ফয়সাল হাওলাদারঃ
সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোটের ফ্যাসিস্ট ভূমি দস্যু মোক্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার পর আজও গ্রেফতার না হওয়াশ ফুসে উঠেছে ছাত্রজনতা।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে ফ্যাসিবাদের দোসর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন সাবেক ছাত্রলীগের ক্যাডার ও মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন। সংক্ষুব্ধ ছাত্র ও এলাকার সাধারণ মানুষের ভয়ে বহু চেষ্টা করে এলাকায় ফিরে আসতে পারেনি। বিগত ১৫ বছর ধরে এলাকার সাধারণ মানুষ তার দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে আসছে। জনশ্রুতি আছে ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ জন হত্যার পিছনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে। শত কোটি টাকার মালিক হওয়ায় আন্দোলনের বিরুদ্ধে বড় অর্থ জোগানদাতা এ মোক্তার। স্থানীয় জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গত ৫ আগস্ট তাকে খোজতে আসলে এ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, ডেইরি ফার্ম, মার্বেল ফেক্টরি সবই আছে। পুলিশের সাথে জোগ সাজোশ করে সে ইউনিয়নের বিএনপি, হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলাম সহ নিরীহ মানুষ কে শান্তিতে ঘুমাতে দেয়নি। শীঘ্রই তাকে আইনের আওতায় আনা জরুরি।
চিত্রকোটের সমন খানের ছেলে মো. কাবিল খান বলেন, মোক্তার খারা দলিল করে আমার ছোটো ভাই বোরহান খানের ৩৪ শতাংশ জমি দখল করে। তার কাছে জায়গার জন্য ২ লক্ষ টাকা দেই। তার সহায়তার কারণে টাকাটা মেরে দেয়। ভালো মানুষ হলে দেশে আসুক। সকলে আওয়ামী লীগ করে শান্তিতে ঘুমাইলে সে পারবে না কেন।
মোনায়েম খান মুন্না বলেন, খেলার অনুষ্ঠান বাবদ মোক্তার ও বাবুল আমার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছে। এরপর আমার কাছ থেকে মামুনের মাধ্যমে মোক্তার ১০ হাজার টাকা নেয় কাগজ ঠিক করানোর কথা বলে। দোকান করার কথা বলে আবার মোক্তার সরাসরি ১০ হাজার টাকা নেয়। পরে দোকান দেয়নি।
ফালান খান বলেন, মামলা ছুটানোর জন্য ১০ হাজার টাকা দেই। না ছুটাইয়া টাকাটা মেরে দেয়। তার জন্য ৫ বছর জেল খাটি। আমাকে ডাকাতি মামলা দিয়েছিলো মোক্তার। আমার জীনব শেষ।
শচিশ মন্ডলের ছেলে কালিদাস মন্ডল বলেন, আমার ৪০ শতাংশ জায়গা জোর পূর্বক দখল করে। এরপর বিচার করে কিছু টাকা পাই।
উদ্ধোব মন্ডল বলেন, আমার ৬ শতাংশ জমি মোক্তার দখল করে।
রহমত আলীর ছেলে আ. হালিম বলেন, এরা চার পাচ জন মিলে একটা গ্রুপ করে মানুষের জায়গা-জমি, টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। আমি নির্বাচনে দাড়িয়ে ছিলাম। প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ওর বিরুদ্ধে হওয়ায় আমাকে ফেল করায়। ও শতশত কোটি টাকার মালিক হলো কিভাবে।
রোকসানা জান্নাত বলেন, আমার বাবা মোক্তারের কাছে ৯ লক্ষ টাকা পাইতো। সে চিন্তায় আমার বাবা স্ট্রোক করে। এরপর মারাই যায়। আমরা মামলা করবো ওর বিরুদ্ধে। ব্যাংক্যার টাকা লুটপাট করার কারণে চাকরি চলে গেছে। ওর বিরুদ্ধে জ্বাল টাকার কারবার করার কারণে এলাকায় বিক্ষোভ ও মিছিল হয়েছে।
মৃত সোনা মিয়ার ছেলে বাবুল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের শাসন আমলে শুধু বিএনপি করার কারণে আয়নাল খানের ছেলে মোক্তার হোসেন মানুষের টাকা পয়সা মাইরা আমাদের নির্যাতিত করেছে। আমাদের সহ যে কোনো নিরহ মানুষকে হয়রানি করছে। ১৭ টি মামলা দিয়ে আমাদের ফেমিলিকে ধ্বংস করেছে। আমার মেজু ভাই আবুল মেম্বার, আমি, আমার ভাগনি জামাই ওর কাছ থেকে রেহাই পাইনি। ৩২ লক্ষ টাকার হ্যারেজম্যান্ট করছে। ওর ভয়ে কেউ কথা বলতে পারেনি এতোদিন। শ্রমিকদেরকেও মারধর করেছে। ওদের বাড়িতে কাজ করলে টাকা দেয়নি। ৫ আগস্ট দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের মোক্তার আমাদের নামে মামলা দিছে। প্রধান আসামি আমাকে করছে। অথচ ওর বাড়ি ঘর আমি রক্ষা করছি। যারা ওর কাছে টাকা পায় তারাই ওর বাড়িতে হামলা করছে। সেটার উছিলা করে আমাদের নামে মামলা করছে। বিএনপি করাতে আমাদের এতোই অপরাধ? সেখ হাসিনা পালানোর পরও যদি হাসিনারর লোকেরা মামলা দেয় তাহলে দেশ ছেড়ে আমরা কোথায় যাবো? প্রশাসনের কাছে যাই ও টাকাপয়সা দিয়ে বস কইরা ফালায়। ওর জন্য ঠিকমতো বাড়িতে ঘুমাইতে পারিনাই। দেশ ছাইড়া পালাইছি। বিদেশে থাকছি। বিদেশে থাইকা আইসা মুন্সিগঞ্জে হাজিরা দিতে গিয়ে এরেস্ট হইছি। আমার ভাই হাজিরা দিতে গেছে এরেস্ট হইছে। ভাস্তি জামাই হাজিরা দিতে গেছে সেও এরেস্ট হইছে। সবাই জেল খাটছি। আমাদের সামনে জজের কাছি মিথ্যা কথা বলছে। এরকম মিথ্যা মামলা মিথ্যা বক্তব্য দিয়া আমাদের হয়রানি করছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক সৌরভ মাঝি বলেন, কুখ্যাত মোক্তার ভুলে গিয়েছিলো সে নিজেও একজন সাবেক ছাত্র। এদেশের সৃষ্টি থেকে শুরু করে প্রতিটি বাকে বাকে ছাত্র সমাজের যুগান্তকারী ভূমিকা রয়েছে। অথচ এই কুখ্যাত আওয়ামী দালাল শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম কে তুচ্ছতাচ্ছল্য করেছে। একে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সংগঠক সম্পা বলেন মোক্তার ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ১৭ জুলাই আন্দোলনকারীদের আহাম্মক বলে পোস্ট দেয়। আমাদের কাছে স্ক্রিনশুট আছে। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে দ্রুতই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ইয়ামিন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এই কুলাঙ্গার ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে স্ট্যাটাসসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে। ফ্যাসিবাদের ফয়দা লুটে কোটি কোটি টাকার গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, ফেক্টরিসহ অবৈধ সম্পদ গড়েছে। এই ফ্যাসিস্টদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক রাতুল হাসান শান্ত বলেন, বিষয়টি এসপি সাহেব ও ইউএনও সাহেবের নলেজে দিয়েছি। সকলে মিলে ওকে মব জাস্টিস থেকে বাচিয়ে আইনের আওতায় আনা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক আরাফাত প্রিতম বলেন, ওকে এরেস্ট করার জন্য ছাত্র সমাজের পাশে থাকবো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক জাকারিয়া আহমেদ সাদ বলেন ওর বিষয়টি একশনের জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। ওর বাচার উপায় নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ইবরাহীম নিরব বলেন, ওর বিষয়টি আমি পত্রিকায় দেখেছি। ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ওকে ছাড় নেই। প্রয়োজনে ছাত্রদের দিয়ে আবার মামলা করে এরেস্ট করাবো।
এ বিষয়ে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, নতুন আসায় আমি মোক্তারের কারখানা, গাড়ি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটের বিষয়ে জানিনা। খতিয়ে দেখে উপরমহলে জানাবো। ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় পলাতক মোক্তারের বিষয়ে পুরোপুরি জানিনা।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আকতার বলেন, আমি বিষয়টি দেখবো।
|