সারওয়ার আলম মুকুল, কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি ঃ গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ এই তিনে মিলে ছিল বাঙ্গালীর গ্রামীন ঐতিহ্য। কিন্তু কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে এসব ঐতিহ্য। রংপুরে তিস্তা, ধরলা, মানাস, বুরাল ও ঘাগট নদী বিধৌত এলাকা ছাড়াও রয়েছে কাউনিয়ার তফশিডাঙ্গা, হোকোডাঙ্গা, নেপটিডাঙ্গা,টেপরিকুড়া বিল, ধুমনদীসহ বিভিন্ন জলাশয়। এতো গুলো নদী-নালা, বিল-খাল থাকার পরও রংপুরর কাউনিয়ায় আশানুরূপ দেশি মাছ মিলছে না। মুক্ত জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিলে আগে বর্ষা মৌসুমে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত চলতি মৌসুমে তা অর্ধেকে নেমে গেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম আকাশচুম্বী। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানাগেছে, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, চায়না রিং ও কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, অপরিমিত কিটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দুষন, নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, উজানে বাধঁ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাস স্থলের অভাব, মা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই ধরে ফেলা, ডোবা নালা ছেকে মাছ ধরা, নদী নালায় বানা দিয়ে মাছ ধরা, বিদেশী আগ্রাসী রাক্ষুসে মাছের চাষ ও প্রজননে ব্যঘাত এবং ধাপে ধাপে পানি প্রবাহ বন্ধ করার কারণে কাউনিয়ায় অসংখ্য ডোবা-নালা থাকার পরও ৪১ প্রজাতির দেশী মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। অস্তিত্ব সংকটে মাছ গুলোর মধ্যে রয়েছে ভেদা, পুটি, ডারকা, মলা, ঢেলা, চেলা, কর্তি, চাপিলা, কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, চেলা, শাল, চোপরা শৌল, বোয়াল, আইর, বুড়াল, বাইম, খলিশা, ফলি, চিংড়ি, মালান্দা, খরকাটি, গজার, শবেদা, চেং, টাকি, চিতল, গতা, পয়া, বালিয়া, উপর চউকা, কাকিলা সহ প্রায় ৪১ প্রজাতির মাছ। গ্রামাঞ্চলের হাট বাজার গুলোতে এসব মাছ আগের মতো চোখে পরে না। হাট বাজার গুলোতে দেশীয় মাছের আমদানি একেবারেই কমেগেছে। একসময় এ অঞ্চলের মানুষ ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা বানিয়ে ঝাকি বা মুঠো জাল, চাই ও বড়শি দিয়ে প্রচুর পরিমানে দেশী মাছ ধরতো। নিজের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ বাজারে বিক্রয় করে তাদের সংসার চালাতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে জন সচেতনতার আর সরকারী নজরদারীর অভাবে এসব মাছ আর চোখে পড়ে না। বর্তমানে নদী নালা খাল বিলে পানি না থাকায় এসব প্রজাতির মাছ বংশ বিস্তার করতে পাচ্ছে না। ফলে মৎস্য ভান্ডার নামে খ্যাত কাউনিয়ায় দেশীয় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। মৎস্য কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার জানান, উপজেলায় মাছের চাহিদা ৫৯২৭.৭৪ মেঃটন, উৎপাদন হয় ৫৪২ মেঃটন, ঘাটতি ৪৯৯.৭৪মেঃটন। বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত চার মাস দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ না ধরে প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে হবে। বিদেশি কিছু মাছ স্বল্প সময়ে বৃদ্ধি ও লাভজনক হওয়ায় অনেক মৎস্য চাষি এদিকে ঝুঁকে পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার, কারেন্ট ও রিং জালের ছড়া-ছড়ি ও মা মাছের অভয়াশ্রম গুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দেশী মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে সরকারী জলাশয় গুলোতে ৯০ হাজার টাকার পোনা মাছ অবমুক্ত করা হবে। এলাকার মানুষ সচেতন হলে আবার দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
|