রাসেল মোল্লা
রাস্তার পাশের দোকানে হোক বা বড় রেঁস্তোরায় হোক তেহারী আর বিরিয়ানির হাঁড়িগুলো লাল শালু দিয়ে মোড়া থাকে৷ কিন্তু কেন? অন্য কোনও রঙ নেয় কেন? অথবা অন্য কোনো খাবার এভাবে ঢাকা হয় না কেন? ভেবে দেখেছেন কখনও? এর একটা বিশেষত্ব তো আছে বটেই। আর লাল শালু দেখলেই বিরিয়ানি প্রিয় মানুষেরা কেমন স্প্যানিশ ষাঁড়ের মতো এগিয়ে যায় লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই!
আসলে বিরিয়ানিকে যতই মোগলাই খাবারের তালিকায় ফেলুন না কেন, রসনাপ্রিয় বাঙালির হেঁশেলে এই জনপ্রিয় খাবার ঢুকে পড়েছে বেশ অনেকদিন হল। নিত্যদিনের খাবার তালিকাতে না থাকলেও, প্রায়শই বিরিয়ানির দোকানে কিংবা বাড়িতে নিজেদের মতো করে বানিয়ে নেওয়া হচ্ছে এই মোগলাই খানা।
প্রকৃতপক্ষে, বিরিয়ানির হাঁড়ির লাল কাপড় এসেছে মুঘলদের সৌজন্যে৷ আসলে লাল রঙের আলাদা একটা তাৎপর্য রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত কোনো বিদেশি ভারতে এলে লাল রঙের গালিচাতেই অভ্যর্থনা জানানো হয়। মাজার কিংবা মন্দিরের গায়েও লাল রঙের কাপড়ই দেখা যায়। পানের দোকানের ক্ষেত্রেও তো তাই। তাছাড়া বিরিয়ানিরও তো আইডেন্টিটি ওই লাল কাপড়।
লাল রঙের নিজস্ব পরিচয় রয়েছে। শৌর্য, আক্রমণ ও বিপদ অর্থে বলুন, লাল নিশানের দ্বারা বিদ্রোহ বলুন বা সিগনালে লাল সবকিছুর আলাদা আলাদা মানে। খেলার মাঠে লাল কার্ড হলে তো খেল খতম। প্রেমের বহিঃপ্রকাশেও সেই লাল রঙ। এই সব লালের আলাদা ইতিহাস রয়েছে। তবে বিরিয়ানির হাঁড়ির লাল কাপড় এসেছে মুঘলদের সৌজন্যে। তাদের প্রিয় এই খাবার পরিবেশনে আরও আকর্ষণ বাড়াতে৷
মুঘলরা পারস্য সংস্কৃতির দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। শোনা যায় মুঘল সম্রাট হুমায়ুন যখন ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, পারস্য সম্রাটের অভর্থ্যনায় লাল গালিচা পেয়েছিলেন তিনি। এমনকি খাদ্য পরিবেশনের বিশেষত্বেও সেই লাল রঙের বাহুল্য। চিনা মাটির পাত্র, রুপোলি বাসন সবই ঢাকা থাকত লাল কাপড়ে। সেখান থেকেই মুঘল দরবারে তা আসে। লখনৌয়ের নবাবরাও এটা অনুসরণ করেছিলেন। সেই পরম্পরা চলছে আজও। সুতরাং, তিলোত্তমাতেও সেই ধারা অব্যবহিত। তবে প্রেমের রঙ যদি লাল হয় তাহলে বিরিয়ানিতে লাল কাপড়ে বাঁধা কোথায়! হাজার হোক বিরিয়ানি হচ্ছে ভোজনরসিকদের এক অতুলনীয় ভালোবাসার নাম ।
লেখক : সহ-সম্পাদক, দৈনিক নতুন বাজার ৭১.কম
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
|