সবুজের মাঝে অতিথি পাখি, প্রজাপতি, গুইসাপ, বেজি, গিরগিটি, কাঠবিড়ালিসহ নানা ধরনের প্রাণীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র। গ্রাম্য প্রকৃতির আবহের কারণেই জাহাঙ্গীরনগরকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলা হয়ে থাকে। তবে যে জীববৈচিত্রের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়েকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলা হয়ে থাকে তা হুমকির মুখে পড়েছে।
অধিক গাছপালা ও তৎসংলগ্ন ঝোপঝাড় বন্যপ্রাণীর জন্য প্রাকৃতিক অভয়াশ্রমের কাজ করে। তবে প্রশাসনের উদাসীনতাসহ নানা কারণে নষ্ট হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বণ্যপ্রাণীদের আবাসস্থল।
সর্বশেষ রোববার (১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলের তিন একরেরও বেশি জায়গা আগুনে পুড়েছে। রোববার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সাড়ে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ওই এলাকা আগুনে পুড়তে থাকে। এর মধ্যে আগুন নেভাতে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। প্রায়ই জঙ্গলগুলোতে এমন আগুন জ্বলতে দেখা যায় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের বাসভবনের পাশে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়ক থেকে একটু ভেতরের দিকের জঙ্গলে ছোট ছোট গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেখানে ৩৫ থেকে ৪০টি গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছিল। সেসবও আগুনে পুড়ে গেছে। এ সময় দুটি শিয়ালকে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়। জঙ্গলের ভেতরের দিকে তখনও দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট কার্যালয়ে জানানো হলে তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।
এভাবে প্রাণকূলের আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ার ফলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যও হারাতে বসেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ক্যাম্পাসের জঙ্গলগুলোতে সাপ, বেজি, শিয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী বাস করে। কিন্তু প্রতি বছরই এসব জঙ্গলে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এতে করে এসব প্রাণীর খাবার ও বাসস্থানের সংকট সৃষ্টি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা সময় ক্যাম্পাসে নানা ধরনের বন্যপ্রাণীর দেখা মিলতো। দিনকে দিন সেসব কমে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনই সতর্ক না হলে অদূর ভবিষ্যতে এসব প্রাণী হারিয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত এস্টেট কর্মকর্তা ও মুখ্য উদ্যানতত্ত্ববিদ নুরুল আমিন বলেন, ‘কে বা কারা আগুন জ্বালিয়েছে তা আমরা জানতে পারিনি। তবে আগুন লাগানোর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা নেভানোর চেষ্টা করি।’ এছাড়া এস্টেট কার্যালয়ে জনবল সংকট রয়েছে বলেও জানান তিনি।