তথ্য প্রযুক্তির উকর্ষতায় কাউনিয়ায় জৌলুস হারাতে বসেছে গ্রামীণ ডাক ঘর
9, June, 2023, 9:44:49:PM
সারওয়ার আলম মুকুল,
কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ
চিঠি লিখেছে বউ আমায় ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে...বাংলা এ জনপ্রিয় গানের মতোই ডাকঘরের চিঠি, টেলিগ্রাম, টেলিফোন সবই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। হাতে লেখা চিঠি আসেনা আর, খাকী রঙের ডাক পিয়ন কে দেখা যায় না, মেঠোপথ কিংবা ব্যস্ত শহরের অলিগলিতে ডাকঘরে খালি বাক্সো। মরচে গায়ে দাড়িয়ে আসে ডাকবাক্সো। ভালবাসা কিংবা প্রতিবেদন, সুখবর কিংবা আবেদন, কোন চিঠি আসে না আগের মতো।
প্রাচীনকালে কবুতরের মাধ্যমে ডাক প্রচলন ছিল। শের শাহের আমলে ঘোড়ার ডাকের প্রচলন শুরু হয়। তিনি ১৭০০ ডাক ঘর নির্মাণ করেছিলেন। বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে বর্তমানে দেশে ডাকঘরের সংখ্যা ৯৮৮৬টি। ১৩০০০ লোকের জন্য একটি করে ডাকঘর স্থাপন করেছে সরকার। একদা একটা সময় ছিল যখন ডাক বাক্সে থাকতো চিঠি, প্রেমিক লিখতো প্রেমিকাকে পত্র জমানো প্রেমে মূল্যায়নে চির খাঁটি। এখনত প্রেম বাতাসে উড়ে পৌঁছে যায় প্রেমিক প্রেমিকার তটে, প্রযুক্তির উন্নয়নে এসেছে বৈচিত্রময় যোগসূত্র এস.এম.এস নামক চিঠিটা এক চাপে চলে যায়, বিজ্ঞানের ব্যাপক আবিষ্কার মোবাইল নামক বস্তুটাতে। নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের কথা কেমনে পৌঁছাইতাম এই গানের উত্তরের জবাব চলেএসেছে। তথ্য প্রযুক্তির চরম উকর্ষতা আর স্মাটফোন এবং হরেক রকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমের কারনে সাদা, হলুদ খামে কাগজের চিঠি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময়ের জনপ্রিয় যোগাযোগের মাধ্যেম চিঠি, ডাকবাক্স, ডাকপিয়ন, ডাক ঘরের আগের মত আর কদর নেই। প্রিয়জনদের ভালমন্দ খবরা খবর পেতে এখন আর ডাক পিয়নের অপেক্ষায় থাকতে হয়না। চিঠির আশায় ঘুরতে হয়না ডাকপিয়ন থেকে ডাকঘরে। একসময় কুরিয়ার সার্ভিস গুলোর কারণে ডাক ঘরের কদও কমে যায়। আর বর্তমানে মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের ফলে চিটি প্রাপ্তি ও প্রেরনে কম বেশি সবাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ডাকঘরে আর্ন্তজাতিক ডাক দ্রব্যাদ্রি গ্রহন, পরিবহন, বিলিকরণ, রেজিষ্ট্রেশনসেবা, পার্সেলসেবা, বুকপোষ্ট, রেজিষ্টার্ড সংবাদপত্র, মানিঅর্ডার, এপ্রেস সেবা, ই-পোষ্ট সেবা, ইন্টেল পোষ্ট সেবা, ডাকঘর সঞ্চয় পত্র সেবা চালু রয়েছে। কিন্তু ডাক বিভাগের ব্যাপক প্রচার-প্রচারনার অভাবে দু একটি কার্যক্রম ছাড়া বাকী গুলোই প্রায় মুখ থুবরে পড়েছে। কর্তৃপক্ষকের উদাসীনতায় নষ্ঠ হচ্ছে জনগুরুত্বপুর্ন স্থানে নির্মিত ডাকবাক্স গুলো। কাউনিয়ায় ২টি সাব-পোষ্ট অফিস রয়েছে। একটি উপজেলা সদরে অপরটি হারাগাছ পৌরসভায়। নিজস্ব ভবন না থাকায় হারাগাছ পৌর সাব-পোষ্ট অফিসের কার্যক্রম চলে ভাড়া করা অফিসে। উপজেলায় ধুমেরকুটি, ভগিরত মাছহারী, নাজিরদহ, মীরবাগ, বড়ুয়াহাট, ভ‚তছাড়া, টেপামধুপুর এলাকায় ৭টি শাখা পোষ্ট অফিস রয়েছে এর মধ্য দু-একটির নিজস্ব ভবন থাকলেও অধিকাংশ পোষ্ট অফিসের নিজস্ব ঘর নেই। শেষে কবির ভাষায় আজকাল ভালবাসার ভিন্ন আঙ্গিকে প্রেম হয় ভিন্ন, তবু আমিই রয়ে গেলাম আঁধারে বিলুপ্ত পুরোনো চিঠির ডাক বাক্স হয়ে ময়লার চাদরে অযতেœ অবহেলায় পুরোনো চিঠির অভিশপ্ত প্রেমিক হয়ে বৈমর্ষ্য জঞ্জালের পরপাড়ে সিক্ত।