মতামত -
আমাদের সময়ের মায়েরা বাল্যকালে আমাদের যেভাবে লালন পালন করেছেন

মোঃ নওয়াব ভূঁইয়া 

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

 

লেখকঃ

মোঃ আনোয়ার হোসেন দেওয়ান।

 

আমাদের সময়ের মায়েরা কেমন ছিলেন তা এতটুকুন আয়োজনে শেষ করা যাবেনা। তবে আমি যা দেখেছি আমার এই ছোট্ট জীবনে তা লিখছি। বাবারা বেশির ভাগ কৃষি কাজ করতেন। কৃষি কাজ বেশ খাটা খাটুনির কাজ। খুব সকালে পান্তা ভাত, পোড়া মরিচ আর পেঁয়াজ দিয়ে তাদের প্রাতঃরাশ হয়ে যেত। লাঙল, বলদ নিয়ে বাবারা চলে যেতেন মাঠে। আর মায়েরা দুপুর বেলা অবধি পরিবারের রান্না বান্না শেষ করে, গৃহস্থালি অন্যান্য কাজ শেষ করে, বলদ- গাইয়ের জন্য খাবার যেমন খড় কাটা, জাউ ইত্যাদি রান্না করে পড়ন্ত বিকেলে গোসল করতে যেতেন। এদিকে তাদের স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের জন্য যতটা সম্ভব সাহায্য করতেন; খাবার রেডি করে দেওয়া,ড্রেস গুছিয়ে দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। সারাদিন যেন কাজ আর কাজ; এতটুকু ফুসরত নেই। স্কুল পডুয়া ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে এসে বাবা মায়ের কাজে সাহায্য করত । আর অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের ছেলে মেয়েরা খেলাধূলা করতে বেড়িয়ে যেত। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে তাদের অতো টেনশন বা পীড়াপীড়ি ছিল না। সন্ধ্যা হলে প্রতিযোগিতা হতো কে কত জোরে বিদ্যালয়ের পাঠ পড়ে আত্মস্ত করবে।

মায়েরা দিনের সমস্ত ঝক্কি-ঝামেলা চুকিয়ে সন্ধ্যায় শীতল পাটি বিছিয়ে একটু বিশ্রাম নিতেন। সন্তানেরা পাশে বসে কোরাসে পড়ছে তো পড়ছেই । মা ক্লান্তি নাশ করতে অনেক সময় ঘুমিয়ে পড়তেন। অনেক মা সন্তানের পাশে বসে তাসবিহ জপতেন আর নফল নামাজে ব্যস্ত থাকতেন। ঐসব মায়েদের সন্তানদের অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত কর্মকর্তা, ডাক্তার, প্রফেসর, ইঞ্জিনিয়ার বা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী-শিল্পপতি হয়েছেন । এখনকার মায়েদের মতো তখনকার মায়েদের বাচ্চাকে শিক্ষিvত করতে এত এত কৃত্রিম ব্যবস্থা নিতে হয়নি।

দুঃসময়ের দলীয় কান্ডারীদের মনে চাপা ক্ষোভ

মোঃমিজানুর রহমানঃ

দুঃসময়ের কুষ্টিয়া ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ’কুষ্টিয়া ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক আ্ইকন ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এম.জহুরুল ইসলাম মিল্টন। যিনি দুঃসময়ে কুষ্টিয়া ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের হাল ধরেছিলেন। প্রতিপক্ষের নানা সময়ে বিভিন্ন হামলা মামলা প্রতিরোধ করে কুষ্টিয়া ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের খুঁটি মজবুত করে দিয়েছেন। আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকান্ড নিয়ে মনে হতাশা বিরাজ করছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক বিশেষ কিছু ঘটনাবলী ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা নিয়ে আলোচনায় উঠে আসা বিষয় তুলে ধরা হলো।

সাম্প্রতিক বিশেষ কিছু ঘটনাবলী ও প্রাসঙ্গিক ভাবনাঃ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স এবং অ্যাক্ট অনুসারে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে 4 বছরের জন্য উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগ দেওয়া হয়। ঠিক তারই ধারাবাহিকতায় এখন থেকে 4 বছর পূর্বে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে, বর্তমান সরকারের অভিপ্রায় এর প্রেক্ষিতে, প্রফেসর ডঃ রাশিদ আসকারীকে মাননীয় উপাচার্য, প্রফেসর ডঃ শাহিনুর রহমানকে মাননীয় উপ-উপাচার্য এবং প্রফেসর ডঃ সেলিম তোহাকে মাননীয় ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যার মেয়াদ পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামী ২০ আগস্ট ২০২০ তারিখে। এটি একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আসা-যাওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। উল্লেখ্য যে এই তিনজন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকই 1990 এর শেষভাগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাষক হিসেবে, প্রথমোক্ত দুইজন ইংরেজি বিভাগে এবং শেষোক্ত জন আইন বিভাগে যোগদান করেছিলেন। আরও যদি উল্লেখ করতে চাই প্রথমোক্ত জন রংপুরের মিঠাপুকুরে জন্ম নিলেও সফলতার সহিত রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাস করে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ কে আলোকিত করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যোগদান করেছেন। অপর দুজন কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার সন্তান হলেও এইচএসসি পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও আইন বিভাগে মেধার স্বাক্ষর রেখে মতিহারের সবুজ চত্বর থেকে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। আমার যদি ভুল না হয় প্রত্যেককেই পারিবারিকভাবে অত্যন্ত উজ্জল এবং গর্বিত পরিবারের সন্তান যাদের পরিবারের মানুষগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত। চারটি বছর প্রশাসন চালাতে গিয়ে অনেক ভুল-ত্রুটি হয়তো তাদের হয়েছে, কিন্তু একই সাথে আমরা যদি তাদের সফলতার খতিয়ান টা দেখি সেটাও কিন্তু কম নয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন ছাত্র, সাবেক একজন ছাত্রনেতা, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একজন মানুষ হিসেবে, দেশরত্ন শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে, আমি কিন্তু তাদের অনেক সফলতাও দেখতে পাই। এই প্রশাসনের হাত ধরেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকীকরণএর দিকে অনেক ধাপ এগিয়েছে, যে বিশ্ববিদ্যালয়টি দুপুর দুইটার পরে ভুতুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যেত, সেই বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিকাল চারটা পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মুখরতায় ভরপুর থাকে। বিকাল থেকে রাত্রি আট টা পর্যন্ত দর্শনার্থী এবং সান্ধ্যকালীন কোর্স কারিকুলামের কারণে মুখরিত থাকে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় বিগত চার বছরে ভৌত অবকাঠামোর দিকে অনেক এগিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের হল, ফ্যাকাল্টি ভবন, প্রশাসনিক ভবন, নতুন নতুন বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল এবং কলেজ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধন, স্বতন্ত্র ভাষা ইনস্টিটিউশন, বর্তমান প্রশাসনের প্রচেষ্টায় পাঁচশত কোটি টাকা প্যাকেজ উন্নয়নের মাধ্যমে, সকল দিক দিয়েই এবং সকল মানদণ্ডেই বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক এগিয়েছে। আমার বিশ্বাস আগামীতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন 175 একর থেকে 275 একরে উন্নীত হবে। কুষ্টিয়া থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রেল সংযোগ হবে, শতভাগ একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে, রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট ও সিনেট নির্বাচন হবে, এর অনেক কিছুই ইতোমধ্যেই গোড়াপত্তন ঘটেছে এই বর্তমান প্রশাসনের হাত ধরে। আমি কাউকেই ছোট বা বড় করার জন্য আমার এই লিখাটি লিখছি না বা আমার অনুধাবন ব্যক্ত করতে চাচ্ছিনা। 1996 সালে প্রথম যখন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে, তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক প্রফেসর ডঃ কায়েস উদ্দিন স্যার কে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আমি তখন স্যারকে পেয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে স্যারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত মিলিয়ে আমার সহযোদ্ধাদের নিয়ে সকল উন্নয়ন ও ব্যর্থতা- সফলতায় পাশে থাকতে পেরেছি। তখন গভীর ভাবে দেখেছি স্যার কে কারা সহযোগিতা করছেন এবং কারা মুজিব আদর্শের হয়েও স্যার এর বিরোধিতা করছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারের সফল সমাপ্তির কারণেই পরবর্তীতে স্যার কে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়েছিল। আমার মনে হয় তাতে কিন্তু স্যার ছোট হয়ে যাননি বরং আমরা অনেকেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি নিয়ে তখনো স্যারের কাছে গিয়েছি, গর্ব করে বলেছি, ইবির সদ্য বিদায়ী উপাচার্য মহোদয় কে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্যার এর সময় তিনি কিন্তু পিতার আসনে বসে অনেক কে সন্তান তুলল জেনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে গিয়েছেন। তাকেও কিন্তু আমরা অনেকেই অপবাদ দিয়েছি সম্মানের সাথে, বিদায় দিতে পারিনি। তার পর প্রফেসর ডঃ আলাউদ্দিন স্যার কে কুষ্টিয়ার একজন কৃতি সন্তান হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য প্রফেসর ডক্টর আলাউদ্দিন স্যার ছিলেন, প্রফেসর কায়েস উদ্দিন স্যারের স্নেহের ছাত্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কায়েস স্যার উপাচার্য থাকা অবস্থায়, আলাউদ্দিন স্যার ছিলেন তার ছায়াসঙ্গী এবং সকল কর্মকান্ড ও উন্নয়নের সহ যোদ্ধা। প্রফেসর আলাউদ্দিন স্যারের হাত ধরেই এই বিশ্ববিদ্যালয়র অনেক উন্নয়ন হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, তার ঋণ আমরা মুজিব আদর্শের মানুষগুলো কোনদিন শোধ করতে পারব না। তিনি মুজিব আদর্শের মানুষ, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাই দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে দৃষ্টান্তমূলক অনেক কর্মকাণ্ড এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি করে গেছেন। সততার মূর্তপ্রতীক থেকে অনেক ঝুঁকি নিয়ে মুজিব আদর্শের অনেকের জন্য সর্বোপরি এলাকার মানুষের জন্য তিনি করে গেছেন। তৎপরবর্তীতে বর্তমান আওয়ামীলীগ জামানায় যে সমস্ত শ্রদ্ধাভাজন স্যারদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, একই সাথে উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন,প্রত্যেককেই সরকার বাহাদুরের সানুগ্রহে বিশ্ববিদ্যালয়ের যথেষ্ট উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ এটাই প্রতীয়মান হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার এবং জাতির পিতার রক্ত ও রাজনীতির যোগ্য উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশের সর্বত্র উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও উন্নয়ন হয়। তারই ধারাবাহিকতার ফসল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উন্নয়নের ধারা, বর্তমান প্রশাসনের সফলতা।
আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে গভীরভাবে লক্ষ্য করছি, বিগত বেশ কিছুদিন যাবত, যেটি সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের এই প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু শিক্ষক কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী, কিছু বহিরাগত অন্য দলের মানুষ যাদের মধ্যে কোনো আদর্শিক মিল নেই তারাই ব্যক্তিস্বার্থে একত্রিত হয়ে বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে, তাদের কে পুনঃনিয়োগ দিলে এখানে দুর্নীতি হবে, অতীতে তারা দুর্নীতি করেছে, তারা কোন উন্নয়ন করেনি, এই সমস্ত কথা বলে তাদের বিদায় বেলায় পরিবেশটা ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে, তাদেরকে ছোট করার চেষ্টা করছে, প্রকারান্তরে তারা নিজেরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষ বলে দাবি করে, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়ে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে, প্রকারান্তরে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করছে এবং সরকারের কর্মকাণ্ড, উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একইভাবে বুঝে না বুঝে আমাদের ছাত্রলীগের কিছু ভাই বন্ধুরা সাবেক এবং বর্তমান মিলিয়ে তারাও তাদের ক্ষপ্পরে পা দিয়ে নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করছে, যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক , লজ্জাজনক এবং শিক্ষা শান্তি প্রগতি,র চেতনা ও মুজিব আদর্শের পরিপন্থী। আমার মনে হয় আমার ওই ভাইদেরকে বলতে চাই, শিক্ষা শান্তি প্রগতি এই আদর্শ বুকে ধারণ করে যারা ছাত্রলীগের পতাকা কে ওই ক্যাম্পাসে পতপত করে উড়িয়েছে তারা কখনোই বর্তমান সরকার এর নিয়োগ দেওয়া কোন প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদায়বেলায় কাঁদা ছোড়াছুড়ি করে আমাদের মাননীয় নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যর্থ এবং প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনা। আমি ছাত্রলীগের বন্ধুদের বলতে চাই ১৯৯৬ সাল থেকে আমাদের সরকারের সময়গুলোতে যে সমস্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে এসেছেন তারা সকলেই কম বেশি ভালো কাজ করেছেন। একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করলে অপর পক্ষ আমাদেরকে দুর্বল করে, এর সুযোগ নেবে। মনে রাখতে হবে এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী ডক্টর হামিদ বা ডক্টর এনাম ভিসির জামানা নয়। এখানে যারা ডিভাইডেড এন্ড রুল এই ব্রিটিশ নীতি কে অবলম্বন করে ফায়দা লুটতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আপনারা সকলে, বিশেষ করে সাবেক ছাত্র নেতৃবৃন্দ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছেন, সকলে একত্রিত হয়ে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগ পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক শক্তিশালী এখন আর দুই জেলার আওয়ামী লীগ ত্রিধাবিভক্ত নয়। এখন কুষ্টিয়া ঝিনাইদহে প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের এমপি। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের ভার আমাদের প্রাণপ্রিয় জাতীয় নেতা, জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থা ও বিশ্বাসের একমাত্র ঠিকানা জনাব মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি মহোদয় এর উপর। তার মত চৌকস ব্যক্তিত্ব হাল ধরে আছেন কুষ্টিয়া জেলার, ওই জেলাকে আন্দোলনের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করে প্রিয় এমপি মহোদয় কে বিব্রত করার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং যারা ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছেন, সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে এখন আর এখানে কোন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতি চলবে না। আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি, যে মানুষগুলো, প্রভাষক থেকে শুরু করে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত, কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান, যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি সন্তান, যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকন, যাদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত, সেই মানুষগুলোকে আমরা ছোট করে, তাদের মধ্যে বিভাজন করে, আমরা কাদেরকে সুযোগ করে দিতে চাচ্ছি। আমরা তাদেরকে করতালির মাধ্যমে, আনন্দের মাধ্যমে, বিদায় দিতে চাই, আমরা চাই বর্তমান সরকার আমাদের এই প্রিয় স্যারদের কে রাষ্ট্রের আরো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের কে অধিষ্ঠিত করুক। আমার জানামতে ইতোমধ্যেই যেটি আমাদের মাননীয় উপাচার্য মহোদয় কে করেছে। উল্লেখ্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য 101 সদস্য বিশিষ্ট যে কেন্দ্রীয় জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার অন্যতম সদস্য আমাদের প্রিয় ভাইস-চ্যান্সেলর রাশিদ আসকারী, বঙ্গবন্ধুর বাংলাতে প্রদান করা সকল ভাষণ কে ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করার জন্য যে উপ-কমিটি হয়েছে তার অন্যতম সদস্য রাশিদ আসকারী স্যার। একটি কথা আমাদের মনে রাখা উচিত আজকে ভাইস চ্যান্সেলর কে, যে কোন দোষে দোষী করার অর্থ প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ট্রেজারার মহোদয় কেও, তাদের দিকে আঙ্গুল উঠানো। আমরা কেমন আদর্শ বুকে লালন করি, নিজেদের হীন স্বার্থের জন্য একই আদর্শের বর্তমান সরকার এর নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিবর্গের দিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আঙ্গুল উঠানো এবং দোষী সাব্যস্ত করা, এটাই কি আদর্শের নমুনা। পরিশেষে শিক্ষা শান্তি প্রগতি,র সকল ভাইদের প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত সকল সংগঠন, চেতনার মানুষগুলোর প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান সরকারের সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করুক, সরকারের অনেক গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক উইংস রয়েছে, তাদের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে, যাকে ভালো মনে করবে সেই ব্যক্তি দেরকে নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালাক। তাই বলে আমরা যারা একই আদর্শের মানুষ, নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করে নিজেদেরকে দুর্বল করবেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি করবেন না, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর যাদের সবচেয়ে বেশি হক রয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় কে শান্তিডাঙ্গা দুলালপুরের মাটিতে স্থাপন করতে গিয়ে, যারা নিজেদের ভিটে মাটি সর্বস্ব খুইয়েছে, সেই মানুষগুলোর ক্ষতি করবেন না। এই বিশ্ববিদ্যালয় ভালো চললে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন হলে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বৃদ্ধি হলে, এখানে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সারা দেশের মানুষের সাথে সাথে ওই এলাকার মানুষের আরও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। বাজার ঘাট যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে, তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে সুতরাং আমরা নিজেরা দলাদলি করে এই বিশ্ববিদ্যালয় টিকে পিছিয়ে দিয়ে, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করব এবং ওই এলাকার মানুষের ক্ষতি করব, সর্বোপরি ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষতি করব এটা কোন ভাবেই কাম্য হতে পারে না। একটু গভীরভাবে ভেবে, আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি আপনাদের চিন্তার খোরাকের জন্য বিবেকের বোধের স্থান থেকে, আজকের এই লিখাটি লিখলাম। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে এখনোও পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি একই রকম মমত্ববোধ রয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে এমন কোন মাথা তোলা পরিবার নেই বিশেষ করে শেখপাড়া, শান্তিডাঙ্গা, মধুপুর, লক্ষ্মীপুর, বসন্তপুর, হরিনারায়নপুর, গাড়াগঞ্জ, যুগিপাড়া, বারাদি, বেরবারাদিদ, ঝাউদিয়া, বারুইপাড়া, শৈলকুপা, দুধসর, চরি আর বিল, ভাটই বাজার, ঝিনাইদহ- কুষ্টিয়া, কমবেশি সকল মুজিব আদর্শের পরিবারের বাড়িতেই আমার যাতায়াত ছিল এবং তাদের বাড়িতে রাত্রি যাপন করেছি অনেক খানাপিনা খেয়েছি আমি ব্যক্তিগতভাবে ওই অঞ্চলের মুজিব প্রেমি মানুষগুলোর কাছে ভীষণভাবে ঋণী। আপনাদেরই ভাই হিসেবে, বর্তমান সময়ে জাতীয় পর্যায়ের একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামের সাথে এখনো আমাদের সুনাম জড়িত। সুতরাং আমার এই লিখাটি হৃদয় দিয়ে, মস্তিষ্ক দিয়ে একটু অনুধাবনের চেষ্টা করবেন এবং পক্ষ অবলম্বন না করে মাননীয় সরকার বাহাদুর এর উপরে ছেড়ে দেন, অর্থাৎ সরকার বাহাদুর যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই আমাদের সকলের সিদ্ধান্ত।

কোভিড-১৯ ও আমাদের অনলাইন শিক্ষা

 অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ:

বিশ্বজুড়ে এখন বড় আতঙ্কের নাম কোভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাস। আমরা এমন একটা সময় পার করছি যখন বাংলাদেশেও প্রতিদিনই বেড়ে চলছে আক্রান্তের সংখ্যা। মনে বেজে চলেছে অজানা শঙ্কা।

 

অন্য সবকিছুর মতো এখন স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। লাখ লাখ শিক্ষার্থী ঘরবন্দি হয়ে এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে দিন গুনছেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী-সবারই আকুতি একটাই, কবে স্বাভাবিক হবে সবকিছু। তবে অবস্থাদৃষ্টে ধারণা স্পষ্ট যে, অচিরেই তা স্বাভাবিক হচ্ছে না। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অর্থনীতি বাঁচাতে এরই মধ্যে জীবন-যাপনে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও৷ তিনি বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাস মহামারির বিস্তার কমার পরই কেবল সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাববে৷ স্কুল এখন আমরা খুলবো না৷ স্কুল কেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটাও খুলবো না৷...অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই স্কুল-কলেজ সবই বন্ধ থাকবে৷ যদি তখনও করোনা ভাইরাসের প্রকোপ না কমে তবে যখন এটা থামবে আমরা তখনই  খুলবো৷’ (সূত্র: দেশ রূপান্তর, ২৭ এপ্রিল ২০২০)।

এমন অবস্থায় মার্চের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ থাকে, তাহলে লেখাপড়ার কী অবস্থা হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই বিষয়টি অনুধাবন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

এই মুহূর্তে দেশব্যাপী ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয়তাও আমরা বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে পারছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তার ফসল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র সুযোগ ব্যবহার করে এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ডিজিটাল শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

বিশেষ করে এই দুর্যোগ মুহূর্তে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম-ই হতে পারে শিক্ষার প্রধান মাধ্যম। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অনলাইন শিক্ষা বা ই-লার্নিং বা ডিসট্যান্স লার্নিং এখন বেশ প্রয়োজনীয় বটে। ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়াও অনেক দেশেই এখন এটি জনপ্রিয় মাধ্যম।

এর সুবিধা হচ্ছে- একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা যায়। ই-লার্নিং এর ৮০ শতাংশের বেশি পাঠ কার্যক্রম ইন্টারনেটনির্ভর। তাই কোথায়ও গিয়ে পড়াশোনা করতে হয় না। ঘরে বসেই তা সম্ভব।

এছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে এখন অনলাইনে শিক্ষাকে আরও ‘কমিউনিকেটিভ’ করা যাচ্ছে। বিস্তারিত বললে, একজন শিক্ষার্থীর যতটা প্রয়োজন, এ অবস্থায় ঠিক ততটাই তাকে শিক্ষাদান করা সম্ভব।

এর ফলে একজন শিক্ষার্থী নিজের গতিতে শিখতে পারবে, যা কিনা তার জন্য অধিকতর ফলপ্রসূ হবে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ৫০-৬০ জনের ক্লাসে প্রতি ছাত্র ধরে ধরে শিক্ষকের দেখিয়ে দেখা সম্ভব হয় না।
কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর মেশিন লার্নিং শিক্ষার্থীভেদে যথোপযুক্ত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবী-বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনস্টিটিউটগুলোও এখন অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে ডিগ্রি প্রদান করছে। বাংলাদেশ থেকেও অংশ নিয়ে অনেকেই দক্ষতানির্ভর সনদও অর্জন করছেন।

এটা বেশ অগ্রসর ধাপ। তবে এই করোনা সঙ্কটে আমাদের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যুক্ত রাখতে এবং তাদের মানসিক সাপোর্টের জন্য অনলাইন ক্লাস-ই হতে পারে একটা কার্যকর পদ্ধতি। কেননা মজার ছলে আনন্দ নিয়ে নিজের পড়াটা শিখতে পারবে তারা।

কোভিড-১৯ এর কারণে বিলম্বিত হচ্ছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশে। তবে খবরে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের আগে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হতে পারে। তবে আটকে গেছে প্রায় ১৩ লাখ পরীক্ষার্থীর উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের (এইসএসসি ও সমমান) পরীক্ষাও।

গত ১ এপ্রিল থেকে এ পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার কথা ছিল। এখন কবে নাগাদ হয় তা অনিশ্চিত।

বছরের শেষে আছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা। মাধ্যমিক পরীক্ষা, কলেজে ভর্তি, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ও উচ্চশিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-সবই সময়ের ছকে বাঁধা। করোনায় এসব কার্যক্রমে দেখা দেবে ‘হ-য-ব-র-ল’।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর পরীক্ষা হয়তো নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও জানাশোনার কী হবে? এ বিষয়টি তো গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য অবশ্যই পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়, অনুচ্ছেদ রপ্ত করা জরুরি। তা না হলে জ্ঞানের এই শূন্যতা জীবনভর রয়ে যাবে!

তাই সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনন্তপক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখতে পারে। আর সে মাধ্যম হতে পারে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার।

পৃথিবীব্যাপী দিনে দিনে শিক্ষায় প্রযুক্তি বা এডুটেক-এর প্রসার ঘটে চলেছে। শিক্ষাব্যবস্থায় উদঘাটিত হচ্ছে অভূতপূর্ব কিছু ধারণা, তৈরি হচ্ছে নতুন কৌশল। যা জ্ঞানের ভা-ার তথা বিশ্বকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

বর্তমানে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ রয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও (বশেফমুবিপ্রবি)। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যুক্ত রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, ব্যবস্থাপনা, সমাজকর্ম ও ফিশারিজ) বিভাগেই অনলাইনে বিভিন্ন কোর্সের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি এ কথা শুনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে প্রিয় সহকর্মী শিক্ষকবৃন্দের একাগ্রতা এবং আগ্রহ আমায় মুগ্ধ করেছে। আর শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা স্বত্ত্বেও কোনো কোনো ক্লাসে তাদের উপস্থিতির হার ৯০ শতাংশ।

শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষকবৃন্দের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমি ভার্চুয়ালি সভা করছি। কথা বলেছি আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গেও। অনলাইনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় তারা জানিয়ে ভার্চুয়ালি ক্লাস করার অভিজ্ঞতার কথা। তারা এই সময়ে আতঙ্কিত কিংবা হতাশ না হয়ে বরং নিজেদের পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত রেখেছে।

আশা করি ঈদের আগেই প্রতিটি কোর্সের শতভাগ ক্লাস সম্পন্ন হবে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই তাদের সেমিস্টার পরীক্ষাটা নিয়ে নেওয়া যাবে। এতে তাদের সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না।

নতুন বিশ্ববিদ্যালয়- অবকাঠামোসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় একটা মাইলফলক গড়ে তোলার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানের এই অভিজ্ঞতা অদূর ভবিষ্যতে বশেফমুবিপ্রবিকে ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ তৈরি করতে ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীনের সমুদ্র উপকূলীয় শহর উহানে প্রথম শনাক্ত হয় নভেল করোনাভাইরাস। সেখান থেকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ভয়ানক এই ভাইরাস, এরপর বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (২০ মে ২০২০), ১৮৮ দেশে হানা দিয়েছে কোভিড-১৯।

এর মাঝেই বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। তবে এই বন্ধেও তারা অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। চীনের উই চ্যাট বা কিউকিউয়ের মাধ্যমে এসব ক্লাসে যুক্ত হন শিক্ষার্থীরা। প্রায় আড়াই হাজার মাইল দূর থেকেও এসব ক্লাসে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশি অনেক শিক্ষার্থীও।

ডিসট্যান্স লার্নিং-এর ক্ষেত্রে একেবারে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে দেশটির ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় (জেডজেইউ)। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার দু’সপ্তাহের মাঝেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঁচ হাজারেরও বেশি কোর্স অনলাইনে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। (সূত্র: yju.edu.cn/english)।  ফলে এই ই-লার্নিং পদ্ধতির আওতায় চলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সব শিক্ষার্থী।

কিছু কোর্স বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও এ সুযোগ পান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘কোর্স হাব’র ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি ই-কমার্স কোম্পানি ‘আলিবাবা’র সঙ্গে চুক্তি করে তৈরি করে ‘Ding Talk  ZJU’ নামে একটি অ্যাপ; যা প্রায় ৩ লাখ মানুষের মধ্যে দ্রুত পৌঁছে যায়।

তবে সমস্যা একটা থেকেই যায়, সেটা হচ্ছে এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা প্রযুক্তি ব্যবহারে সেভাবে দক্ষ নন। এই কাতারে আছেন কিছু শিক্ষকও। তাৎক্ষণিক তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে চীনের হাংঝু এলাকায় প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হয়। এর আগেই ৩ হাজার ৬৭০ জন শিক্ষককে এ বিষয়ে দক্ষ করে তোলা হয়।

এমনকি এক হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীকে এই ডিসট্যান্স এডুকেশনের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কমমূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারেরও সুযোগ করে দেয় জেডজেইউ।

জানা যায়, ২০১৭ সালে জেডজেইউ স্মার্ট ক্যাম্পাস তৈরির উদ্যোগ নেয়। সম্প্রতি ২০০ স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করেছে; যেখানে সহজেই শিক্ষকের ক্লাসরুমে পাঠদানের ভিডিও ধারণ এবং সরাসরি অনলাইনে প্রচারের ব্যবস্থা করা সম্ভব।

করোনাকালে আমাদের দেশেও আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। গুগল ক্লাসরুম কিংবা অন্যান্য অনেক কোলাবোরেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে শিক্ষকেরা একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ইন্টারেকটিভ ক্লাস নিচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দিচ্ছেন। এছাড়াও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোয়াটসঅ্যাপ বা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করেছে।

গত ৭ মে বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালানো সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরিরও উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। যা যুগোপযোগী উদ্যোগ বলেই মনে করি।

এটা হলে সব কিছু-ই একটা কাঠামোতে চলে আসবে। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্যবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করছে তারা কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ বা সমস্যার মুখোমুখি পড়েছেন কি না- তা অবহিত করতে।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের ইন্টারনেট ও প্রয়োজনীয় ডিভাইস বা স্মার্টফোন না থাকার কথা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় এখনও কাঙ্ক্ষিত ইন্টারনেটের স্পিড পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে অনেক শিক্ষার্থী-ই অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। এ বিষয়ে কাজ করা যেতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার ৬৩.০৮ শতাংশ। এর মাঝে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ শতাংশের বেশি। সব মিলিয়ে দেশে এখন ১৫ থেকে ৩৫ বছরের যুবক শ্রেণীর সংখ্যা ৮০ মিলিয়ন (৮ কোটি)। কর্মক্ষম এই জনগোষ্ঠী আগামী দুই দশক ধরে কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারবেন।

করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে এসেছে, তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও তাদের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী যারা এখন প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে প্রবেশ করছে, তাদের যখন কর্মক্ষেত্রে ঢোকার বয়স হবে, সে সময়কার কাজ বা বৃত্তি অথবা পেশা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের হবে, যার সম্বন্ধে এখন আমাদের কোনো ধারণাই নেই।

তাই এখন-ই সময় এ বিষয়ে ভাববার। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের প্রযুক্তিনির্ভর মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতেই নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। যার স্থপতি হিসেবে কাজ করে চলেছেন তার পুত্র ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

বর্তমানে বলা হয়, আমাদের দেশে প্রায় ২৬ লাখ শিক্ষিত বেকার রয়েছে; যারা দক্ষতার অভাবে কাজ পাচ্ছে না। এ জিনিসটা নিয়ে কাজ করতে হবে। কেননা উদ্ভাবনীমূলক ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা থাকলে, ভবিষ্যতের যেকোনো নতুন পেশা বা কাজে নিজেদের সহজে সম্পৃক্ত করা যায়, এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা ও মনমানসিকতাও তৈরি করতে হবে।

ডিজিটাল দুনিয়ায় শেষ সীমা বলে কিছু নেই। এখানে সর্বদা নতুন চিন্তা, উদ্ভাবন ও সম্পাদন চক্র চলমান থাকে। প্রয়োজনে যেকোনো সময়ে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম দ্বারাই আমাদের মতো চিরাচরিত সমাজকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। 

অনলাইন শিক্ষা কার্যদক্রমের জন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশিক্ষণযোগ্য যুবগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা এবং অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি মাথা রেখে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশিরা ঐক্যবদ্ধভাবে অনাগত ভবিষ্যতের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। বিশ্বে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। গড়ে তুলবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

একদিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। এবার ঈদ যে সবার জন্যই বিবর্ণ তা বোঝাই যাচ্ছে। রোগের প্রকোপ বিবেচনায় জনসমাগম এড়ানো বিষয়ক সরকারি বারণ সত্ত্বেও ঢাকা ছাড়ছে ঘরমুখী মানুষ। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ শক্তিশালী সাইক্লোন, অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ-সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত দেশবাসী।

তবুও হাল ছাড়েনি বাঙালি। স্বপ্ন বুনছে আবার কখন প্রকৃতি শান্ত হবে, আঁধার চলে যাবে। জেগে উঠবে অর্থনীতি, মানুষ ফিরবে কাজে। আবারও হাসবে সবাই। উৎসবে-আনন্দে একে-অন্যকে জড়িয়ে নেবে বুকে। কারণ এ জাতি তো চিরকালই হাল না ছাড়ার দলে।

লেখক: শিক্ষাবিদ; উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর। ইমেইল: vcbsfmstu@gmail.com।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও ইন্দিরা গান্ধীর দায়িত্বশীল ভূমিকা

শামীমা চৌধুরীঃ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১ আর ইন্দিরা গান্ধী এই কটি শব্দ-উচ্চারণ বাংলাদেশের ইতিহাসকে অবিচ্ছেদ্য করে রেখেছে। ’৭১ সালের পুরো মুক্তিযুদ্ধে এই শব্দাবলি আমাদের নিরন্তর ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এক সবুজ স্বাধীন স্বপ্নের ঠিকানার সন্ধানে। তাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আমরা কখনোই ভুলতে পারব না প্রতিবেশী ভারতের ভ্রাতৃপ্রতিম সহযোগিতার কথা। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি বহু জাতি, বহু ভাষাভাষী, বহু ধর্ম, বহু বর্ণের দেশ ভারত। ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের উত্থান সেই ভারতে। কংগ্রেস নেতা মতিলার নেহরু, মা কমলা নেহরু, পিতা পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতার অগ্রদূত। এই পরিবারে জন্ম নেওয়া ইন্দিরা যে স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রতি সহানভূতিশীল হবেন, এটাই স্বাভাবিক।

১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর ভারতের প্রভাবশালী ও বিখ্যাত পরিবার নেহরু পরিবারে জন্ম হয় ইন্দিরা গান্ধীর। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পথিক কংগ্রেস নেতা মতিলাল নেহরুর নাতনি, বাবা বিখ্যাত পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু আর মা কমলা দেবীর মেয়ে ইন্দিরা জন্মের পর থেকেই রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। রক্তের সঙ্গেই তার মিশেছিল রাজনীতি। যেটা কি না সময় পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠেছিল আরও গভীর। তিনি পড়াশোনা শেষ করেন অক্সফোর্ডে। সেখান থেকে ফিরে ১৯৩৪-৩৫ সালে যোগ দেন শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নামকরণ করেন প্রিয়দর্শিনী গান্ধী। সেই থেকে প্রিয়দর্শিনী গান্ধী নামেই পরিচিত হন ইন্দিরা। তবে ১৯৪২ সালে ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর ধীরে ধীরে নিজের মূল জায়গা অর্থাৎ রাজনীতিতে যোগ দিতে শুরু করেন ইন্দিরা। ১৯৬৪ সালে যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর কেবিনেটে তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেন তিনি। তবে তার রাজনৈতিক জীবনে বড় রকমের ঢেউ আসে যখন ১৯৬৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন অলংকৃত করেন তখন। মাঝখানে বেশ কিছু ঝামেলা পোহাতে হলেও নিজের কাজ দিয়ে অনেকটা এগিয়ে যান এই নারী। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও স্বীকৃতি পান ইন্দিরা। মোট ১৫ বছর ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আর তার দায়িত্বের এই ১৫ বছরের ভেতরেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ঘটে যায় মুক্তিযুদ্ধ।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে কেবল পরিচয়গত নয়, বিদ্যমান ছিল ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনমানসহ বহু পার্থক্য। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর হাতে সব বিষয়েই বৈষম্যের শিকার হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ উন্নয়ন ইত্যাদিতে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের অনেক বেশি অবদান থাকা সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের কপালেই ছিল লাভের সিংহভাগ। অবহেলা আর বঞ্চনার বেদনা পুঞ্জীভূত হতে হতে তা রূপ নেয় প্রতিরোধ, আন্দোলনে। ধাপে ধাপে আন্দোলনটা গড়ায় স্বাধীনতা সংগ্রামে, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। এ অর্জনের পেছনে মিত্র দেশগুলোর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এদের অন্যতম হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত আর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। তারা শুরু করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। মানুষ প্রাণের ভয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নেয়। ইন্দিরা সরকার তাদের খাদ্য ও জীবনের নিরাপত্তা দেয়।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল অবরুদ্ধ বাংলাদেশের মুজিবনগরের আম্রকাননে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর ক্রমাগত হামলার কারণে সরকার পরিচালনা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে এ সরকারের কার্যক্রম চালানো বেশ দুরূহ ব্যাপার হয়ে পড়েছিল তখন। সে সময়ই এগিয়ে এলেন ইন্দিরা গান্ধী। তিনি ব্যবস্থা করে দেন এ সরকারকে অস্থায়ীভাবে ভারতে অবস্থান করার। ভারতের কলকাতায় প্রধান দপ্তর হিসেবে শুরু হয় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কাজ। এখান থেকেই বিশ্বের কাছে নিজেদের চাওয়ার কথা, অসহায়ত্বের কথা, পাকিস্তানের অন্যায় আক্রমণের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ। ধীরে ধীরে পৃথিবীর সব দেশে জোরদার সমর্থন গড়ে ওঠে বাংলাদেশের পক্ষে। ভারতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আমেরিকা আর লন্ডনের সঙ্গে ইতিবাচক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও আর খুব বেশি বাধা আসেনি বাংলাদেশের।

ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন আর পরিচালনার ব্যবস্থাও করে দেন। এর মাধ্যমে কেবল বাইরের দেশের কাছেই নিজেদের কথা বলতে পারত না বাংলাদেশ, নিজেদের যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদেরও মানসিক সাহায্য ও অনুপ্রেরণা জোগাত সবসময়। যুদ্ধের সময় এতটাই ভালো প্রভাব রাখতে শুরু করে এ রেডিও স্টেশনটি যে, ধীরে ধীরে পাকিস্তানের রেডিও স্টেশনের প্রচারণা হুমকির মুখে পড়ে যায়। এ সময় দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর অনুমোদনে আয়োজন করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ওপর তিন দিনের একটি বিশেষ সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বাংলাদেশ। যেখানে অংশ নেয় ২৪টি দেশের প্রায় ১৫০ জন দূত। ১৯৭১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এ সম্মেলনের মাধ্যমেও পুরো বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের কথা তুলে ধরে ভারত। আর সবাইকে অনুরোধ করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে। ১৯৭১ সালের ১৩ মে বেলগ্রেডের রাজধানী বুদাপেস্টে বিশ্বশান্তি কংগ্রেসের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও ভারতের প্রতিনিধিদের দিয়ে বাংলাদেশের কথা বলেন ইন্দিরা গান্ধী। এ সম্মেলনে ৮০টি দেশের মোট ৭০০ জন প্রতিনিধি অংশ নেয়। আর তাদের কাছে নির্দিষ্ট একটি বার্তা পাঠান ইন্দিরা গান্ধী। বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২ লাখ মানুষ ভারতে চলে এসেছে। যেটা কি না ভারতের ওপর বেশ চাপ ফেলছে। উদ্বাস্তুরা যাতে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে সে রকম পরিবেশ তৈরি করার জন্য পাকিস্তানকে বাধ্য করা উচিত। আর সেটার জন্যই সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

আরব রাষ্ট্রগুলোর কাছে তুলে ধরেছিলেন সে সময়। আরব দেশগুলোকে বাংলাদেশের পক্ষে টানার জন্য ১৯৭১ সালের ২৩ মে মিশরের রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতের কাছে একটি কূটনৈতিক পত্র পাঠান। এতে বাংলাদেশে চলা গণহত্যার বিবরণ দেন তিনি। সেই সঙ্গে বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে হলে যে আর সব দেশের মতো মিশরকেও বাংলাদেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে হবে সেটাও জানান সুস্পষ্টভাবে। কেবল রাষ্ট্রপতিদের কাছেই নয়, ইন্দিরা গান্ধী তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষ করে বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, লন্ডন টাইমসে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও বাংলাদেশের স্বীকৃতি নিয়ে কথা বলেন। ১৯৭১ সালের ৮ আগস্ট বিশ্বের সব রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণরক্ষা ও মুক্তির দাবিতে একটি চিঠি পাঠান ভারতের এই বাঙালি দরদি প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী নিজেদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বাংলাদেশের মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত ছিল। চালাচ্ছিল ব্যাপক গণহত্যা। ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে গণহত্যার পরিমাণ গিয়ে পৌঁছে তিন লাখে। ফলে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে মানুষ দলে দলে আশ্রয় নেয় প্রতিবেশী ভারতের মাটিতে। ইন্দিরা গান্ধী তাদের কাউকে ফিরিয়ে দেননি। উদ্বাস্তুদের সংখ্যা প্রতিদিন ৬০ হাজার করে হলেও তাদের জন্য আলাদা জায়গা, খাবার আর প্রয়োজনীয় সবকিছুর তদারকি করে ইন্দিরা গান্ধী সরকার। পুরো ৯ মাস এ কাজ চলে তার নির্দেশনায়। তখন ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা আজকের মতো ছিল না। ছিল দারিদ্র্য, বেকারত্ব। উন্নয়নশীল একটি দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। মানবতার জন্য সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেননি তিনি।

ইন্দিরা গান্ধী কেবল বেসামরিকই নয়, সামরিকভাবেও বাংলাদেশকে সাহায্য করে গেছেন মুক্তিযুদ্ধে। ২৫ মার্চের কালোরাতের পর শ্রমিক, কৃষক, ছাত্রসহ সব পেশার লোকজন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। শুরু হয় যুদ্ধ। তবে পশ্চিম পাকিস্তানের বিশাল ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র আর অগণিত সৈন্যের কাছে সেটা ছিল নিতান্তই অপ্রতুল। আর এ সময়ই মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন ইন্দিরা গান্ধী। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল না ভালো কোনো প্রশিক্ষণ। অদক্ষ, আনাড়ি বহু মানুষ ভারতের সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। গড়ে তোলা হয় মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা বাহিনী। তাদের প্রয়োজনীয় সব অস্ত্রও ভারত সরকার সরবরাহ করে। ভারত সরকারের অনুরোধে রাশিয়াও এক্ষেত্রে সাহায্য করে মুক্তিযোদ্ধাদের। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার এ যুদ্ধে প্রশিক্ষণ প্রদান আর অস্ত্রের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য তিনি খরচ করেন ভারতের প্রায় সাত হাজার কোটি রুপি। এমনকি ইন্দিরা গান্ধী বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে ভারতীয় সৈন্যদের পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশকে সাহায্য করতে। এই যুদ্ধে ভারত হারায় তার প্রায় ৩ হাজার ৬৩০ সৈন্য। নিখোঁজ হয় আরও ২১৩ জন কর্মকর্তা।

একাধিক পরাশক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এখানে বলা দরকার, ১৯৭১ সালে ভারতের রাজনীতি ও সরকার ব্যবস্থায় যেমন ছিল আমেরিকা-ঘেঁষা মানুষ, তেমনি ছিল রাশিয়াপন্থীরাও। রাশিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক হলেও আমেরিকা ও চীন ছিল এর ঘোর বিরোধী। এই দেশ দুটি মনে করত এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ফলে ইন্দিরা গান্ধী সে সময় যে সিদ্ধান্তই নিতে গিয়েছিলেন, সেটাতেই কোনো না কোনো সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল। কেউ না কেউ এসে ঠিক বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে রাশিয়াপন্থী অন্যদিকে ভারতীয় বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আমেরিকাপন্থী এই দুই শক্তির অনৈক্য। প্রতিবেশী দেশ চীনের বাধা ও হুমকি, আমেরিকার মতো বড় একটি প্রতিপক্ষের বিরোধিতা সব মিলিয়ে বেশ অস্থিরতার ভেতরে ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ও তার সরকার। তবে এসব কিছুকে ছাপিয়েই সে সময় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে গেছেন তিনি। যদিও সঙ্গে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্য ছিল, কিন্তু সেটার অবস্থাও খুব একটা জোরালো ছিল না। বিশ্বযুদ্ধের পর অনেকটাই নমনীয় হয়ে পড়েছিল দেশটি বিশ্বের দরবারে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাও প্রবল ছিল। সবকিছুকে মানিয়ে প্রতিবেশী যুদ্ধাক্রান্ত দেশ বাংলাদেশকে সাহায্য করেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নানা রকম বেড়াজালও ছিল তার চারদিকে। সেগুলোকে কাটাতে খানিকটা সময় লাগে ইন্দিরা গান্ধীর। যদিও এর ভেতরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র বিভাগ এই বিষয়টি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বারবার শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবি জানান। এই বিষয়টি নিয়ে একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানেরই বলার অধিকার আছে বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। কিন্তু এত কিছুর পরও সরাসরি স্বীকৃতি দিতে পারেননি তিনি বাংলাদেশকে তখনও।

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সব ধরনের সমস্যার মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে ‘বাংলাদেশ’ বলে স্বীকৃতি দেন নিজের বক্তব্যের মাধ্যমে। নিজের বক্তব্য থেকে খুব সচেতনভাবে ‘পূর্ব বাংলা’ শব্দটি এ সময় কেটে ফেলে বাংলাদেশ শব্দটি উচ্চারণ করেন তিনি। তার এই বক্তব্য সারা বিশ্বে আলোড়িত হয়।

বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা চেয়েছিল। স্বাধীনতার জন্য বুকের রক্ত ঢেলেছিল। অসংখ্য নারী সম্ভ্রম হারিয়েছিল। সশস্ত্র যুদ্ধ করেছিল। তবে সেদিন যদি এই মমতাময়ী নারী স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের পাশে সর্বশক্তি নিয়ে না দাঁড়াতেন তা হলে এই অর্জনের জন্য জাতিকে আরও অনেক কঠিন আর দুঃসহ পথ পাড়ি দিতে হতো।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, গণমাধ্যম গবেষক, সংস্কৃতিকর্মী

সড়ক পরিবহন আইনঃ আরো কঠোর করা সময়ের দাবি

মোঃ মিজানুর রহমানঃ নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। ধর্মঘটে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ বেশির ভাগ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। যাত্রীদের জি্ম্মি করে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করে যে বা যারা এ কর্মসুচি পালন করছে, তারা সবার চেনা-জানা। তাদের লক্ষ-উদ্দেশ্যও অজানা নয়। গায়ের জোরে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলে তারা আইন ও নীতি পরিবর্তন করতে চায়।আইনের প্রতি এমন অশ্রদ্ধা আইয়ামে জাহিলিয়াতেই সম্ভব।কোনো সভ্যসমাজ এটা মেনে নিতে পারে না।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যারা আইন অমান্য করতে প্রকাশ্য কর্মসূচি দেওয়ার দুঃসাহস দেখাছে, ওরা কারা।ওদের একমাত্র ও অন্যতম পরিচয় ক্ষমতাসীনদের লোক। যাদের সুখে-দুঃখের সঙ্গী তারা। তাদের সুখে তারা হাসে। আর তারা কষ্টে থাকলে এরা চোখের পানিতে বুক ভাসায়।গাড়ি থেকে চাঁদাবাজির বড় একটা অংশ যারা বড় বড় নেতাদের মাসোহারা দেয়।

নিয়মিত এই মাসোয়ারা যারা দেয়, স্বাভাবিকভাবেই তারা দুঃসাহস দেখাবে। আর এটা নীরবে হজম করছেন মাসোয়ারাপ্রাপ্তরা। যার সফল মঞ্চায়ন সবার সামনেই উপস্থিত।আইন না মানার এমন সংস্কৃতি দেশে আইনের শাসন বাস্তবায়ন ও কার্যকরের পথে বড় বাধা। এমন বাধা দূর করতে দায়িত্বশীলদের নড়েচড়ে বসা অতীব জরুরি।

জনগণের সড়কে অবৈধভাবে গাড়ি রাখবেন, আবার জনগণকে জিম্মি করে বেআইনি দাবি পূরণে বাধ্য করতে এটা হতে পারে না।এটা মামার বাড়ির আবদার নয়। গাড়ি চালাতে হলে আইন মানতে হবে। আর যে আইন হয়েছে, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে এর চেয়ে আরো কঠোর আইন সময়ের দাবি।যে আইন হয়েছে, এটা নামকাওয়াস্তে।আইন না মানার সংস্কৃতির ফলে ওদের বড় বাড় বেড়েছে।

আইন ও নিয়ম মেনে গাড়ি যারা চালবে না, তাদের গাড়ি সড়কে থাকার যুক্তি নেই। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো এবং মানুষ মারার মিছিল চিরতরে বন্ধে আইনটির দ্রুত প্রয়োগ জরুরি। এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া মানে লাইচেন্সবিহীন চালকের হাতে মানুষ মারার লাইসেন্স তুলে দেওয়া।আইন মেনে রাস্তায় গাড়ি চালাতে মালিক-শ্রমিকদের এত ভয় কীসের?

নাটের গুরুরা পর্দার আড়ালে থেকে আন্দোলনের নামে এসব খুচরা চালাকি করে যাচ্ছে। অন্যদের সামনে পাঠিয়ে তারা এটিকে সান দিচ্ছে।এসব ক্ষমতাসীনদের কমবেশি জানা। কিন্তু মাসোয়ারার কারণে তারা নাকি সেভাবে কিছু বলছেন না।এতে মালিকপক্ষের শক্তি ও সা্হস বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের নাকি বলে দেওয়া হচ্ছে, তোমরা চালিয়ে যাও; তাহলে চলমান সংসদেই আইনটি পরিবর্তন করা হবে।

এমন আশকারা পেয়েই মালিকরা মাঠে নেমেছে বলে একটি সূত্র জানায়।এমনটা খুবই দুঃখজনক। সড়ক আইনটি অসংখ্য জীবনহানি ও আন্দোলন পরই সময়ের অন্যতম দাবি হিসেবে করা হয়।এতেও অনেক ফাঁকফোকর রয়ে গেছে।এটি আরো কঠোর করার দাবি ছিল দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের। অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণের পর সব পক্ষের প্রতিনিধির সম্মতিতে করা আইনটি নিয়ে চলমান আন্দোলন অনেকটা চোরের মার বড় গলার শামিল।

সড়কে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা ফিরে আনা এবং মানুষের জীবনহানি রোধে সম্প্রতি করা আইনটি অনেকটা সুফল দেবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। আইন মেনে চলা সবার জন্যই মঙ্গল।যারা আইন মানতে চায় না, তাদের মধ্যে যে সমস্যা আছে; এটা বদ্ধ পাগলও বোঝে।চির শুভ, সুন্দর, মঙ্গল ও কল্যাণের এ পথকে যারা বাঁকা চোখে দেখছে- তাদের চিনতে, বুঝতে ও জানতে জজ-ব্যারিস্টার হওয়ার দরকার নেই।

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবি মানে সড়কে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে যাত্রী ও সাধারণ মানুষের মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘ করার অবাধ লাইসেন্স তুলে দেওয়া। বরং সড়কে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা ফিরে আনতে এই আইনকে কীভাবে আরো যুগোপযোগী ও শাণিত করা যায়, সেটাই অধিক যুক্তিযুক্ত।এর বাইরে যাওয়া মানে মালিক ও শ্রমিকদের এতদিনের অনিয়ম ও নৈরাজ্যকে আরো উসকে দেওয়া।স্পষ্ট করে বললে আগুনে ঘি ঢালা।এমনটা হলে হবে আত্মঘাতী।যা শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন কারো কাম্য নয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত ৩,আহত ২৫

নতুনবাজার৭১ডটকম প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারায় এস আলম গ্রুপের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে এবং নিহত হয়েছে অন্তত ৩ জন।

সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে সংঘর্ষকালে পুলিশ গুলি করলে ৩ জন নিহত হয়।

পুলিশের গুলিতে নিহতরা হলেন- দুই ভাই মর্তুজা আলী (৫২) ও আঙ্গুর আলী (৪৫) এবং জাকের আহমেদ (৩৫)। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বাঁশখালী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালীর গন্ডামারায় প্রায় ৬০০ একর জমিতে এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে এস আলম গ্রুপ।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন স্থানীয়রা। তারা সোমবার গন্ডামারা এলাকায় সমাবেশ কর্মসূচি দিলে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।

পুলিশ জানিয়েছে, এলাকাবাসী পুলিশের জারি করা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল বের করলে পুলিশ এতে বাধা দেয়। এতে বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী আহত হয়েছে।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) একেএম হাফিজ আক্তার জানান, গন্ডামারা এলাকায় এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে বিরোধ চলে আসছিল।

সোমবার বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আয়োজন করলে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এলাকাবাসী ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ব্যাপক সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ সমাবেশে বাধা দিয়ে এক পর্যায়ে গুলি ছুঁড়ে। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়।

চট্টগ্রামে দেওয়ানহাটে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

নতুনবাজার৭১ডটকম নিউজঃ

চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট এলাকায় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে জান্নাতুল ফেরদৌস পপি (২৩) নামে এক গৃহবধূকে খুন করেছে তাঁর পাষণ্ড স্বামী দিদারুল আলম (৩৫)। ঘটনার পরে পুলিশ ঘাতক স্বামীকে আটক করেছে।

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আকবর শাহ্ মাজারের পেছনে কলোনীর একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস পপির বাড়ি কুমিল্লা জেলার মিয়া বাজার এলাকায় বলে জানা গেছে। স্বামী দিদারুল আলম দেওয়ানহাটের বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন রিকশা চালক।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডবলমুরিং থানার ওসি বশির আহমদ বলেন, "পারিবারিক বিরোধের জেরে গৃহবধূ পপির মাথায় রড় দিয়ে আঘাত করে তাঁর স্বামী। এতে ঘটনাস্থলেই পপির মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে ঘাতক স্বামী দিদারুল আলমকে (২৭) আটক করা হয়েছে।"

নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

নতুনবাজার৭১ডটকম নিউজঃ

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা নিহতের ঘটনায় নগরীর বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে প্রফেসর ড. অনুপম সেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের দামপাড়া ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সোহেল আহমেদ (২৪) নামে এক ছাত্রলীগ নেতার নিহত হন।
নিহত সোহেল আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য। তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার দয়াপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। এ ঘটনায় আহত আরও দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তারা হলেন- মো. ইমতিয়াজ ও রনি চন্দ্র শীল।
এদিকে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীর প্রবর্ত্তক মোড়ে সড়ক অবরোধ করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা সড়কের পাশে থাকা দোকানপাট ও যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা চট্টগ্রাম ইনচার্জ আলম দিদার জানান, ছাত্রলীগ কর্মীদের অবরোধে রাস্তার চারপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। নিউমার্কেট থেকে মুরাদপুর, চকবাজার থেকে ২ নম্বর গেট, পাঁচলাইশ থেকে জিইসি ও নিউমার্কেটগামী শত শত গাড়ি আটকা পরেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা ঘিরে কয়েক`শ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা হাজার হাজার রোগী ও তাদের স্বজনরা। তবে অবরোধকারীরা বলছেন, তাদের নেতা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন না আসা পর্যন্ত তারা রাস্তা ছেড়ে যাবেন না।
সূত্র জানায়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের দামপাড়া ক্যাম্পাসে বিবিএ`র ৩১তম ব্যাচের ফ্রেশার্স প্রোগ্রাম উপলক্ষে মহড়া ছিল। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী না সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন হবেন তা নিয়ে বিরোধ চলছিল।
এ নিয়ে দুপুর দেড়টার দিকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারি এম ই এস কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ওয়াসিম গ্রুপের কর্মীদের সাথে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সমর্থিত ছাত্রলীগ কর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে সোহেল আহমেদসহ আরো দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। পরে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোহেলকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমেদ বলেন, "পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। অভিযান চালিয়ে পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে।"

পিকআপ-অটোরিকশা সংঘর্ষে মা-ছেলেসহ নিহত ৩

নতুনবাজার৭১ডটকম প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে মা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। রোববার ভোর সোয়া ৬টার দিকে উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের তিতাবটগাছ নামক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোর সোয়া ৬টার দিকে তিতাবটগাছ নামক এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে বিপরীতমুখী মালবাহী একটি পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে অটোরিকশার যাত্রী মা ও ছেলেসহ তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।

জোরারগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার উল্লাহ দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে নিহতদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিক জানাতে পারেনি পুলিশ।

নিহত ব্যক্তিরা ঢাকা থেকে বাসযোগে মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট এলাকায় নেমে সিএনজি অটোরিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

চট্টগ্রামে শিশু গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু

নতুনবাজার৭১ডটকম প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামে ১২ বছরের এক শিশু গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর হাজারী লেন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে এসে বুলবুলিকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না তার গৃহকর্তা। এ সময় হঠাৎ বাড়ির পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনের ৫ তলা থেকে তাকে লাফিয়ে নিচে পড়তে দেখেন এলাকাবাসী।

পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুরুতর আহত অবস্থায় বুলবুলিকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তবে ঠিক কি কারণে সে লাফিয়ে পড়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কেউ কিছু জানাতে পারেনি।

রাঙামাটির লংগদুতে গলায় ফাঁস দিয়ে দুই স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা।।

নতুনবাজার৭১ডটকম প্রতিনিধিঃ

রাঙামাটির লংগদুতে দুই স্কুলছাত্রী একসাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় উপজেলার ভাসাইন্যাদম ইউনিয়নের ১০ নম্বর রাঙাপানিছড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ময়না আক্তার (১৩) ও নুরবানু (১২)। তাদের আত্মহত্যার কোনো কারণ জানা যায়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনের লাশ উদ্ধার করেছে লংগদু থানা পুলিশ।
এলাকাবাসী ও থানা সূত্রে জানা গেছে, ১০ নম্বর রাঙাপানিছড়া গ্রামের নুরু মিয়ার মেয়ে নুরবানু (১২) ও হযরত আলীর মেয়ে ময়না আক্তার (১৩) -দুজনই চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
প্রতিবেশি এই দুই ছাত্রী দুপুর দেড়টায় স্কুলের টিফিন ছুটির সময় একসাথে ঘরে আসে এবং কিছুক্ষন পর ঘর থেকে দুজনই একসাথে বেরিয়ে যায়। বাড়ির দেড়শ গজ দূরে একটি আম গাছের ডালের সাথে নিজ নিজ ওড়না বেধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। দুই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা পরে তাদের খোঁজ নিতে গিয়ে গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তাদের লাশ দেখতে পান।
চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফয়জুল ইসলাম জানান, "ময়না আক্তার ও নুরবানু আজকে স্কুলে এসেছিল। তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। তারা দুজন এক সাথে আসা যাওয়া করে। কেন আত্মহত্যা করলো -এটা আমার বুঝে আসছে না।"
চাইল্যাতলী ওয়ার্ড মেম্বার শেখ ফরিদ জানান, "এরা কিশোরী। কোনো ভালো-মন্দ বুঝতে শেখেনি। তাদের ব্যাপারে কোনো কথাও কখনও শুনিনি। কী কারণে আত্মহত্যা করতে পারে জানতে পারিনি।"

লংগদু থানা মো. জাফর জানান,"এ ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে,তদন্ত শেষে সবকিছু বলতে পারব।"
এদিকে দুই আত্মহত্যার খবর পেয়ে এলাকার শত শত লোক ও সহপাঠীরা তাদের শেষবারের মতো দেখতে ভিড় জমায়। পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

খালুর সঙ্গে স্ত্রীর পরকীয়া, দু’জনকেই খুন করলো যুবক

নতুনবাজার৭১ প্রতিনিধিঃ

কাজের সন্ধানে মালয়েশিয়া যাওয়ার কিছু দিন পর থেকেই শুনে আসছিলেন স্ত্রীর সঙ্গে খালুর প্রেম চলছে। অথচ এই খালুই তাকে লালনপালন করেছে। সেই বিশ্বাসেই বিয়ের পর স্ত্রীকে খালার বাড়িতে রেখে যান তিনি। কিন্তু এই ঘটনা শুনে আর স্থীর থাকতে পারেননি। দেশে ফিরে দুজনকেই খুন করলেন।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ফিরিঙ্গিবাজার এয়াকুব নগরে দুই নারী-পুরুষ খুনের নেপথ্যে প্রাথমিকভাবে এমন তথ্যই পেয়েছে পুলিশ। 

ইয়াকুব নগরের আলিম দোভাষ গলির টিনশেড একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন হৃদয় ও তার স্ত্রী আছমা আক্তার (২৫)। পাশেই আরেকটি বাসায় হৃদয়ের খালা রীনা বেগম ও মাকসুদুর রহমান (৩৫) ভাড়া থাকতেন। সেখানে একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান চালাতেন মাসুদ।

মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী আছমা ও খালু মাকসুদুরকে হত্যা করেন হৃদয়। মাকসুদুর দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। 

এই খুনের নেপথ্য কারণ খুঁজতে গিয়ে কথা হয় হৃদয়ের মেজখালা রুবি বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, অনেক ছোট বয়সে হৃদয়ের মা মারা যান। এরপর থেকেই সে রীনা ও মাকসুদুরের কাছেই বড় হয়। এরপর হৃদয়ের বিয়ে দেন তারা সবাই মিলে। বিয়ের পর খালারা মিলে তাকে মালয়েশিয়া পাঠান। যাওয়ার আগে হৃদয় স্ত্রীকে রেখে যান রীনা ও মাকসুদুরের কাছে।

হৃদয়ের চলে যাওয়ার পর থেকেই মাকসুদুর আর আছমার পরকীয়া প্রেম শুরু হয়। সে কথা মালয়েশিয়া থেকে জানতে পারেন হৃদয়। এ নিয়ে পারিবারিকভাবে নানা দেনদরবার হয়েছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। হৃদয় দেশে ফিরে আসার পরও থামেনি সেই পরকীয়া। সেই ক্ষোভ থেকেই দুজনকে হত্যা করেছেন হৃদয়।

আছমা ও হৃদয়ের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের বুড়িচং থানায়। চার বছর প্রেম করে বিয়ে করেছেন তারা। আর মাসুদুরের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার কমলগঞ্জ থানায়।

তবে রুবির দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন নিহত মাকসুদুরের স্ত্রী রীনা। তার দাবি, তার স্বামী এর আগে কোরান শরিফ ছুঁয়ে বলেছেন যে তিনি হৃদয়ের স্ত্রীর সঙ্গে কখনোই সম্পর্কে জড়াননি।

তিনি আরো বলেন, “সন্ধ্যায় বাসায় ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট টিচার এসেছিলো, তাই বাসায় ব্যস্ত ছিলাম। সাড়ে আটটার দিকে মানুষের চিৎকার শুনে দোকানে গিয়ে দেখি, আমার স্বামীর পেটে ছুড়িকাঘাত করা হয়েছে। এসময় তিনি আমাকে বলেন “রীনা আমিতো শেষ। হৃদয় আমারে ছুরি মেরে দিছে।“ এসময় তার নাঁড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাচ্ছিল।“

কোতয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জেনেছি- খালু-ভাগনির মধ্যে পরকীয়ার জেরে ভাগনি আছমা আক্তারের স্বামী হৃদয় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর মধ্যে আছমা আক্তারকে শ্বাসরোধ করে ও মাকসুদুর রহমানকে পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এসময় আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।“

নিহতদের সুরতহাল রিপোর্টকারী কোতোয়ালী থানার এসআই মনিুরজ্জামান জানান, হৃদয় স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যা করেছেন। তার গলায় দাগ পাওয়া গেছে। আর মাকসুদুরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে হত্যার ধরন বিস্তারিত জানা যাবে।

রাঙামাটিতে পুলিশের গুলিতে পুলিশ সদস্য নিহত

নতুনবাজার৭১ প্রতিনিধিঃ

রাঙামাটি শহরের সুখীনীলগঞ্জ পুলিশ লাইন ব্যারাকে এক পুলিশ কনষ্টেবলের অসতর্কতার কারণে প্রাণ গেল আরেক পুলিশ কনষ্টেবলের।
শনিবার সকালের দিকে এঘটনা ঘটে। নিহত পুলিশ সদস্যের নাম পূর্ণ বড়ুয়া (২০)। তার পিতার নাম শেখর বড়ুয়া, গ্রামের বাড়ী পূর্ব গুজরা, রাউজান, চট্টগ্রাম।
একই ব্যারাকে কর্তব্যরত পূর্ণ বড়ুয়াকে কনষ্টেবল সৌরভ বড়ুয়া (২০)ডিউটির জন্য ডাকতে যায়।
তখন অসতর্কতার কারণে সৌরভ বড়ুয়ার চাইনিজ রাইফেল থেকে গুলি বের হয়ে ঘটনাস্থলেই পূর্ণ বড়ুয়ার মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু ঘটে।
সৌরভ বড়ুয়া ও পূর্ণ বড়ুয়া গত ১৩ নভেম্বর ২০১৫ তারিখ কনষ্টেবল পদে চাকুরিতে যোগদান করেন ৷
পুলিশ কনষ্টেবল পূর্ণ বড়ুয়ার মৃত্যু বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙামাটি সদর সার্কেল) চিত্ত রঞ্জন পাল জানান,ডিউটি শেষে রাইফেল থেকে গুলি অপসারণ করার সময় অসতর্কতার কারণে কনষ্টেবল সৌরভ বড়ুয়ার রাইফেল থেকে গুলি বের হয়ে যায়। এতে কনষ্টেবল পূর্ণ বড়ুয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মার যান।

চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল খালেদ ইকবাল

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) নতুন চেয়ারম্যান পদে প্রেষণে নিয়োগ পেয়েছেন নৌ বাহিনীর রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। 

বুধবার তাঁর চাকরি নৌ বাহিনী থেকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর যোগদানের কথা রয়েছে। 

এরআগে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাটির কমান্ডিং অফিসার (ব্যাটেলিয়ন) হিসেবে চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। 

গত ২০ জানুয়ারি রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ পদোন্নতি পেয়ে ভাইস এডমিরাল হিসেবে নৌবাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ পান। এরপর ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে নৌ বাহিনীতে যোগদান করলে বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর জুলফিকার আজিজ।

‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ প্রত্যাহার, দায় দিলেন ডিজাইনারক: বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি

নিজস্ব প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম : নিজের লেখা ‘শ্লোক’ দিয়ে করা বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত ফেস্টুনে জাতির জনকের ছবি বিকৃতির দায় এবার নিজেদের নিয়োজিত ডিজাইনারকে দিলেন বন্দর পতেঙ্গা আসনের সরকার দলীয় সাংসদ এম এ লতিফ। সেইসঙ্গে ২৪ ঘণ্টা আগে নগর আওয়ামী লীগের একটি অংশের বিরুদ্ধে করা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বও’ প্রত্যাহার করে নিয়ে বলেছেন, এ ঘটনার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে দল ও প্রধানমন্ত্রী যে শাস্তি দেবেন তা মাথা পেতে নেবেন বির্তকিত এ সাংসদ। রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান এম এ লতিফ। এসময় বির্তকিত ফেস্টুনের ডিজাইনার কবির হোসেন ও চেম্বার কর্মকর্তা রাজীব দাশকেও পাশে রাখেন সাংসদ লতিফ।
সংবাদ সম্মেলনে লতিফের ‘অগোচরে’ ডিজাইনার ও চেম্বারের এক কর্মকর্তাই এই বির্তকিত ফেস্টুনটি ডিজাইন করেছেন বলে স্বীকার করে নেন তারা। এরআগে গত শনিবার (৬ ফেব্র“য়ারি) রাত ১০টার পর এমপি লতিফের ‘তদারকিতে’ই সেই ফেস্টুন’ শিরোনামে একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর সেটির সূত্র ব্যবহার করে রোববার (৭ ফেব্র“য়ারি) চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় দৈনিকে সংবাদটি গুরুত্বসহ প্রকাশিত হয়। এরপরপরই রোববার দুপুরে জরুরী সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন সাংসদ এম  এ লতিফ।এসময় তিনি বলেন, ‘জাতির জনকের ছবি বিকৃতি নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তির জন্য গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে আমি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের একটি অংশকে দায়ী করেছিলাম।  গণমাধ্যমে আসল বিষয়টি আসার পর সংশ্লিষ্টদের সাথে আমি কথা বলে সত্য উদঘাটন করতে পেরেছি। এজন্য নগর আওয়ামী লীগের একাংশের বিরুদ্ধে করা আমার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর আগনমনকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত থাকায় অনাখাঙ্খিতভাবে ডিজাইনারদের কারণে ভুলটি হয়েছে। সেজন্য দল এবং প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেরকম শাস্তি দেবেন আমি সেটি মাতা পেতে নেব। এছাড়া এনিয়ে যে মামলা হয়েছে, সেটি আমি
আইনগতভাবে মোকাবেলা করব।’ তিনি আরো বলেন, ‘এঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও আমি নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নেব। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের কারণে জাতির কাছে আমি নিলাম
হয়ে গেলাম। সারা দেশে আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে গেল। সব সফলতার মধ্যে ব্যর্থতাও থাকে। আমি ফেরেস্তা না, শয়তানও না। আমারও  ভুল থাকতে পারে। এই ধরণের ঘৃৃণ্য কাজের সাথে আমি জড়িত না হলেও চেম্বারের শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে এর দায় দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।’ সেই ডিজাইনার কবির হোসেনকে নিয়ে সাংসদ লতিফের সংবাদ সম্মেলন এসময় সাংসদ লতিফের পাশে থাকা বির্তকিত ফেস্টুনের ডিজাইনার কবির হোসেন বলেন, ‘ফেস্টুনে ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর ছবির রেজুলেশন কম
হওয়ায় আমি আর রাজিব দাশ মিলে এমপি স্যারের (এম এ লতিফ) ছবি থেকে মাথা কেটে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে ফেস্টুন ডিজাইন করেছি। এখানে এমপি স্যারের কোনো হাত নেই। বিষয়টি উনি কোনোভাবেই জানতেন না। সব দায় আমার আর রাজিবের।’ একই সময়ে পাশে থাকা চেম্বার কর্মকর্তা রাজীব দাশও বিষয়টি স্বীকারে নিজের কাঁধে দায় নেন।
উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্র“য়ারি দুপুরে সর্বপ্রথমএ ‘বঙ্গবন্ধুকে এমপি লতিফের সম্মান না বিকৃতি?’ এ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠে। এরপর রাতের দিকে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদটি গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়। এরপর ৪ ফেব্র“য়ারি চট্টগ্রামের আদালতে সাংসদ লতিফের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করা হয়। এরই মধ্যে চারদিন পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে সংবাদ সেম্মলন করে ছবি বিকৃতির ঘটনাকে নিজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবি করেছিলেন সাংসদ এম এ লতিফ। এমনকি এঘটনার জন্য নগর আওয়ামী লীগের একটি অংশকে দায়ী করে ছিলেন।

লাঠি-বন্দুক উঁচু করবেন না পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কোনো সদস্যের বাড়াবাড়ি সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ার করে কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডল সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা শুধু মানুষ নন আপনারা পুলিশ মানুষ।তাই কাজকর্মে আপনাদের অন্যদের থেকে আলাদা হতে হবে। সিএমপিতে মানুষের ওপর পুলিশের কোনো অন্যায় আমি বরদাশত করবো না। দেশে সাম্প্রতিককালে পুলিশের বিভিন্ন নেতিবাচক ঘটনার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে শুক্রবার রাত নয়টায় বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ কমিশনার এসব কথা বলেন।নগরীর দামপাড়ার পুলিশ লাইন মাঠে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নগর পুলিশের বিভিন্ন এলাকার উপ-কমিশনার এবং বেশিরভাগ থানার ওসিসহ প্রায় আটশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সিএমপি কমিশনার জলিল মন্ডল বলেন, পুলিশের জ্ঞাতার্থে বলছি, আপনাদের ক্ষমতা সীমিত ও আইনানুগ। লাঠি-বন্দুক উঁচু করবেন না। এটা  কখনও কাম্য নয়। মাটির সাথে মিশে গিয়ে মানুষকে সেবা দিতে হবে।এই সেবা দেওয়ার কাজ করলে জনগণের মধ্যেই অনেক বন্ধু পেয়ে যাবেন। সিএমপিতে খারাপের কোনো স্থান নেই। আমাদের নজরদারি সবখানে আছে। শুধু আমাদের নয়, মিডিয়ার চোখও পুলিশের ওপর আছে। সিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা যদি মনে করেন চাকরি করি, বেতন পাই। এই ধরণের মানসিকতা নিয়ে পুলিশে কাজ করা যাবেনা। সেবার
মনোভাব নিয়েই সকললে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনারা প্রথমে একজন মানুষ তারপর পুলিশ। সেকারণে আগে মানবিক হতে হবে, তারপর পুলিশ হিসেবে আচরণ করতে হবে।
সিএমপির সকল পুলিশ সদস্যদের সর্তক করে দিয়ে আব্দুল জলিল মন্ডল বলেন, পুলিশের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড নিয়ে টিভিতে, পেপারে নানা নেতিবাচক খবর বের হচ্ছে। পুলিশের জন্মই সেবার জন্য, মানুষকে অত্যাচার করার জন্য নয়। আপনাদের সেবা দিয়েই সেটি প্রমাণ করতে হবে। পেট্রোল ডিউটির সময় সন্দেহভাজন কাউকে তল্লাশি করার সময় যাতে অহেতুক কেউ হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চোর-ডাকাত ধরতে গিয়ে যাতে নিরীহ কেউ চোর ডাকাত বনে না যায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।


   Page 1 of 2
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এম.এ মান্নান
>
নির্বাহী সম্পাদক: মো: রাসেল মোল্লা


উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি: হাজী ইউসুফ চৌধুরী নাঈম

ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ খন্দকার আজমল হোসেন বাবু, সহ সম্পাদক: কাওসার আহমেদ । প্রধান বার্তা সম্পাদক: আবু ইউসুফ আলী মন্ডল, সহকারী-বার্তা সম্পাদক শারমিন আক্তার মিলি। ফোন: বার্তা বিভাগ 01618868682- 01914220053, সম্পাদক ও প্রকাশক: 01980716232

ঠিকানাঃ বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়- নারায়ণগঞ্জ, সম্পাদকীয় কার্যালয়- জাকের ভিলা, হাজী মিয়াজ উদ্দিন স্কয়ার মামুদপুর, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ। শাখা অফিস : নিজস্ব ভবন, সুলপান্দী, পোঃ বালিয়াপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ-১৪৬০, রেজিস্ট্রেশন নং 134 / নিবন্ধন নং 69 মোবাইল : 01731190131,E-mail- notunbazar2015@gmail.com, E-mail : mannannews0@gmail.com, web: notunbazar71.com,
    2015 @ All Right Reserved By notunbazar71.com

Developed By: Dynamicsolution IT [01686797756]