বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার প্রথম শহীদ ল্যান্স নায়েক গানার ক্লার্ক শামছুল হক ফকির। তিনি ১৯৬৮ সনে আর্টিলারী কোরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক ট্রেনিং গ্রহণ করে দীর্ঘ ছয় মাস তার পর পশ্চিম পাকিস্তান হতে পূর্বে পাকিস্তানে চট্রগ্রামে দায়িত্ব পালনে বদলি হয়ে আসেন। তারপর সৈয়দপুর, রংপুর, নেত্রকোনা, কুমিল্লা, ধাকার বিভিন্ন সেনানিবাসে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে জানুয়ারী মাসে আবার বদলি হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে তিন মাস দায়িত্ব করেন ১৯৭০ সালে এপ্রিলের শেষ দিকে আবার পূর্বে পাকিস্তানে ময়মনসিংহ খাগডহর ই,পি আর ক্যাম্পে মুজাহিদ ট্রেনিং সেন্টারে আর্টিলারী রেজিমেন্টের গানার ক্লার্কে দায়িত্ব পালন করতে পাঠান হয়। তারপর দেশের সার্বিক দূরাবস্থার কথা বেভেন তাই স্বাধীনতা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি কিছু সংখ্যক মুজাহিদ ময়মনসিংহ জেলা এবং তার নিজ এলাকা ভালুকা থানা থেকে বাছাই করে নিয়ে একটি সুপারিকপ্লিত নেটওয়ার্ক স্থাপনে নেতৃত্ব দেন। কেন এই নগণ্যতা এই প্রশ্নের উত্তর খোজে পেতে মাতৃভূমির স্বাধীনতার স্বপ্নে শহীদ শামছুল হক ফকির নিজের জীবনবাজী রেখে মাতৃভূমির ভালবাসায় । ভুলে গিয়েছিলেন স্ত্রী,পুত্র,ভাই, বোন । জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতা ঘোষণা করায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খুবয় খারাপ দেখে শহীদ শামছুল হক কের বড় দুই ভাই ১২ মার্চ ১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ খাগডহর ই,পি আর ক্যাম্পে গিয়ছিলেন তাকে বাড়ী আনার জন্য, বাড়ী আসার কথা বল্লে উত্তরে বেলেছিল সামরিক প্রতিটি সেনা সদস্য কোরবাণী মানা পশ্তর মত ইচ্ছে করলেয় চলে যাওয়া যায় না। তবে আমার জন্য দোয়া করবেন, জীবন মরণ আল্লাহর হাতে, জানিনা আর কোন দিন তুমাদের সাথে দেখা হবে কিনা। আমার স্ত্রী,পুত্র,দেরকে আপনারা দেখবেন, আর যদি দেখা হয় বাংলার স্বাধীন পতাকা হাতে নিয়েই দেখা করব ইনশাল্লাহ। ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ ঢাকার বাগ পুলিশ লাইনসহ ঢাকার সর্বত্র সাধারণ বাঙ্গালীর উপর সামরিক হামলা চালানো হয় । ২৬ শে মার্চ সামরিক বিশেষ ঘোষণা মোতাবেক বাঙ্গালী সৈনিকদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নেওয়া শুরু করেন পাকিস্তানী হানাদার পাক সেনারা। সে মোতাবেক ময়মনসিংহ খাগডহর ই,পি আর ক্যাম্পে অভিযানে শুরু করে । এই অভিযানে অনেক বাঙ্গালী বিক্ষপ্তভাবে অস্ত্র জমা দিয়ে দেন। কিন্তো শেষ পর্যান্ত শহীদ শামছুল হক সহ ১০/১৫ জন বাঙ্গালী সৈনিক ও মুজাহিদ অস্ত্র জমা দিতে অস্বীকার করেন। ২৬ শে মার্চ দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ শে রাত ১২.২০ মিনিটে শহীদ শামছুল হক অনেক বাকবিতন্ডয় নিজের জীবনের কথা ভুলে গিয়ে এক পর্যায়ে পাকিস্তানী পাঞ্জাবী সৈনিকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বলেন, অস্ত্র জমা দেওয়া মানেই বাঙ্গালী সৈনিকদের আত্নসমর্পন করা । কাপুরুষের মত মরতে চাই না তোদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পূর্ব বাংলায় স্বাধীনতা আনব। তারপর জয় বাংলা বলে সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। পাকিস্তানী পাঞ্জাবী সেনাদের বিরুদ্ধে । এই সম্মুখ বন্দুকযুদ্ধে গুলি বিনিময় অবস্থায় হঠাৎ পাক হানাদারদের একটি বুলেট শহীদ শামছুল হক ফকিরের মাথায় আঘাত করে, মাথার খুলি উড়িয়ে নেয়, সাথে সাথেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শাহাদৎ বরণ করেন। তিনি প্রথম নিজের তাজা রক্ত দিয়ে ময়মনসিংহ খাগডহর ই,পি আর ক্যাম্পের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঘটান । সেদিনের যুদ্ধে শহীদ শামছুল হক ফকির সহ আরো কয়েকজন বাঙ্গালী সেনা ও মুজাহিদ শহীদ হন । শহীদ শামছুল হক ফকির সহ তাদের লাশ কালীরবাড়ী গোরস্থানে দাফন সুসম্পন্ন করা হয় । শহীদ শামছুল হক ফকিরের সৈনিক নং ১২৭৯৯৫০ (আর্টিলারি কোর) মুক্তি নং ০১১৫০৬০৪১৬ । এই বীর যুদ্ধা ১৯৪২ সালে ভালুকা থানার মাঠের ঘাঠ কাঠালী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন । শাহাদাৎকালে স্ত্রী এক ছেলে মোঃ রফিকুল ইসলাম, দুই কন্যা রেখে জান ।