ভালো-মন্দ দুটোই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। তবে ভালো কাজ করতে তিনি বান্দাদের আদেশ দিয়েছেন। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কিছু মন্দ কাজ খুবই নিকৃষ্টমানের। এসব কাজ যারা করে আল্লাহ তাদের প্রতি লানত করেছেন; তাদের ধ্বংস কামনা করেছেন। কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তাআলা সেসব মানুষের বিবরণ দিয়েছেন।
কোরআনের ভাষায় অভিশপ্ত যারা
কোরআনের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অভিশপ্তদের একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো :
ক. কাফির
খ. আল্লাহর কিতাব বিকৃতকারী
গ. মিথ্যুক
ঘ. সত্য ও ইসলামের প্রমাণ গোপনকারী
ঙ. মুনাফিক
চ. অত্যাচারী
ছ. আল্লাহর ব্যাপারে অপবাদদাতা
জ. আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গকারী
ঝ. সম্মানিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো এবং অপবাদ দেওয়া
ঞ. আল্লাহ ও রাসুলের অসন্তুষ্টিজনক কথা বলা
ট. আল্লাহর ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করা।
এই তালিকা দেখে নির্দ্বিধায় বলা যায়, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অস্বীকার করে তাদের জন্যই আল্লাহর অভিশাপ নির্দিষ্ট নয়। বরং মিথ্যুক, প্রতারক, মুনাফিক ও আল্লাহর ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণকারীদের জন্যও তা প্রযোজ্য। তাদের পরিণামও হবে ভয়াবহ।
অভিশপ্তদের পরিণাম
আল্লাহ যাদের অভিশাপ দিয়েছেন তাদের নিকৃষ্ট পরিণতির কথা কোরআনে তিনি উল্লেখ করেছেন। পার্থিব জীবনে আল্লাহ তাদের সাহায্য করবেন না। পরকালে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি এবং নিকৃষ্ট পরিণাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরাই তারা, যাদের আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন। আল্লাহ যাকে অভিশাপ দেন কখনো তুমি তার কোনো সাহায্যকারী পাবে না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫২)
তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ তাদের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন। তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন জাহান্নাম। তা কত নিকৃষ্ট আবাসস্থল!’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত: ৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম। তোমার কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ৩৪)
আরো ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ। তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৫২)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তাদের দুনিয়া-আখিরাতে অভিশপ্ত করেন। তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত: ৫৭)
অন্য আয়াতে বলেন, ‘তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন জ্বলন্ত আগুন।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬৪)
অভিশপ্ত হওয়ার কারণ
কুফর : আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অস্বীকার করার নাম কুফর। কাফিরদের জন্য রয়েছে আল্লাহর অভিশাপ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা কুফরি করে এবং কাফিররূপে মারা যায় তাদের প্রতি আল্লাহ, সব ফেরেশতা ও মানুষের অভিশাপ।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬১)
মিথ্যাবাদিতা : মিথ্যা কথা বলা খুবই জঘন্য কাজ। মিথ্যুকদের আল্লাহর অভিশাপ অনিবার্য। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার কাছে জ্ঞান আসার পর যে ব্যক্তি এ বিষয়ে তোমার সঙ্গে তর্ক করে তাকে বলো, এসো, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের, আমাদের নারীদের এবং তোমাদের নারীদের, আমাদের নিজেদের এবং তোমাদের নিজেদের। তারপর আমরা বিনীত আবেদন করি এবং মিথ্যুকদের দিই আল্লাহর অভিশাপ।’ (সুরা আলে-ইমরান, আয়াত : ৬১)
হত্যা ও খুনাখুনি : হত্যা ও খুনাখুনি আল্লাহ মোটেও পছন্দ করেন না। তাই তিনি হন্তারককে অভিশপ্ত বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘ইচ্ছা করে কেউ কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন। তাকে অভিশাপ দেবেন। তার জন্য প্রস্তুত রাখবেন মহাশাস্তি।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৯৩)
বিশ্বাসঘাতকতা : বিশ্বাসঘাতকতা এক অমার্জনীয় অপরাধ—আল্লাহর কাছেও, মানুষের কাছেও। তাই বিশ্বাস ভঙ্গকারী অভিশপ্ত। আল্লাহ বলেন, ‘অঙ্গীকার ভাঙার জন্য আমি তাদের অভিশাপ দিয়েছি। তাদের হৃদয় কঠোর করেছি। তারা শব্দগুলোর আসল অর্থ বিকৃত করে। তাদের যা উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তার একাংশ তারা ভুলে গেছে। তাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ছাড়া সবাইকে তুমি সর্বদা বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখবে। তাদের ক্ষমা করো এবং উপেক্ষা করো। আল্লাহ সৎ লোকদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১৩)
মুনাফিকি : দুমুখো কপট মানুষ খুবই ইতর প্রকৃতির লোক। তাই মুখে ঈমান রেখে অন্তরে কুফরি গোপন করা মুনাফিকদের আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মুনাফিক নারী-পুরুষ ও কাফিরদের আল্লাহ জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৬৮)
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা : মানুষকে আল্লাহ সামাজিক জীব হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। সমাজের ভারসাম্য রক্ষায় এ বন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদ ইসলামে অপরিসীম। তাই এ সম্পর্ক ছিন্ন করা অভিশপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকার করার পর যারা তা ভাঙে, যে সম্পর্ক আল্লাহ অক্ষুণ্ন রাখতে আদেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ এবং তাদের জন্য রয়েছে মন্দ নিবাস।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৫)
সাধ্বী নারীদের অপবাদ দেওয়া : নারীর অধিকার রক্ষায় ইসলাম কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। তাদের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলাকে ইসলামে অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। যথাযথ প্রমাণ ছাড়া কোনো নারীর প্রতি কেউ অভিযোগের আঙুল তুললে তার জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। অপবাদদাতা ব্যক্তিকে আল্লাহ অভিশপ্ত ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘সাধ্বী, সরলমনা ও ঈমানদার নারীদের প্রতি যারা অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত। তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২৩)
রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দেওয়া : শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রিয়তম বান্দা। তাঁর অনন্য-অতুলনীয় আখলাক-শিষ্টাচারের নজির সৃষ্টির ইতিহাসে আর নেই। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলা আল্লাহর অভিশাপ-অসন্তুষ্টির অন্যতম কারণ। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ও রাসুলকে যারা পীড়া দেয়, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশাপ দেন। তাদের জন্য তিনি প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৭)
আল্লাহর অভিশাপ থেকে বাঁচতে হলে, জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই এসব মন্দ কাজ পরিত্যাগ করতে হবে। নিজেকে রাঙাতে হবে ইসলামের আলোয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাঁর অভিশাপ থেকে রক্ষা করুন। দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।