পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল নিয়ে ওঠায় নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে বিক্ষোভ করেছেন বাইকাররা। অনেকেই অভিনব কায়দায় পিকআপ ভ্যানে বাইক তুলে দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সেতু পার হয়েছেন। পরে এমন ধরনের পিকআপ ভ্যানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা বহুমুখী সেতুতে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু চলাচল শুরুর প্রথম দিনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই তরুণের মৃত্যু, সেতুর নাট বল্টু খুলে নিয়ে টিকটিক করা, দাঁড়িয়ে সেলফি তোলাসহ নানা ধরনের অপকর্মের কারণে সেতুতে বাইক চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
সোমবার সকালে মোটরসাইকেল চলাচলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার খবর না জেনেই জাজিরা টোল প্লাজায় আসেন আবদুর রহমান। নির্দেশনা জানিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হলে ১৩০০ টাকায় পিকআপ ভাড়া করে সেটি বাইক তুলে নিয়ে পারি দেন পদ্মা সেতু।
তার মতো এমন অনেকেই বেকায়দায় পড়েছেন জরুরি কাজে বের হওয়া বাইক চালকরা। তারা বলছেন, মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরো দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। তারা দাবি করেছেন, চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয়ার বিষয়টি প্রচার না করায় সমস্যা আরও বেড়েছে।
পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তেও টোল প্লাজার টিকিট কাউন্টারেও বিক্ষোভ করেন অনেকে। তারা বলছেন, সড়কে দুর্ঘটনা হতেই পারে। যে সমস্যাগুলো হয়েছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে কাজ করা যেতে পারে। তাই বলে বাইক নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি।
ভোর ৬টা থেকেই মোটরসাইকেল আরোহীরা দু’প্রান্তের টোল প্লাজার আসতে শুরু করেন। জোর করে সেতুতে ওঠার চেষ্টা করেন তারা। বাধা পেয়ে সকাল ৯টার দিকে বাইকাররা টোল প্লাজার সামনে অন্যান্য যানবাহন চলাচল আটকে দেন। এতে যানজট লেগে যায়।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট সোহেল হাসান বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মোটরসাইকেল চালকদের অনুরোধ করার পর অনেকে চলে যান। আবার কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেন। তখন তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় প্রায় আধঘণ্টার জন্য টোল প্লাজার চার লেন দিয়ে অন্য কোনো যান পার হতে পারেনি। এক পর্যায়ে ফেরি চালু হওয়ার খবর পেয়ে মোটরসাইকেল চালকরা শিমুলিয়া ঘাটের দিকে চলে যান। তাদের জন্য ফেরি কুঞ্জলতার ব্যবস্থা করা হলেও সংকট কাটেনি।
এক সঙ্গে দেড়শ’ মোটরসাইকেল জড়ো না হলে ছাড়ছে না ফেরিটি। বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ জানান, একসঙ্গে দেড়শ’-দুইশ’ মোটরসাইকেল ঘাটে জমা না হলে পরবর্তী ফেরি চলবে না।
একই রকম চিত্র দেখা গেছে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের মঙ্গলমাঝি ঘাট এলাকায়। দুপুর ১২টায় সেখানে ফেরিতে করে পারের অপেক্ষায় ছিল শতাধিক মোটরসাইকেল। ঘাট কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, কমপক্ষে একশ’ মোটরসাইকেল হলে তারা ফেরি ছাড়বেন।
এদিকে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতুর উপর কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে তার জন্য নিয়মিত তদারকি চলছে। তারা জানান, প্রথম দিনে বিশৃঙ্খলার বেশিরভাগ ঘটনার জন্য দায়ী মোটরসাইকেল। এজন্য এই দ্বিচক্র যানের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথম দিনে নিয়ম ভেঙে যারা সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন, ভিডিও করেছেন; তাদের বেশিরভাগই বাইকার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সেতু বিভাগ।
রোববার (২৬ জুন) রাতে তথ্য অধিদফতরের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে।