চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাঙলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা - একটি দুর্বোধ্য সমীকরণ!
4, September, 2024, 2:53:7:AM
মাসুম হাসান
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি, ডেটা ও স্বয়ংক্রিয়তার যুগান্তকারী পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব (4IR) সংঘটিত হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), রোবোটিকস এবং বিগ ডেটার মতো প্রযুক্তিগুলি এখন নতুন শিল্পবিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু। এই বিপ্লব শিক্ষাব্যবস্থার জন্যও এক বিশাল পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু, প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এই পরিবর্তনের সঙ্গে কতটা খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম?
### শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজনীয়। বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে নতুন কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও কারিকুলামের আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষণের অভাব এবং বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন পরিকল্পনা কারণে নতুন কারিকুলাম সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।
### উচ্চশিক্ষায় চ্যালেঞ্জ ও উন্নয়নের উদ্যোগ
উচ্চশিক্ষায়, ইউজিসি (UGC) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আউটকাম বেজড এডুকেশন (OBE) ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হতে নির্দেশনা দিয়েছে। যদিও এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জনে সহায়ক, এটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন গভীর বিচার-বিশ্লেষণ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষক প্রশিক্ষণ। শুধু নির্দেশনা প্রদান করে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান উন্নয়নের জন্য ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (IQAC) গঠিত হলেও, এসব সেলগুলো যদি শুধুমাত্র নিয়মাবলি পূরণের জন্য কার্যকর হয় এবং কার্যকারিতা সঠিকভাবে পর্যালোচনা না করা হয়, তবে এটি পর্যাপ্ত ফলপ্রসূ হবে না।
### শিল্পক্ষেত্রের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয়
একদিকে যেখানে শিক্ষাব্যবস্থা নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে আধুনিকায়নের চেষ্টা করছে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে চাকরিদাতাদের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ গ্র্যাজুয়েট সরবরাহ করতে পারছে না, তার একটি উদাহরণ ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার পদে নিয়োগ পরীক্ষা। পরীক্ষায় প্রায় ৫ হাজার প্রার্থী আবেদন করলেও, কোনো প্রার্থীকে চাকরির জন্য যোগ্য মনে করা হয়নি।
### প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চাহিদা পূরণে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। অনেক শিক্ষক এখনও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত নন, যা শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার কারণ হতে পারে। এছাড়া, উচ্চশিক্ষার জন্য সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্সের সুযোগ সীমিত, যা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটি বড় বাধা।
### ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুপারিশ
উন্নত বিশ্বে শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক স্থাপন করে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এই ধরণের সুসমন্বয় ও পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পক্ষেত্রের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষার কার্যকর পুনর্বিন্যাস অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তি সংযুক্তকরণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, এবং শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অগ্রসর হওয়ার পথে সাহায্য করতে পারে।
সরকারের উচিত এই বিষয়ে আরও বিনিয়োগ করে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা, যাতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারে এবং দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথকে সুগম করতে পারে।
*লেখক: বার্তা সম্পাদক, নতুন বাজার ৭১.কম
**লেখাটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লজিক ব্যবহৃত হয়েছে।