মুহিত: দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এক রুপান্তরের নায়ক
1, May, 2022, 12:07:37:AM
আবুল মাল আব্দুল মুহিত। দেশের ৫০ বছরের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় যিনি ছিলেন এক রুপান্তরের নায়ক। তিন দফায় এক যুগ পালন করেছেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব।
যিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন আমরা পারবো-বাংলাদেশ পারবে। সততা সরলতা আর অকপটে সত্য বলার গুণের কারনে তাঁকে মনে রাখবে মানুষ।
কর্মবহুল আর বণার্ঢ্য একটা জীবন অতিবাহিত করলেই হাসিমুখে চলে যেতে হয়, পরপারে চলে যাবার পরও যেনো তার চোখে মুখে সেই ছবিটা ছিলো স্পষ্ট।
বহুবার দেশের অর্থনীতিকে খাদের কিনারে থেকে যিনি টেনে তুলেছেন, সেই আবুল মাল আবদুল মুহিত চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার কখনও দেখা যাবে না তার শিশুর মতো হাসি।
সিলেটের এই সূর্যসন্তানের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি। মা-বাবার তৃতীয় সন্তান, তাঁর ডাক নাম ছিলো শিশু। সে কারণেই বুঝি তাঁর জীবন জুড়ে ছিলো শিশুর সারল্য।
বিশ্বের শীর্ষ দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আবুল মুহিত সব সময়ই নিজের সততা ও দায়িত্ববোধকে রেখেছেন সবার উপরে। সীমাহীন আনুগত্য ছিল দেশের প্রতি।
মেধাবী ছাত্র আবদুল মুহিত ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে তৎকালীন সারা প্রদেশে আইএ (এখনকার এইচএসসি) পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন।
১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাস করেন।
পাকিস্তানের ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ১৯৭১-এর জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন।
বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় তিনি একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব।
২০০৮ সালের নিবার্চনে বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব পান অর্থমন্ত্রীর। সে বছর তাঁর দেয়া ৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট ১০ বছরে তার তার ধরেই গড়ে দাঁড়ায় চার লাখ ৬৪ হাজার কোটিতে।
১০ বছর অর্থমন্ত্রী থাকাকালে, তার হাত ধরেই দেশ পেয়েছে পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো বড় প্রকল্পগুলো।
অর্থনীতির মতো কাটখোট্টা বিষয় সামলানো মুহিত ছিলেন আপদমস্তক একজন সংস্কৃতিমনা আর গান পাগল মানুষ। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিলো ৪০ হাজারেরও বেশি বই।
নিজের আত্মজীবনী লেখার কাজও প্রায় শেষ করে এনেছিলেন তিনি। কিন্তু সেটির প্রকাশ দেখার আগেই চলে গেলেন সৎ ও কাজ পাগল আবুল মাল আব্দুল মুহিত।