দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৫০ বছর পর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বীর বিক্রম আব্দুল খালেক মারা গেছেন। বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। গত সোমবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর মৃতদেহ আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাড়ির আঙিনায় দাফন করার কথা।
বীর বিক্রম আব্দুল খালেকের শরীরে কোভিডের উপসর্গ থাকায় তাঁকে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে পরীক্ষায় তাঁর করোনা নেগেটিভ আসে। তার পরও তাঁকে করোনা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাপাল গ্রামে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। গত ৬ জুন নতুন প্রকাশিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে তাঁর নাম উঠেছে। গেজেট বিভ্রাটের কারণে তাঁর ‘বীর বিক্রম’ স্বীকৃতি পেতে এই বিলম্ব হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তির সময় আব্দুল খালেকের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বড় ছেলে মাসুম আক্তার জামান। তিনি জানান, তিন-চার দিন থেকে তাঁর বাবার জ্বর ও কাশির সমস্যা দেখা দেয়। গত রোববার রাতে তিনি মাথার যন্ত্রণায় খুব কাতরাচ্ছিলেন। সোমবার সকাল ১০টার দিকে তাঁকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে তাঁকে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত মিশন হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছিল। করোনা পরীক্ষার আগেই তাঁরা সেখানে যেতে রাজি হননি। অবশেষ বেলা ১টার দিকে তাঁর বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়। এখানেও তাঁর বাবাকে হাসপাতালের ২৯ নম্বর করোনা ওয়ার্ডে নেওয়া হয়।
বুধবার দিবাগত রাতে আব্দুল খালেকের ছোট ছেলে আবুল হাসনাত এই প্রতিবেদককে ফোন করে জানান, তাঁর বাবা করোনা রোগী নন, তার পরও তাঁকে ওই ওয়ার্ডেই রেখে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর হৃদ্যন্ত্রের চিকিৎসা দরকার। শেষ পর্যন্ত রাত দেড়টার দিকে বীর বিক্রম আব্দুল খালেক ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেই মারা যান।
জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, বীর বিক্রম আব্দুল খালেক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা গেছেন।
গেজেট বিভ্রাটের কারণে এত দিন বীর বিক্রম আব্দুল খালেক স্বীকৃতি পাননি। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত গেজেটে এক ধরনের ভুল ছিল, ২০০৪ সালের গেজেটে আরেক ধরনের ভুল। প্রথমবার লেখা হলো ‘এক্স নেভী’। পরেরবার সেনাবাহিনী। তাঁর অফিশিয়াল নম্বরের শেষে ১৯ এর জায়গায় ভুলবশত লেখা হয়েছে ৯১ ;যা ছিল পাঞ্জাবি সৈন্যের। ২০১১ সালে জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঠিকানাবিহীন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে তাঁর বাবার নাম ও নৌবাহিনীর পদবি ও সার্ভিস নম্বর দেওয়া ছিল। তার ভিত্তিতে তাঁরা গেজেট সংশোধন করার জন্য আবেদন করেন। সে আবেদন মন্ত্রণালয় থেকে হারিয়ে যায়। গত বছর নতুন করে আবার আবেদন করেন।