আবু ইউসুফ  
গ্রীষ্মকে বিদায় জানিয়ে শীতের আগমনে শুরু হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস সংগ্রহের কাজ। সারা দেশের মতো বসে নেই ভালুকা অঞ্চলের গাছিরাও। রস সংগ্রহের কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন তারা।
জানা যায়, ভালুকা উপজেলা বর্তমানে মাছে সমৃদ্ধশালী। ফসলী জমির সিংহভাগ এখন মাছচাষীদের দখলে। তবে এক সময় এ অঞ্চলে লাখ লাখ খেজুর গাছ থাকলেও আজ তার সংখ্যা অনেকটাই কম, তার পরেও যে একেবারে কম তা ঠিক নয়। যে গাছগুলো রয়েছে সেগুলো থেকে রস সংগ্রহের জন্য পরিচর্যা করতেই যেন হিমশিম খাচ্ছেন গাছিরা।
যারা গাছ কাটে, তাদের বলা হয় গাছি। খেজুর গাছের অগ্রভাগের একটি নির্দিষ্ট অংশ চিরে বিশেষ ব্যবস্থায় ছোট কলসি (ভাড়) বাঁধা হয়। ফোঁটায় ফোঁটায় রসে পূর্ণ হয় সে কলসি। কোমরে মোটা রশি বেঁধে গাছে ঝুলে গাছ তোলার কাজ করতে হয়। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে গাছ তোলা কাটাসহ বিভিন্ন রকমের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। ছোট বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অনেক ঝুঁকি নিয়েই তোলা কাটা করতে হয়। খেজুর গাছের চাহিদাটা,ফসলি জমির একটা মোট অংশ লিজ ঘের হওয়ায় বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা বহুলাংশে কম।
তাই যেন খেজুর গাছে বিলুপ্তির সুর বাজছে। তাছাড়া আগের মতো মাঠও নেই, নেই সারি সারি এই খেজুর গাছও। তারপরও গ্রামের মাঠে আর গ্রাম্য মেঠো পথের ধারে কত গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আমাদের গ্রাম বাংলায় অতীতে খেজুর রসের যে সুখ্যাতি ছিল তা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। খেজুরের রস শীতের সকালে বসে মুড়ি মিশিয়ে গ্লাস ভরে খেতে বেশ মজা লাগে। সন্ধ্যা রস আরো মজাদার হয়। বেশ লোভনীয় নলেন পাটালি ও গুড়। খেজুর গুড় বাঙালীর সংস্কৃতির একটা অঙ্গ। ক’দিন পরেই প্রতিটি ঘরে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা পুলি পায়েস তৈরির ধুম পড়বে।আগে ঢেঁকি ঘরে চাল কুটার ধুম পড়ে যেত, শোনা যেত ঢেকির ঢক ঢক শব্দ। অতীতে আমাদের গ্রাম বাংলায় কৃষকের ঘড়ে যে ঢেকি ছিল তা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, এসেছে নতুন প্রযুক্তি।
মুড়ি, চিড়া, পিঠা খাওয়া কৃষক পরিবার থেকে শুরু করে সবার কাছে বেশ প্রিয়। এসব আশা নিয়ে শীত মৌসুমে গাছ কাটার কাজে গাছিদের বেশ ব্যস্ত সময় পার হয়।ভালুকার কয়েক শতক গাছির সারা বছরের রুটিরুজির নির্ভর করে এ পেশার উপর।

উপজেলার বনগাঁও গ্রামের গাছি জানান, শীতের শুরুতেই আমরা খেজুর গাছ তোলার জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করি। এভাবেই খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে তা জ্বালিয়ে রস বা গুড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে বেশ আর্থিক সচ্ছলতা আসে আমাদের। তাই খেজুর গাছ তোলার মৌসুম এলেই গাছিদের মুখে ফুটে ওঠে রসালো হাসি। সংগৃহীত রস নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাকিটা বিক্রি করে যে অর্থ পান তা দিয়েই চলে গোটা বছর। এখনো শীত জেঁকে না বসলেও গাছ তোলা, ঠুঙি, দড়ি ও মাটির কলস (ভাড়) প্রস্তুতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন তারা।

আগের মতো আর খেজুর গাছ না থাকলেও মৌসুমের শুরুতেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গাছিরা।