উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। এই কোকিলকণ্ঠীর চিরপ্রস্থানে ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসে একটি সুরেলা অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। তিনি চলে গেলেও তার গান রয়ে যাবে মানুষের হৃদয়ে।
লতা মঙ্গেশকরের জীবনে যশ-খ্যাতি-প্রতিপত্তি কোনো কিছুরই অভাব ছিলো না। জীবন সাগরে তিনি ছিলেন সফল নাবিক। অনেকেই তার মতো হতে চান। এক জীবনে তার অবস্থানে পৌঁছানো সহজ নয়। কিন্তু লতা মঙ্গেশকর নিজেই এমন জীবন ফিরে পেতে চান না!
জাভেদ আখতারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের শেষ ইচ্ছা জানিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। জাভেদ জানতে চেয়েছিলেন, পরের জন্মে কী হতে চান লতা? বিষণ্ণ হাসি হেসে এই সুরসম্রাজ্ঞী বলেছিলেন, ‘আর যেন জন্মাতে না হয়! যদি জন্মাতেই হয়, তা হলে অন্য কিছু হব। লতা মঙ্গেশকর হয়ে যেন আর না জন্মাই।’
লতার বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর মাত্র ৪২ বছর বয়সে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর কে ধরবে সংসারের হাল, এ চিন্তায় লতার মা সুধামতী দিশেহারা। শেষ পর্যন্ত দায়িত্বটা এসে পড়ে ১২ বছরের মেয়ে লতার কাঁধে। বাবার মৃত্যুর মাত্র সাতদিন পরই শোক লুকিয়ে লতা ‘প্যাহলি মঙ্গলাগাঁও’ ছবির শুটিংয়ে যান। মারাঠি এ ছবিটিতে অভিনয় করে আর গান গেয়ে ক্যারিয়ার শুরুর পাশাপাশি জীবন সংগ্রামটাও শুরু করেন কিংবদন্তি এই শিল্পী। সংসারের দায়িত্ব কাঁধে থাকার কারণেই তিনি নিজেকে নিয়ে কোনোদিন আলাদা করে ভাবার সুযোগ পাননি। আর তাই ৯২ বছরের দীর্ঘ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চিরকুমারিই রয়ে গেলেন লতা মঙ্গেশকর।
প্রসঙ্গত, লতা মঙ্গেশকর ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী। দেশটির ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে সফল গায়িকা তিনি। ১৯৪২ সালে ১৩ বছর বয়সে তার গানের ক্যারিয়ার শুরু হয়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি গেয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি গান। তার কণ্ঠে সুর পেয়েছে বিভিন্ন ভাষা। বরেণ্য এই শিল্পী ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘ভারত রত্ন’ পদকে ভূষিত হয়েছেন। এ ছাড়া দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ সব প্রাপ্তিই যুক্ত হয়েছে তার ঝুলিতে।
আক্ষেপের সুরে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘লতা মঙ্গেশকর হতে গিয়ে বা হওয়ার পরে আমায় যে কী পরিমাণ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, সে শুধু আমিই জানি।’