২০০১ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশ-এর উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলনে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করে প্রতিবছর পালন করা হয়। এবার দিনটির প্রতিপাদ্য ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসুন’।
দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। সাগর আর বন সেখানে মিলেমিশে একাকার; বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণসহ বহু প্রাণী প্রজাতির বিচরণ এই শ্বাসমূলীয় বনে।
বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, সুন্দরবনে ৫ হাজার প্রজাতির সম্পূরক উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩০ প্রজাতির চিংড়ি মাছ রয়েছে। সুন্দরবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সমগ্র দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থাও সুন্দরবনের উপর কম-বেশি নির্ভরশীল।
তিনি জানান, সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকার বেশ কিছু প্রকল্প ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সবশেষ সুন্দরবনের ৫১ শতাংশ এলাকা সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের উদ্যোগের ফলে বর্তমানে সুন্দরবনের দস্যুতা দমন হয়েছে।
সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলা হয়। সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগারের’ আবাসস্থলও। তাছাড়া দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দরবন। বিভিন্ন সময়ে সুপার সাইক্লোনে নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে উপকূলবাসীকে রক্ষা করে চলেছে সুন্দরবন। তবে প্রতিনিয়ত বনখেকোদের আগ্রাসনের ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে। হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রজাতির গাছ আর প্রাণী। তাই সুন্দরবন দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক প্রকৃতি ও সুন্দরবন রক্ষার।