নাসির উদ্দিন মাহমুদ পরপর তিনবার উত্তরা ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন, যেখানে সবাই শিক্ষিত। সে কখনো এমন কিছু করেনি যে, তিনি দুর্নাম করতে পারে। কখনো তার নামে খারাপ কিছু শুনিনি। এ ঘটনাটি শুনে আমরা বিস্মিত, হতচকিত।
ঢালিউডের চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার নাসির উদ্দিন মাহমুদ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির (জাপা) গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার (১৪ জুন) রাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সংবাদমাধ্যমকে এসব কথা বলেন। তিনি জানান, নাসির জাতীয় পার্টির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্ষদ প্রেসিডিয়াম সদস্য। জাপা গঠনের সময় থেকেই তিনি যুক্ত ছিলেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘নাসির উদ্দিন মাহমুদ পরপর তিনবার উত্তরা ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন, যেখানে সবাই শিক্ষিত। সে কখনো এমন কিছু করেনি যে, তিনি দুর্নাম করতে পারে। কখনো তার নামে খারাপ কিছু শুনিনি। এ ঘটনাটি শুনে আমরা বিস্মিত, হতচকিত।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা দেখছি, পর্যবেক্ষণ করছি। তিনি যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দলীয় সূত্র জানায়, নাসির উদ্দিন মাহমুদ জাতীয় পার্টির গঠনের সময় থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাঝখানে অনেক দিন দলে সক্রিয় ছিলেন না, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সবশেষ ২০২০ সালের জাতীয় পার্টির সম্মেলনে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়।
জানা গেছে, নাসির ইউ মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য। তিনি ৩৭ বছর ধরে ডেভেলপার ব্যবসায়ে আছেন। ১০ বছর ধরে মাহমুদ কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। কুঞ্জ ডেভেলপার্সের আগে তিনি মাহমুদ বিল্ডার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের এমডি ছিলেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেন। তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান সরকারের গণপূর্ত অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি), রাজউক, রেলওয়েসহ সরকারি-বেসরকারি নানা ঠিকাদারি কাজ করেন।
নাসির ইউ মাহমুদ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সাবেক নির্বাহী পরিষদের সদস্য। তিনি ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের উত্তরা ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি, লায়ন ক্লাবের ঢাকা জোনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এদিকে, ধর্ষণ এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পরীমনির করা মামলায় প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদেরে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিদেশি মদসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য।
রোববার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেন পরীমনি। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় বনানীর বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত জানান তিনি।
ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে সোমবার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয়জনের নামে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন পরীমনি।
আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সোমবার (১৪ জুন) সকাল থেকেই রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয় উত্তরার এই বাড়িটিতে অবস্থান করছেন প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ।
বাড়িটির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি অমিসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় আরও তিন নারীকে। তারা হলেন- লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা (২৪)। জব্দ করা হয় দেশি-বিদেশ মদসহ মাদকদ্রব্য।
পুলিশ বলছে, এই বাসায় প্রতিদিন ডিজে পার্টির আয়োজন করতেন নাসির। উঠতি বয়সী তরুণীদের দিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ করানো হত। বাড়িটিতে যাতায়াত ছিল অনেকের।
গোয়েন্দা বিভাগ (উত্তর-তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর ও উত্তরা) এবং সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বলেন, জনপ্রিয় নায়িকা পরীমনির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভিযানকালে নাসিরের বাসা থেকে বিদেশি মদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। তার বাসায় উঠতি বয়সী নারীরা এসে মদপান করতেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তার বাসায় ডিজে পার্টির আয়োজন ছিল বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।