রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
রূপগঞ্জে খোলা বাজারে অবাধে বিক্রি মুরগির ডামিস্টিক (মুরগির মাংস ছাড়ানো হাড়গোর ও  মাথা, গিলা, কলিজা, পা সহ ইত্যাদি) সব মুখরোচক খাবার তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত এসব পণ্য বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে অবাধে। অথচ এর ক্ষতিকর দিকগুলো না জেনেই মুরগির ডামিস্টিক কিনে খাচ্ছে সাধারন মানুষ, এমনকি এই খাবারই মানুষের দেহে বাসা বেঁধে মৃত্যুর কারণও ঘটাতে পারে। অন্যদিকে অর্ধেকের বেশি লাভে বিক্রি করে রাতারাতি অধিক মুনাফা গুনছেন একদল প্রতারক।
সোমবার (৯ মার্চ) রাত ৮টায় উপজেলার ভুলতা গাউছিয়া আব্দুল হক সুপার মার্কেটের সামনে রাস্তার পাশে এসব চাঞ্চল্যকার তথ্য পাওয়া যায়। মার্কেটের সামনে ফুটপাতে মর্তুজাবাদ এলাকার  বাবু ও তার সেলসম্যান দুলালকে মুরগির ডামিস্টিক তথা কলিজা, মাথা, পাখনা, পা, এবং মাংস ছাড়ানো খাঁচার অংশ অবাধে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব প্রতারক ব্যবসায়ীরা প্রায় অর্ধেকের বেশি লাভে বিক্রি করে থাকে মুরগির ডামিস্টিক। যা জনস্বাস্থ্যের হুমকীর সম্মুখীন হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেল, এগুলো আসে ভুলতা এলাকার কয়েকটি বড় হোটেল থেকে। জনৈক বাবু নামে এক ব্যবসায়ী উক্ত হীন ব্যবসার মূল হোতা। তিনি বলেন, আমি গিলা কলিজা কিনে থাকি কাজী ফার্ম থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব মুরগীর ফেলে দেয়া অংশ আসে শহরের নামিদামি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও স্থানীয় কয়েকটি বড় হোটেল থেকে। এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার বলেন, চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে স্যুপ তৈরিতে কক ও বয়লার মুরগির শুধু মাংস ছাড়িয়ে তা কিমা করে কর্ণ স্যুপ তৈরি করি। আর মাংস ঝুড়ি ঝুড়ি করে থাই সুপ বানানো হয়। পরবর্তীতে মুরগির সেই অবশিষ্ট অর্থাৎ খাঁচার অংশটিসহ মুরগির গিলা-কলিজা, গলা, মাথা, পা সহ ইত্যাদি একত্রে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। মুরগির রোস্ট তৈরিতে রান ও মূল অংশ ব্যতীত বাকী সব অর্থাৎ গিল-কলিজা, মাথা, পা সহ ইত্যাদি সব বিক্রি করে দেয়া হয়।
তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ব্যাপার হল, প্রতিদিনের এসব মাল প্রতিদিন বিক্রি হয়না। ৪-৭ দিন কিংবা তার বেশি দিনের জমানো আগের মাল বিক্রি করা হয় একসঙ্গে। কারণ প্রতিদিন এত মাল জমা হয়না। তাছাড়া প্রতিদিন এসব বিক্রি করলে এটাকে একটা বাড়তি ঝামেলা মনে করেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। তাই ৪-৭ দিনের মাল জমিয়ে এক সঙ্গে বিক্রি করা হয়। জানা যায়, বাবু নামের উক্ত প্রতারক ব্যবসায়ী গোডাউন হিসাবে আব্দুল হক সুপার মার্কেটের নিচ তলায় মসজিদের পশ্চিম পাশের একটি দোকান ভাড়া নিয়েছে। সেখানেই এই পচাঁ গন্ধযুক্ত মুরগীর ডামিস্টিকগুলো সে জমিয়ে রাখে। ওখান থেকে প্রতিদিন এই পচা ও গন্ধযুক্ত মাল নিয়ে প্রকাশ্যেই বিক্রি করছেন এসব মুরগীর ডামিষ্টিক। চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তাদের ভাষায় মুরগির মাংস ছাড়ানো অংশগুলোসহ মাথা, গিলা-কলিজা, পা সহ এসব পণ্যকে ডামিস্টিক বলা হয়।
অথচ আব্দুর হক সুপার মার্কেটের সামনের মাছ বাজারের মুখেই এই ডামিস্টিক বিক্রির দোকনগুলো বসিয়ে এরা চড়া দামে বিক্রি করছে। তবে পণ্যের বিভিন্ন আকার প্রকার ভেদে দাম একটু বেশি কম হয়ে থাকে। মুরগির গলা, গিলা-কলিজা মিলিয়ে ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মুরগির মাংস ছাড়ানো শুধু খাঁচা ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাথা, পা, গিলা- কলিজা ১শ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
যেখানে চিকিৎসকরা বলে থাকেন, কাঁচা মাংস জাতীয় খাবার ২৪ ঘন্টার বেশি হলে তা খাওয়া ঠিক নয়। কারণ তাতে নানা রকমের ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নেয় এবং তা থেকে নানা রকমের মারাত্মক রোগ হতে পারে।
অন্যদিকে মুরগির ডামিস্টিক মালগুলো সব একত্রে রাখায় রক্ত ও পানি থাকার কারণে একটির ব্যাকটেরিয়া অন্যটিতে প্রবেশ সহ পচন ধরতে পারে সহজেই। তবে ফ্রিজ কিংবা হিমাগারে রাখার কারণে দুর্ঘন্ধ ছড়ায় না আর কোন রকমের অস্বাভাবিক অবস্থা বোঝা যায় না। যে কারণে সাধারণ মানুষ এর ক্ষতিকর দিকটা বুঝতেই পারেনা। তবে এসব পণ্য খেলে ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
এঘটনায় ভুলতা ফাঁড়ির এক পুলিশকে প্রকাশ্যে ডামিস্টিক বিক্রি বন্ধের কথা বললে তিনি বলেন, এগুলো ধরা আমাদের কাজ না। সাংবাদিকরা লিখবে এবং ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জেল জরিমানা করবেন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটরা। আমরা তাদের সাথে থাকবো।