পূর্ব ইউক্রেনে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চলকে রাশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে সেনা মোতায়েনের প্রেক্ষিতে ইউরোপ ইতিমধ্যেই নানা অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করেছে রাশিয়ার ওপরে।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন পুতিন। পরে ‘শান্তি বজায় রাখতে’ ওই অঞ্চলে রাশিয়ান বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন তিনি।
পুতিনের এই আগ্রাসী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ভাবছে ইউক্রেন, রাশিয়ার পাঁচটি ব্যাংক ও কয়েক ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য, নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপ প্রকল্প বন্ধ করছে জার্মানি, আর যুক্তরাজ্যের মতো একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব বিবেচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বিবিসির ইউরোপ সংবাদদাতা ক্যাটিয়া অ্যাডলার বলছেন, বিশেষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে বা বিশেষ লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে। যদি ইউক্রেনে রাশিয়া তার সামরিক কর্মকাণ্ড আরও বৃদ্ধি করে, তাহলে নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করা হবে।
রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ভাবছে ইউক্রেন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অনুরোধ তিনি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন।
একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইউরোপিয় মিত্র দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, তারা যেন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দেরি না করে।
রাশিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের যুদ্ধ বাধবে না বলে তিনি মনে করলেও, মি. জেলেনস্কি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে তিনি দেশে ‘মার্শাল ল’ জারি করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপ প্রকল্প বন্ধ করছে জার্মানি
জার্মানির চ্যান্সেলার ওলাফ শলৎজ বলেছেন রাশিয়ার সর্বসাম্প্রতিক পদক্ষেপের পর নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প চালুর অনুমোদন জার্মানি দেবে না।
রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে এই পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে, কিন্তু পাইপলাইনটি এখনও চালু হয়নি।
রাশিয়ার পাঁচটি ব্যাংকের ওপর যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা জারি
রাশিয়ার পাঁচটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। এগুলো হলো রোসিয়া, আইএস ব্যাংক, জেনারেল ব্যাংক, প্রোমসভায়াজ ব্যাংক এবং ব্ল্যাক সি ব্যাংক।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এই নিষেধাজ্ঞা জারির ঘোষণা করেন।
সেই সঙ্গে রাশিয়ার তিনজন ব্যক্তির সকল সম্পদের পরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তারা হলেন গেনেডি তিমচেনঙ্কো, বরিস রোটেনবার্গ এবং ইগোর রোটেনবার্গ।
আরও পড়ুন: আশা, আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার দোলাচলে দোনেৎস্ক
যুক্তরাজ্যে থাকা তাদের সকল সম্পদ জব্দ অবস্থায় থাকবে। তারা যুক্তরাজ্যে যাতায়াত করতে পারবেন না। যুক্তরাজ্যের কোন নাগরিক তাদের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য করতে বা সম্পর্ক রাখতে পারবেন না।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের সহযোগী ও মিত্র দেশগুলোকেও রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন
-দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দেয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে যারা যারা জড়িত রয়েছেন (যাদের মধ্যে রাশিয়ান পার্লামেন্টের ৩৫১ জন সদস্য ও রয়েছেন), এবং যে ১১ জন ব্যক্তি ওই প্রস্তাবটি তুলেছেন তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা।
-যেসব ব্যাংক রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এবং ওই অঞ্চলের কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করে সেগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা।
-ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূলধনী বা আর্থিক বাজারে রাশিয়ার রাজ্যগুলো বা সরকারের সংশ্লিষ্টতার সুযোগ স্থগিত করা।
-বিচ্ছিন্নতাবাদী দুইটি অঞ্চলের সঙ্গে সকল প্রকার ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করা। যারা এটি করবেন, তাদের আর্থিক শাস্তি নিশ্চিত করা।
-এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশের সকল সদস্যের সম্মতি থাকতে হবে। তবে পররাষ্ট্র নীতির প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
এদিকে, পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ব্রাসেলসও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যৌথ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায়। কিন্তু কূটনীতিকরা আশঙ্কা করছেন, হাঙ্গেরি এসব নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে একমত নাও হতে পারে। কারণ দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান মস্কোর সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ।
এছাড়া জ্বালানি সরবরাহ এবং কম মূল্যে প্রাপ্তির কারণে রাশিয়ার ওপর ভবিষ্যতে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে নিজেদের দ্বিধার কথা পরিষ্কার করে দিয়েছে জার্মানি, ইটালি এবং অস্ট্রিয়া।
|