আজ পহেলা ফাল্গুন (১৪ ফেব্রুয়ারি, সোমবার)। প্রকৃতির চাকা ঘুরে আবার এলো ঋতুরাজ বসন্ত। যদিও গ্রামীণ প্রকৃতিতে বর্ষপঞ্জিকা ছাড়াই টের পাওয়া যায় এ ঋতুর আমেজ। তবে আধুনিকতার কবলে পিষ্ট হওয়া যান্ত্রিক শহরগুলোর জন্য প্রযোজ্য ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত’।
দীর্ঘদিন ১৩ই ফেব্রুয়ারি পালিত হয়ে আসলেও সংশোধিত বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী গতবছর থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ফাল্গুনের প্রথম দিন ধরা হয়ে থাকে। প্রতি বছর বসন্তকে বরণ করতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ।
শীতের শুষ্কতাকে বিদায় দিয়ে প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে। ঝরাপাতার শেষে গাছে গাছে আবির্ভাব নতুন শাখা-কুঁড়ি, রঙ বেরঙের নানা ফুলে ছেয়ে গেছে চারপাশ। আর সেগুলো যেন জানান দিচ্ছে রক্তমাখা শিমুলের বসন্ত। ফাগুনের আগুনে মন রাঙিয়ে বাঙালি মেতেছে বাসন্তী এই উৎসবে।
বসন্ত বা ফাল্গুন আসা মানেই মনে করিয়ে দেওয়া- আমার আপনহারা প্রাণ, আমার বাঁধন-ছেড়া প্রাণ! বসন্ত মানেই- পায়ে পায়েল রুমঝুম; ফাল্গুনে শুরু হয় গুনগুনানী, ভোমরাটা গায় ঘুম ভাঙানি, এক ঝাঁক পাখি এসে ঐকতানে, গান গায় একসাথে ভোর বিহানে। আর জীবনানন্দের সবিতার সঙ্গে মানুষ্য জন্ম নিয়ে আঁধার পথে ভালোবাসার গুঞ্জন।
নতুন কুঁড়ির সঙ্গে বসন্ত শুধু প্রকৃতিতেই নয় মানুষের মনেও জাগায় প্রাণের ছোঁয়া। তাই বসন্তের প্রথম দিনটিকে উদযাপন করতে সবাই মেতে ওঠে উৎসবে। নিজেকে সাজিয়ে তোলে বসন্তের রঙে। সেই রঙে আজ সাজবে পুরো বাঙালি। কেননা আজ ভালোবাসার দিন, নতুন প্রাণে জেগে ওঠার দিন। আজ ফাল্গুন।
ফাল্গুন নামটি এসেছে মূলত ফাল্গুনী নামের নক্ষত্র থেকে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে চন্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষ উভয়ই মেনে চলা হতো। ফাল্গুন ছিল পূর্ণ চন্দ্রের মাস। ১৯৫০-১৯৬০ দশকেই আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা ফাল্গুন পালন শুরু হয়। সেসময় বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের সংস্কৃতি থেকে নিজেদের আলাদা করতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার পাশাপাশি বাঙালি নিয়মে পহেলা ফাল্গুন পালন শুরু করে। তারপর আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা; কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে!
বসন্তকে নিয়ে যেমন আনন্দ উচ্ছ্বাস আছে, তেমনি আছে বিরহের সুরও। প্রেম আর ভালোবাসার ফাঁকে ফাঁকে অভিমান বিচ্ছেদও চলে সমানভাবে। যারা এই বসন্তে তাদের মনের মানুষ থেকে দূরে আছেন তাদের জন্যে লেখা গান- ‘কেউ বলে ফাল্গুন, কেউ বলে পলাশের মাস, আমি বলি আমার সর্বনাশ, কেউ বলে দখিনা কেউ বলে মাতাল বাতাস, আমি বলি আমার দীর্ঘশ্বাস। ’ এ থেকেই বোঝা যায় যে, বাঙালি বসন্তকে জড়িয়ে রাখে হৃদয়ের একেবারে কাছে। তারা বসন্তে মাতে নানা আনন্দ-উৎসবে। আর এসব বসন্তের উৎসবে আলো ছড়ায় বসন্তের গান ও কবিতা। ‘সুখে আছে যারা, সুখে থাক তারা, সুখের বসন্ত, সুখে হোক সারা’। কবিগুরুর এই পঙক্তিমালা আমাদের ছুঁয়ে যাক বার বার। বসন্তের শুভেচ্ছা।