নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুডস লি. কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ে নিহতদের মধ্যে পঁয়তাল্লিশ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।
সংস্থাটি অচিরেই আলাদাভাবে নিহতদের প্রত্যেকের পরিচয়ের তালিকা প্রকাশ করবে। এমনকি সেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
রোববার (০১ আগস্ট) রাতে সময় নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন আগুনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি’র অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।
সময় নিউজকে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মামলাটির তদন্তভার পাওয়ার পর থেকে আমরা সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে গুরুত্ব ও প্রাধান্য দিয়ে নিবিড়ভাবে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি, যা তদন্তের প্রতিবেদন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে সবকিছু খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে আগুনের সূত্রপাত ও পরবর্তীতে এতোগুলো মানুষের প্রাণহানি কেন হলো সেই প্রশ্নকে সামনে এনে আমরা তদন্ত কাজ করছি।
ইতোমধ্যে তদন্তের বেশ অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণাদিসহ স্বল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে সক্ষম হবো।
পরিচয় শনাক্ত হওয়া লাশগুলোর ব্যাপারে তিনি বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা পঁয়তাল্লিশটি লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছি। বাকীগুলো খুব শিগগিরই ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। এই ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন হলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে লাশের পরিচয়সহ পূর্ণ তালিকা বুঝিয়ে দেব। পরে জেলা প্রশাসক সেই তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ নির্দিষ্ট স্বজনদের কাছে লাশগুলো হস্তান্তর করবেন।
এ ব্যাপারে সিআইডির নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন সময় নিউজকে বলেন, আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও তদন্ত প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত কাজ করছি। যার কাছ থেকে যা যা তথ্য পেয়েছি সবগুলো গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে তদন্ত কাজ করছি।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ সময় নিউজকে বলেন, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ লাশের পরিচয় শনাক্ত করেছে কিনা বিষয়টি আমাকে এখনও নিশ্চিত করে জানানো হয়নি। তবে সিআইডি যদি ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে সবার পরিচয় শনাক্ত করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে আমারা একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সেগুলো বুঝে নিয়ে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবো। লাশ দাফনের জন্য নিহত ব্যক্তির পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
গত ৮ জুলাই রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড কারখানায় আগুনে পুড়ে ৪৮ ও ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়। ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত তিনজন ঢাকা মেডিকেলে মারা গেলে তাদের পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় তখনই স্বজনদের কাছে লাশগুলো হস্তান্তর করা হয়। পরে ভবন থেকে উদ্ধার ৪৮ জনের লাশগুলো আগুনে এতটাই পুড়ে যায় যে দেখে চেনা বা শনাক্ত করা তখন সম্ভব হয়নি। যে কারণে ওই লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করলে ওই মামলায় গত ১০ জুলাই আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মামলাটি অধিক তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অপরদিকে, স্বজনরা এখন পর্যন্ত লাশ বুঝে না পেলেও হাসেম ফুড বেভারেজের মালিক আবুল হাসেম, ও তার চার ছেলে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। হাসেম ফুডসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহান শাহ আজাদ, উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে রয়েছেন।