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার আশায় অনেকেই কার্ড কিনেছেন কিন্তু সেটি তাদের কোনো কাজে আসেনি।
প্রণোদনা পেতে রোগী সেজে প্রতারণা: এদিকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাওয়ার জন্য মিথ্যা করোনা রোগী সেজে কিছু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি  প্রণোদনা পাবার জন্য করোনা রোগীর জাল সনদ নিয়ে ধরা পড়েছেন রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালের কর্মচারী কুতুবে রাব্বানী। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে তার অফিসকে জানান। সে অনুযায়ী কাগজপত্র ঠিক করে ছুটিতে যান। কিন্তু জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) তদন্ত করে জানতে পারে তিনি করোনা আক্রান্ত হননি। পজেটিভের নকল সনদ জাল তৈরি করে নিজেই মুগদা জেনারেল হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. মৌসুমি সরকারের স্বাক্ষর জাল করেন। এ নিয়ে মুগদা থানায় তার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা হয়। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে আছেন।
এদিকে এসব প্রতারণার বাইরে দেশে করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই নকল সুরক্ষা সামগ্রী, হ্যান্ডস গ্লাভস, স্যানিটাইজার তৈরি করে এক শ্রেণির প্রতারকরা প্রতারণা করে আসছে। এ ছাড়া করোনা রোগের টিকা ও ওষুধের কথা বলেও কেউ কেউ প্রতারণা করে আসছে।

মোহাম্মদ নাসিমের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বাবা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হওয়ার কারণে কারাগারে প্রাণ দিতে হলো ঘাতকের বুলেটে। আর সন্তানও ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বিভিন্ন আন্দোলনে রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পিতার মতো তিনিও দেশের রাজনীতিতে একজন উজ্জল নক্ষত্র।

বলছি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় নেতা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন শহীদ এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিমের কথা। ছাত্রজীবন থেকে গণমানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন মোহাম্মদ নাসিম। নিজের ছাত্র রাজনীতির সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, বুঝে অথবা না বুঝে যে কারণেই হোক আমি তখন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতাম। ১৯৬৭ বা ৬৮ সালে পাবনায় এক জনসভা শেষে বঙ্গবন্ধু আমাদের বাসায় আসলেন। খাওয়া-দাওয়ার এক পর্যায়ে আমাকে খুঁজলেন, বললেন-‘নাসিম কোথায়? আমি ভয়ে ভয়ে তার কাছে গিয়ে দাঁড়াই। তখন তিনি অত্যন্ত স্নেহ করে আমার কান ধরে বললেন, ‘তুই মনসুর আলীর ছেলে হয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করিস।’ আমি ভয়ে ভয়ে বললাম- চাচা, আমি এখন থেকেই ছাত্রলীগ করব। এরপর আমি ছাত্রলীগ করি। যুবলীগ করেছি। এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে যাচ্ছি।

ছাত্ররাজনীতি ছাড়ার পরে যুবলীগের রাজনীতি করলেও ১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মোহাম্মদ নাসিম। ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন।

২০০২ সালের সম্মেলনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ছিলো একটি। আর ওই সম্মেলনে বিভাগওয়ারী সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিমকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ দায়িত্ব পালনে তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন।

পরে ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এরপর টানা তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন।

রাজনৈতিক মাঠে সুবক্তা হিসাবে পরিচিত মোহাম্মদ নাসিম ভোটের রাজনীতিতেও সফল হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ- ১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে পাঁচবার বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তাকে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়।

২০১৪ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেওয়া মামলার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। ওই নির্বাচনে তার সন্তান তানভীর শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিমকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। বিজয়ী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজনৈতিক জীবনে রাজপথে সবসময়ই সক্রিয় ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। সরকার বিরোধী আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন সময় নির্যাতন সইতে হয়েছে তাকে। রোষানলের শিকার হয়েছিলেন ১/১১ সরকারেরও। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জাতির জনকের রাজনীতির প্রশ্নে তিনি ছিলেন সবসময়ই আপোষহীন। রাজনৈতিক দুরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার কারণে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নয় দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাংলাদেশ স্পেশালাজড হাসপাতালে ভর্তির পর করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে তার। এরপর তিনি ব্রেন স্ট্রোক করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. রাজিউল হকের নেতৃত্বে অপারেশন হয়। তার চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডাক্তার কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। পরে নেয়া হয় ডিপ কোমায়। ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে আজ শনিবার সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক।

এবার মাস্ক দুর্নীতির অভিযোগে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ভুয়া মাস্ক তৈরি করে, নিজেরাই বিভিন্ন জাল কাগজ তৈরি করেছিল কেএন-৯৫ মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কেএন-৯৫ মাস্ক আমদানি করতে গিয়ে এরকম লাগামহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। তিনি দলের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। ভুয়া মাস্ক আমদানি করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলার অভিযোগ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় দায়েরকৃত মামলা তদন্ত করছে পুলিশ। মামলাটি দায়ের করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত ১৮ই এপ্রিল ৫০ হাজার কেএন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের জন্য মেসার্স এলান কর্পোরেশনের সত্ত্বাধিকারী আমিনুল ইসলামকে কার্যাদেশ প্রদান করে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার। ১৩ই মে মাস্কের সিই মার্কিং সনদ, ফ্রি সেল সার্টিফিকেট ও মাস্কের টেস্ট রিপোর্টসহ মাস্ক খালাসের জন্য আবেদন করেন আমিনুল ইসলাম।

গত ১৮ই মে ঢাকা শুল্ক বিভাগ থেকে মাস্কগুলো খালাসের জন্য অনাপত্তিসূচক সনদও দেয়া হয় তাকে।

কিন্তু পরবর্তীতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানতে পারে, অনাপত্তি নেওয়ার জন্য এলান কর্পোরেশন যেসব কাগজপত্র দেখিয়েছিলো তা ভুয়া। কেন্দ্রীয় ঔষধাগার যাচাই-বাছাই করে দেখতে পায়  ফ্রি সেল সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন কাগজপত্র প্রতিষ্ঠানটি নিজেরাই তৈরি করেছে। এটা ইস্যু করার কথা ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটির। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার কর্তৃপক্ষ আইএসও সার্টিফিকেট ইস্যুকারী জার্মান প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে পায়, এলান কর্পোরেশনের দেওয়া সার্টিফিকেটটি চীনের অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা। অথচ এলান কর্পোরেশনের দাখিল করা কাগজপত্রে লেখা ছিল চীনের জিয়ামেন টেকনোলজি নামের ভিন্ন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। এমনকি এলান কর্পোরেশন কেএন-৯৫ মাস্ক আমদানির মাস্কটির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে সনদ জাল করেছে। অসৎ উদ্দেশ্যে ভুয়া মাস্ক সরবরাহ করছিলেন আমিনুল ইসলাম। এরপরই গত ২৭শে মে মাস্ক আমদানির জন্য অনাপত্তিসূচক সনদপত্রটি বাতিল করে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স এলান কর্পোরেশন জাল ও বানোয়াট কাগজপত্রাদি দাখিলের মাধ্যমে করোনাভাইরাস জনিত (কোভিড-১৯) রোগের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের ব্যবহারের জন্য কেএন-৯৫ মাস্ক আমদানি করে জনজীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম বাদি হয়ে এলান কর্পোরেশনের স্বত্ত্বাধিকারী, আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিনের বিরুদ্ধে গত ২৯শে মে বনানী থানায় মামলা করেন। এতে ৬০/এ পুরানা পল্টনের মেসার্স এলান কর্পোরেশনের স্বত্ত্বাধিকারী মো. আমিনুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতার বাড়ি স্থায়ী চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বারদোনার গোলাম মহিউদ্দিন পাড়ায়। এ বিষয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আযম মিয়া বলেন, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত চলছে। সেইসঙ্গে আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টাও অব্যাহত আছে।

রূপগঞ্জে করোনা যুদ্ধের সফল ৩ নারী

নিজাম উদ্দিন আহমেদঃ
ঢাকার পাশ্ববর্তী শিল্পাঞ্চল খ্যাত রূপগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ জেলায় এ উপজেলাটির অবস্থান। এটি একটি জনবহুল এলাকা এবং এখানে রয়েছে নানা সমস্যা ও সম্ভাবনা। দেশব্যাপী করোনার ভয়াল থাবা শুরু হয়েছে তার মধ্যে হটস্পট হিসেবে পরিচিত
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ। করোনা সমস্যার সমাধান এবং সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসনের প্রধান তিন নারী কর্তা ব্যক্তি। রূপগঞ্জে করোনা যুদ্ধের সফল কর্তা ব্যক্তিরা হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফা খাঁন ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফারজানা আক্তার।

রূপগঞ্জে সফল করোনা যোদ্ধা হিসেবে মাঠে সক্রিয় হয়ে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের টেস্ট নিশ্চিত করা, আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলোশনে রাখা, রোগীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের পরিবার বাড়ি লকডাউন এবং আক্রান্তের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া, ত্রাণ বিতরণসহ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ সফলতার সাথে কাজ পরিচালনা করছেন তারা। পাশাপাশি নিজের বেতন ও বোনাসের টাকা করোনা ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য দান করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী আফিসার (ইউএনও) মমতাজ বেগম।

মোবাইল কোট পরিচালনা, বাজার এর দোকানদারদের মাল ন্যায্য মূল্যে বিক্রি নিশ্চিত করা, সাধারন মানুষকে সচেতন করা, গাউছিয়া মার্কেটের সামনে ঢাকা সিলেট-মহাসড়কে ৩ যুগ দখলে থাকা ফুটপাত উচ্ছেদ এর কাজটি করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফা খাঁন।
ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন কোয়ারেন্টিনে থেকেছেন। অবশেষে করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে আবারও মাঠে নেমেছেন তিনি। দেশের ক্রান্তিকালে নারী হয়েও এই তিনজনই রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছুটে গিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সমস্যার সমাধান করে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাদের এ দায়িত্ব পালনে মুগ্ধ রূপগঞ্জবাসী।

করোনাভাইরাস একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই ভাইরাস দ্রুত একজনের শরীর থেকে অন্য জনের শরীরে প্রবেশ করে। এ রোগের কোনো ওষুধ এখন পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি। সারা বিশ্বে অর্ধ কোটিরও উপরে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। মারা গেছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ। এমন অবস্থায় সেই অদৃশ্য দানব করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনেরে এই তিনজন কর্তাব্যক্তি সারাদিন বিভিন্ন স্থানে ছুটে বেড়াচ্ছেন। তাদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নেই কোনো ত্রুটি।  
এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ করে তারা ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, ঈদে জনসমাগম এড়াতে রূপগঞ্জে আবস্থান নিয়ে জনস্বার্থে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। রূপগঞ্জে মসজিদের বাইরে কোনো ঈদের জামাত হতে দেয়নি তারা। আগে থেকেই উপজেলা প্রশাাসন কঠোর অবস্থানে থাকায় রূপগঞ্জে কোথায় কোন ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় হয়নি।
 
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, সকলের সহযোগিতা ছাড়া করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব না। তাই সরকারি সকল নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। পাশাপাশি সকলকে নিজ গৃহে অবস্থান করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফা খাঁন বলেন, রূপগঞ্জবাসীর প্রতি অনুরোধ থাকবে বিনা কারণে যেনো কেউ ঘর থেকে বের না হয়। জীবনে বেঁচে থাকলে বহু ঈদ পাওয়া যাবে তখন আনন্দ হবে। এখন দেশের ক্রান্তিকালে আনন্দ নয়।

বাংলাদেশি পোশাক কারখানা মালিকের কান্না আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

করোনা ভাইরাসের তান্ডবে বিশ্বজুড়ে চলছে সংকটময় অবস্থায় কাটছে মানুষের জীবন। মানুষের চাহিদার মধ্যে খাদ্য হচ্ছে অন্যতম। কাজ নেই, খাবার নেই হাহাকার করছে কর্মজীবী মানুষ। বিশেষ করে গার্মেনস কারখানার কর্মজীবীরা বেতন বোনাস আটকিয়ে আছে। মহাসংকটে জীবন যাপন করছে তারা। করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর হঠাৎ করেই বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল, স্থগিত ও পাওনা টাকা আটকে দেওয়ায় বিপদে পড়ে দিশেহারা মোস্তাফিজ উদ্দিন নামে এক বাংলাদেশি পোশাক কারখানা মালিকের কান্না আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। অ্যাপারেল ইনসাইডারে এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ইউরোপ কিংবা আমেরিকা কোথাও থেকে ক্রেতারা টাকা না পাঠানোয় ঈদ সামনে রেখে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করতে না পেরে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ব্যাংকে তার ওই কান্নারত ছবিটিই অ্যাপারেল ইনসাইডারসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রকাশ পায়।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেড এলাকায় মোস্তাফিজ উদ্দিনের মালিকানাধীন কারখানা ডেনিম এক্সপার্টে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের বেতন-বোনাস দেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন এই কারখানা মালিক পাওনা টাকা আদায়ের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও সফল হননি। তিনি বলেন, বরাবরের মতো এবারও ঈদের আগে শ্রমিকদের হাতে বেতন-বোনাস আর ঈদ উপহার তুলে দেওয়ার তাড়না থেকে টানা ১০ দিনের বেশি বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে আসছিলেন। শেষ দিন সকাল ১০টায় ব্যাংকে বসেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। বিকাল ৩টার দিকে ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ইউরোপ কিংবা আমেরিকা কোনো দেশ থেকেই টাকা আসেনি। তাই আজকে আর কোনো লেনদেনের সুযোগ নেই।

 

এ কথা শোনার পর আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। আগের রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। বুধবার সকালে শেষ কর্মদিবসে শ্রমিকদের কী করে খালি হাতে বিদায় করব তা ভাবতেই আমার কান্না চলে আসে। কিছুক্ষণের জন্য নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।

মোস্তাফিজ বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকার গ্লোবাল ব্র্যান্ড গ্রুপ বা জিবিজির কাছে তার ছয় কোটি টাকার শিপমেন্ট হয়েছে। ফিলিপ গ্রিনের কোম্পানি আর্কেডিয়ার কাছে গেছে ২৫ কোটি টাকার পণ্য। পিকক নামের একটি ব্র্যান্ডের কাছেও প্রায় সমপরিমাণ টাকা বকেয়া পড়েছে। এভাবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিদেশি ক্রেতাদের কাছে প্রায় ৫৪ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। তিনি বলেন, হাতে গোনা দুই-চারটি কারখানা হয়ত এমন ধাক্কা সমলাতে পারবে। কিন্তু আমার মতো ছোট কারখানাগুলো কী করে টিকে থাকবে।

প্রায় দুই হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর কারখানা ডেনিম এক্সপার্টে প্রতি মাসে শ্রমিকের বেতন বাবদ খরচ হয় দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা। কর্মকর্তাদের বেতন, ইউটিলিটি চার্জ আর জমি ভাড়া মিলিয়ে এক মাসে খরচ হয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। আর উৎসব ভাতা হিসাবে দিতে হয় প্রায় এক কোটি টাকা।

করোনাভাইরাস সংকটে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরকার স্বল্প সুদের যে ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেখান থেকে ঋণ নিয়ে শ্রমিকের এপ্রিলের বেতন দিয়েছেন মোস্তাফিজ উদ্দিন। কিন্তু দীর্ঘ তিন মাস ক্রেতাদের কাছে বকেয়া জমে থাকায় ঈদের বোনাস দিতে গিয়ে সঙ্কটে পড়েন।

মোস্তাফিজ বলেন, প্রতি বছর ঈদে শ্রমিকদের হাতে উপহার তুলে দিই। তাদেরকে নিয়ে ভালো মানের হোটেলে একদিন বসে ইফতার করি। এবার এসব কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু ঈদ বোনাস থেকেও বঞ্চিত রাখতে হবে সেটা ভাবতে পারিনি। শেষ মুহূর্তে পরিচিত বন্ধু-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে তাদের হাতে বোনাস তুলে দিয়েছি।

২০০৯ সালে চট্টগ্রামে কারখানা বানিয়ে মাত্র কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি অর্জন করেন মোস্তাফিজ উদ্দিন। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ন্যায্য মজুরি, ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ভাতা ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি স্থাপন করে ইউরোপ আমেরিকার ক্রেতাদের নজরে আসেন।

বাংলাদেশি পোশাক শিল্পোদ্যোক্তা ও পশ্চিমা ক্রেতাদের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে গত পাঁচ বছর ধরে ট্রেড শো এবং ব্যবসায়ী সম্মেলন আয়োজন করে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন ‘ডেনিম মোস্তাফিজ’ নামে।

করোনায় মানব পাচারের নিরাপদ ঘাঁটি গাউছিয়া

রূপগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
করোনা আতংকের মধ্যেও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা-গাউছিয়ার চৌরাস্তার মোড়টি বর্তমানে মানব পাচারের নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে বলে সচেতনমহল মনে করছেন। প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে সরকারি নির্দেশনা (গণ পরিবহন বন্ধ থাকার নির্দেশ) অমান্য করেই চলছে হোন্ডা ও সিএনজিসহ ছোট পরিবহনে মানব পাচার। এতে করে করোনা মহামারি আকার ধারন করতে পারে বলে রূপগঞ্জবাসী মনে করছেন।
জানা যায়, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার গণ পরিবহন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত নির্দেশের কারনে বড় ধরনের গণ পরিবহন বন্ধ থাকলেও ছোট পরিবহনে দেদারছে মানুষকে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় পাচার করছে। এতে এসব অসাধু গাড়ি চালকরা অধিক আয় করতে পারলেও করোনা ঝুঁকিকে মহামারি আকার ধারন করার অন্যতম কারন বলে মনে করছেন সচেতনমহল। খোদ রাজধানী ঢাকা থেকেও মানুষ হোন্ডা ও সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহনে গাউছিয়া হয়ে বিভিন্ন জেলায় নির্বিঘেœ যাতায়াত করছেন। এক্ষেত্রে ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশকে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে প্রকাশে করোনা আতংককে মহামারি রূপ দিতে মানব পাচার চলায় জনমনে নানা আতংক বিরাজ করছে। এব্যাপারে ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, পাবলিক রাষ্ট্রীয় নির্দেশ অমান্য করছে। আমরা প্রশাসন আপ্রান চেষ্টা করছি। কিন্তু তাদের প্রতিরোধ করতে পারছিনা। তবে পুলিশের নীরব ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করছে। অনেকের মতে, এভাবে মানব পাচার হওয়ায় পুলিশের পকেট ভারি হচ্ছে।
এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে সচেতনমহল মনে করছেন।   

 

করোনার ওষুধ তৈরিতে এগিয়ে ৯ প্রতিষ্ঠান

ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও। এখন পর্যন্ত ৪৭ লাখ লোকের করোনা শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ১৩ হাজারের বেশি মানুষের। এ অবস্থায় করোনার ওষুধ তৈরিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের শতাধিক প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে এগিয়ে আছে ৯টি প্রতিষ্ঠান। চূড়ান্ত ট্রায়াল শেষ হলেই এসব ওষুধ যেকোন সময় বাজারে ছাড়ার অপেক্ষায়ও রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান আধানম ঘেব্রেয়েসুস জানিয়েছেন, করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে সবার চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে ৭ বা ৮টি প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে যে কেউই আগে করোনার ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারবে।

চলুন সেসব প্রতিষ্ঠান ও তাদের ভ্যাকসিনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিই:

মোদারনা ভ্যাকসিন

মার্কিন-ভিত্তিক মোদারনা থেরাপিউটিকস বলেছে যে, এটি সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনার জন্য এফডিএ (ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এর কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছে। ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে তার ভ্যাকসিন এমআরএনএ-১২৭৩ এর প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল পরিচালিত হয়েছে। আরএনএ ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে ৪৫ জন স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবীর উপর পরীক্ষা করা হয়েছে।, যাদের ২৮ দিনের ব্যবধানে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল।

এই ভ্যাকসিনটি মানুষের কোষের জন্য আণবিক নির্দেশনা বহন করে এবং ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার জন্য শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

এটি দ্বিতীয় ধাপে ৬০০ ব্যক্তির ওপর পরীক্ষা করা হবে। তাদেরকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ভাগের বয়স ৫৫ বছরের ওপরে।

নোভাভ্যাক্স ভ্যাকসিন

কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিন প্রস্তুতের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে মার্কিন কোম্পানি নোভাভ্যক্স ইনক। সম্পত্রি তারা মহামারির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরিতে ৩৮৮ মিলিয়ন ডলারের তহবিল পেয়েছে। নোভাভ্যাক্সের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রেসিডেন্ট ডা. গ্রেগরি গ্লেনের মতে, ভ্যাকসিন এনভিএক্স-কোভ২৩৭৩ আশাব্যঞ্জক ফলাফল দেখিয়েছে। বায়োটেক সংস্থা অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৩০ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর মানবিক পরীক্ষা পরিচালনা করবে। এরই মধ্যে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল পাওয়া গিয়েছে।

ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস

মার্কিন কোম্পানি ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস তাদের সান দিয়াগো ল্যাবে একটি ডিএনএ ভিত্তিক ভ্যাকসিন তৈরি করছে। জৈব প্রযুক্তি সংস্থা কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেইডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই) থেকে ৬.৯ মিলিয়ন ডলার অর্থ পেয়েছে তারা। প্লাইমাউথ সভা-ভিত্তিক বায়োফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা ৪০ স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রথম ধাপটি সম্পন্ন করেছে।

ভ্যাকসিন তৈরি শুরুর ৮৩ দিনের মধ্যে প্রথম ট্রায়ালটি সম্পন্ন করেছে তারা। পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপটি মে মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু করবে তারা। এই ধাপের পরীক্ষায় ৪০ জনের ওপর ভ্যাকসিন আইএনও-৪৮০০ প্রয়োগ করা হবে। এই পরীক্ষার ফলাফল জুনের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে এই কোম্পানি।

ফাইজার এবং বিএনটিইসিএইচ ভ্যাকসিন

মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী ফিজার কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরি করতে জার্মান সংস্থা বিএনটিইসিএইচ এর সঙ্গে কাজ করেছেন। দুটি সংস্থাই চারটি আরএনএ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করছে। তাদের ভ্যাকসিন বিএনটি১৬২ এমআরএনএ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে জার্মানিতে এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। চারটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন ৩৬০ জনের ওপর বিভিন্ন ডোজে প্রয়োগ করা হবে।

জনসন এবং জনসন ভ্যাকসিন

সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরিতে সফল হওয়ার পথে জনসন এন্ড জনসন। তারা অ্যাডেনোভাইরাস ভিত্তিক ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে এবং ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পরিকল্পনা করছে। সংস্থাটি এক বিলিয়ন ডোজ উৎপাদনের জন্য এরই মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছে। ভ্যাকসিন অনুমোদন হলে ২০২১ সালের শেষের দিকে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারবে বলে জানিয়েছে তারা। এবং এই ভ্যাকসিন ২০২১ সালের প্রথম দিকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহার করা যাবে বলেও আশা করছে জনসন এন্ড জনসন।

ক্যানসিনো বায়োলজিক্স

চীনা ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী ক্যানসিনো বায়োলজিকস ইনক কোভিড-১৯ এর জন্য একটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরি করছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে এগিয়ে থাকা ভ্যাকসিন হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে। সংস্থাটি বর্তমানে ভ্যাকসিনটি বিকাশের জন্য একটি অ-প্রতিলিপি ভাইরাল ভেক্টর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অ্যাডেনোভাইরাস টাইপ৫ ভেক্টরটিতে কাজ করছে। অ্যাড৫-এনসিওভি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা এপ্রিলে শুরু হয়েছে এবং ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ক্যানসিনো বায়োলজিক্স ইতিমধ্যে ইবোলার একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে।

সিনোভাক বায়োটেক

বেইজিংভিত্তিক সিনোভাক বায়োটেক কোভিড-১৯ রোগের জন্য ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছে। তারা ইতিমধ্যে প্রথম পর্বের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এর আগে প্রাণীর ওপর পরীক্ষায় ভ্যাকসিন সফল হয়েছে বলে জানায় কোম্পানিটি।

সংস্থাটি তাদের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের দুটি ভিন্ন ডোজ আটটি বানরের ওপর প্রয়োগ করেছিল। তাদের মধ্যে চারটি ভ্যাকসিনের উচ্চ মাত্রা দেওয়া হয়েছিল এবং অন্য চারটি কম ডোজ দেওয়া হয়েছিল। উচ্চ পরিমাণে ডোজ প্রাপ্ত বানরগুলো কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত ছিল এবং তাদের ফুসফুসে ভাইরাস চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে মিলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি সম্ভাব্য করোনভাইরাস ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিনটিকে কাজ করতে বিজ্ঞানীরা সাধারণ কোল্ড ভাইরাস (অ্যাডেনোভাইরাস) এর দুর্বল স্ট্রেন ব্যবহার করেছিলেন যা শিম্পাঞ্জিতে সংক্রমণ ঘটায়।

ইতিমধ্যে এই ভ্যাকসিন বানরের ওপর সফল হয়েছে এবং মানুষের ওপর ট্রায়াল দেয়া হয়েছে।

সানোফি ভ্যাকসিন

ফরাসি ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ সানোফি সম্প্রতি জানিয়েছে তারা ভ্যাকসিন তৈরিতে অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছে এবং উৎপাদনের পর ভ্যাকসিনের প্রথম চালানটি যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়া হবে। এরপর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে তারা জানিয়েছে বিশ্বের সকল জাতিকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে তারা।

মার্কিন কোম্পানি গ্লাক্সো স্মিথলাইন প্লাকের সঙ্গে মিলে ভ্যাকসিন তৈরি করছে সানোফি। তারা জানিয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা সম্পন্ন হবে এবং ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এই ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যাবে।

পাপিয়ার বিরুদ্ধে যেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে সিআইডি!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।এ তদন্তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে যা অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

সোমবার (৯ মার্চ) সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইমতিয়াজ আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পাপিয়ার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের যে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। কংক্রিট তথ্য-প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাপিয়ার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে তার স্বামী মতি সুমনের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে কিনা-জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, তদন্তকালীন এ বিষয়ে আমরা কিছু বলছি না। নাম তদন্তের স্বার্থে বলা উচিত হবে না।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন-পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ১১ হাজার ৯১ মার্কিন ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।

থাইল্যান্ডের ব্যাংকে পাপিয়ার নামে ৪ কোটি টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বাংলাদেশ ফাইন্যানসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তদন্তে যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া এ পর্যন্ত ৪ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করার তথ্য পেয়েছে। এই ৪ কোটি টাকা থাইল্যান্ডের ক্যাশিকর্ণ ব্যাংকে পাপিয়ার নামের একাউন্টে জমা আছে। এছাড়া আরো টাকা পাচার করেছেন কি না—সে বিষয়ে জোর তদন্ত চলছে।

এর পাশাপাশি পাপিয়ার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যানসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তার ব্যাংকের হিসাব নথিতে কত টাকা জমা আছে—এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছে রাষ্ট্রের তপশিলি ব্যাংকের সকল শাখায়।

অপরদিকে, পাপিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা তিন মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়েছে। এর আগে অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার পৃথক তিন মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীসহ চার জন ১৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান রুপি ও সাতটি মোবাইল ফোনসহ র্যা ব পাপিয়াকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পর দিন গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুট এবং ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার দুটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট ও কিছু বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে র্যাটব। এসব ঘটনায় র্যা ব পাপিয়ার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় একটি ও শেরেবাংলা নগর থানায় দুইটি মামলা দায়ের করে।

পাপিয়ার মুখে আমলা-এমপি ব্যবসায়ীসহ ৩০ জনের নাম

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ডেরায় যেতেন এমন ৩০ জনের নাম এসেছে তদন্তে। জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া তাদের অনেকের নাম বলেছে। ওয়েস্টিন হোটেল কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা সিসি টিভি ফুটেজ, পাপিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া গোপন ভিডিও থেকেও তাদের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। তালিকায় নাম আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত একটি তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাপিয়ার আস্তানায় নিয়মিত যেতেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীও আছেন তালিকায়। সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্য আছেন ১০ জন।

সরকারের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন ৫ জন। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী আছেন ৬ জন।

ছাত্রলীগের একজন সাবেক সভাপতি এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক একজন নেতার নাম আছে এই তালিকায়। টেন্ডারকাণ্ডে গ্রেপ্তার ঠিকাদার জি কে শামীমও নিয়মিত যেতেন সেখানে। ওই তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ একটি দপ্তর সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তার নামও এসেছে যিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কাজ করেন। সংসদের বিরোধী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম এসেছে যিনি শ্রমিক সংগঠনেরও নেতা। একজন টেলিভিশন টকশোর আলোচকের নামও এসেছে এই তালিকায়।

তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলান এমন মন্ত্রীর উপস্থিতির তথ্য মিলেছে। সেখানে যেতেন এমন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে একজন খুলনা বিভাগের। অন্য একজন বৃহত্তর রংপুরের। আরেকজন ময়মনসিংহ বিভাগের।
সংসদ সদস্যদের মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলার একজন, দিনাজপুর জেলার একজন, নীলফামারী জেলার একজন, রংপুর জেলার একজন, কুষ্টিয়ার একজন, মাগুরার একজন, ময়মনসিংহের একজন, নেত্রকোনার একজন, মানিকগঞ্জের একজন রয়েছেন।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে এফবিসিসিআই’র একজন সাবেক সভাপতি, একজন সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ নিট ডায়িং ওনার্স এসোসিয়েশনের একজন নেতা, একজন প্রতিষ্ঠিত জুয়েলারি ব্যবসায়ী, একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও একজন পাট ব্যবসায়ীর নাম এসেছে এই তালিকায়। তালিকায় নাম আসা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অনেক আগেই সাবেক হলেও তিনি এখনো সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচনে ভূমিকা রাখেন বলে আলোচনা আছে। এছাড়া সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সম্প্রতি পদ হারিয়েছেন। পরিবহন ব্যবসার সঙ্গেও তিনি জড়িত।

তালিকায় নাম আসাদের মধ্যে একজন সচিব এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। অন্য একজন সচিবের নাম এসেছে যিনি কৃষিভিত্তিক পণ্যনির্ভর একটি মন্ত্রণালয় সামলান। ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা একটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নাম এসেছে এই তালিকায়। তথ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা একটি মন্ত্রণালয়ের সচিবও আছেন এই তালিকায়। অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবও আছেন এই তালিকায়। পাপিয়াকাণ্ডের ছায়া তদন্তের দায়িত্বে থাকা র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল মানবজমিনকে জানান, পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, যুব মহিলা লীগ নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে গত ২২শে ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে আস্তানা তৈরি করে, নারী, মাদক অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জনের জন্য পাপিয়া রাশিয়া, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ থেকে সুন্দরী তরুণীদের নিয়ে আসতেন। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তার আস্তানায় আসা ব্যক্তিদের গোপন ভিডিও সংগ্রহ করে তা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়েরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। পাপিয়ার অপরাধ জগতের বিস্তারিত তথ্য জানতে দুই মামলায় স্বামী সুমনসহ পাপিয়াকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

পাপিয়ার ডেরায় যাওয়াদের তালিকা দীর্ঘ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নারী বাণিজ্যের মাধ্যমে টাকা মেশিনের সন্ধান পেয়েছিলেন শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। টাকার জোরেই নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি বাগিয়ে নিয়েছিলেন। অল্প দিনেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। দেশে-বিদেশে গড়েছেন বিপুল সম্পদ। রিমান্ডে থাকা পাপিয়া ইতিমধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন গোয়েন্দাদের। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একাধিক ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট  রয়েছে বলে তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, তিনি দেশে অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করে বিদেশে পাচার করেছেন। থাইল্যান্ড ছাড়া আর কোন দেশে তার টাকা রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে পাঁচতারকা হোটেলে গড়ে তোলা পাপিয়ার অপরাধের ডেরায় কারা যেতেন তারও তথ্য আসছে জিজ্ঞাসাবাদে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ নানা পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যাতায়াত ছিল সেখানে। সেখানে যাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া অস্ত্র ব্যবসা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। তার অপকর্মের দুই সহযোগী রাকিব ও সুমন সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র দেশে আনতেন। এরপর এসব অস্ত্র তারা ঢাকায় ডিলারদের কাছে পৌঁছে দিতেন। ঢাকার একাধিক অস্ত্রের ডিলারের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে রিভলভার, একে-২২ ও কাটা রাইফেল নিয়ে এসে ঢাকার ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করতো তার সহযোগীরা। পুরো বিষয়টি দেখভাল করতেন পাপিয়া। সিলেটের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরেই অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়েছেন পাপিয়া। ইতিমধ্যে ওই ব্যবসায়ীর নাম জানতে পেরেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পরই তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাকে খুঁজছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সেইসঙ্গে পাপিয়ার সহযোগী সুমন ও রাকিবকে খুঁজছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও পাপিয়ার অপকর্মের সহযোগী এই সুমন কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ঢাকায় নিয়ে আসতেন। সরবরাহ করা হতো ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে। এসব ইয়াবা বিভিন্ন তারকার হোটেলে সরবরাহ করা হতো।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার থেকে ইয়াবারা বড় চালান ঢাকায় আনতেন পাপিপা। এক্ষেত্রে তিনি কুরিয়ার সার্ভিসকে বেশি ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও মাদক সরবরাহে বড় পথ ছিল তার ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। তদন্তকারীরা  জানায়, এছাড়াও বিদেশি জাল টাকা তৈরি করা ছিল তার এক প্রকারের নেশা। একবার বসুন্ধরা শপিংমলে বিদেশি জাল মুদ্রা ভাঙ্গাতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েছিলেন। সে যাত্রায় তিনি রক্ষা পান।
পাপিয়ার মামলাটি র‌্যাবের পাশপাশি ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশও ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাপিয়া বিমানবন্দর থানায় ছিলেন। তাকে গত রাতে শেরে বাংলানগর থানায় নেয়ার কথা ছিল।    
গতকাল পাপিয়াকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবদ করছে পুলিশ। বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক কায়কোবাদ কাজী জানান, পাপিয়া রিমান্ডে আছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।  এদিকে, র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল মানবজমিনকে জানান, পাপিয়া র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিদেশে  টাকা পাচার করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। তার থাইল্যান্ডের ব্যাংককের একাধিক ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে । বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তিনি আরও বলেন, মাদক ও অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে সে অর্থ আয় করেছে। আমরা তার তথ্যের সূত্র ধরে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
শামীমা নূর পাপিয়ার সঙ্গে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সখ্যতার বিষয়ও এসেছে আলোচনায়। মূলত সুন্দরীদের অনৈতিকভাবে ব্যবহার করে একের পর এক ক্ষমতার সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে উপরে উঠেছেন তিনি। দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই তাকে দূরে রাখতে চাইলেও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে দলীয় অবস্থান শক্ত রেখেছিলেন এই নারী। রাজধানীর তারকা হোটেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি এমনকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছিলো পাপিয়ার প্রভাব। শীর্ষস্থানীয় নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য প্রবাসী এমনকি দাগী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্যতা ছিলো পাপিয়ার। নিজের স্বামী ছাড়াও কয়েক নারী নেত্রী এ বিষয়ে তাকে সহযোগিতা করতেন। সরকারি বিভিন্ন কাজ, চাকরি, বদলির বিষয়ে তদবির করতেন পাপিয়া। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন তিনি। কাজ-কারবার নিয়ে বৈঠক হতো পাপিয়ার অন্দর মহলে। কাজ বাগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের আমন্ত্রণ জানাতেন তারকা হোটেলে। প্রতিটি কাজ বাগিয়ে নিতে ব্যবহার করতেন নারী। শিক্ষিতা, সুন্দরী দেখলেই ঘনিষ্ঠতা বাড়াতেন পাপিয়া। আর্থিক বিষয়ে খোঁজ খবর নিতেন। দুর্বলতা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। নগদ টাকা দিতেন। চাকরির জন্য ডাকতেন। নারী হয়ে নারীর প্রতি অতিরিক্ত এই সখ্যতাকে অনেকেই রাজনৈতিক দৃষ্টিতে দেখতেন। কিন্তু বাস্তবতা ছিলো ভিন্ন। চাকরির প্রস্তাব দিয়ে, আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে মূলত নারীদের বিপদগামী করতেন তিনি।
যুব মহিলা লীগের এক নেত্রী জানান, পাপিয়া যখনই কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাত করতে যেতেন সঙ্গে থাকতো পাঁচ-সাত তরুণী। গত বছরের ১২ই অক্টোবর হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেনসিয়াল স্যুইটটি ভাড়া নেন তিনি। প্রভাবশালী, ধনাঢ্যদের সঙ্গে পরিচয় হলেই আমন্ত্রণ জানাতেন নিজের অন্দর মহলে। উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের জন্য ছিল পাপিয়ার হোম সার্ভিস। ধানমন্ডির আবাহনী মাঠ সংলগ্ন এক নারীর বাসায় এই হোম সার্ভিস দিতেন তিনি। ওই বাসাতে আসা যাওয়া করতেন প্রভাবশালী এক নেতা।   
ইতিমধ্যে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য উঠে এসেছে তদন্তে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্ট স্যুটে সন্ধ্যার পর গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক হতো। জরুরি বৈঠকগুলো হতো অল্প সময়ের। সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স, বারের লাইসেন্স, নানা বাণিজ্য, চাকরি, বদলির জন্য অনুষ্ঠিত হতো এসব বৈঠক। ঢাকার কাছে একটি রিসোর্টে বারের অনুমতির জন্য পাপিয়ার সহযোগিতা চেয়েছিলেন তার ঘনিষ্ঠ একজন। এ বিষয়ে গ্রেপ্তারের কিছুদিন পূর্বে তারকা হোটেলে পাপিয়ার কক্ষে বৈঠক করেছিলেন কয়েক ব্যবসায়ী। বৈঠক শেষে সেখানেই মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করেছিলেন পাপিয়া। নরসিংদীর বেশ কয়েক সুন্দরী তরুণীদের চাকরির নামে নিজের কাছে এনেছিলেন পাপিয়া। গত বছরের শুরুতেই তাদের আনা হয়। এরমধ্যে এক তরুণী যাত্রাগানে, মঞ্চে নিয়মিত নাচ করতেন। নাচে পারদর্শী হওয়ার কারণে এলাকার একটি অনুষ্ঠানে পাপিয়ার নজরে পড়েন ওই তরুণী। পরবর্তীতে তাকে ঢাকায় আনা হয়। সূত্রমতে, এসব তরুণীদের নিয়মিত টাকা দিতেন। তাদের পরিবারের সদস্যদেরও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন। তবে বাইরে কখনও এসব অপকর্ম নিয়ে মুখ খোলা যাবে না বলে হুমকি দিতেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গোপনে তরুণীদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতেন পাপিয়া। বাইরে কখনও মুখ খুললে এসব ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দিতেন। প্রায়ই থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বেড়াতে যেতেন পাপিয়া। সেখানেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন তরুণীদের। এসব দেশে অর্থ পাচার করতেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। থাইল্যান্ড ছিলো তার প্রিয়স্থান।


   Page 1 of 3
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এম.এ মান্নান
>
নির্বাহী সম্পাদক: মো: রাসেল মোল্লা


উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি: হাজী ইউসুফ চৌধুরী নাঈম

ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ খন্দকার আজমল হোসেন বাবু, সহ সম্পাদক: কাওসার আহমেদ । প্রধান বার্তা সম্পাদক: আবু ইউসুফ আলী মন্ডল, সহকারী-বার্তা সম্পাদক শারমিন আক্তার মিলি। ফোন: বার্তা বিভাগ 01618868682- 01914220053, সম্পাদক ও প্রকাশক: 01980716232

ঠিকানাঃ বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়- নারায়ণগঞ্জ, সম্পাদকীয় কার্যালয়- জাকের ভিলা, হাজী মিয়াজ উদ্দিন স্কয়ার মামুদপুর, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ। শাখা অফিস : নিজস্ব ভবন, সুলপান্দী, পোঃ বালিয়াপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ-১৪৬০, রেজিস্ট্রেশন নং 134 / নিবন্ধন নং 69 মোবাইল : 01731190131,E-mail- notunbazar2015@gmail.com, E-mail : mannannews0@gmail.com, web: notunbazar71.com,
    2015 @ All Right Reserved By notunbazar71.com

Developed By: Dynamicsolution IT [01686797756]