দিনাজপুরে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরা খানসামা যার অন্যতম পুরাতন মুসলিম স্থাপত্য ‘আওকরা মসজিদ’
20, February, 2016, 12:19:8:PM
লায়ন ইসলাম বাবু
দিনাজপুর জেলার উত্তর-পূর্বের একটি উপজেলার নাম খানসামা। মাত্র ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলাটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরা। যার অন্যতম আঙ্গারপাড়া ও গোয়ালডিহি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মির্জার মাঠে অবস্থিত পুরাতন মুসলিম স্থাপত্য ‘আওকরা মসজিদ’। উপজেলা পরিসংখ্যানের তথ্যে পাওয়া গেছে, ওই মসজিদটি প্রায় আড়াই’শ বছর পূর্বে বাংলা ১১৭২ সালে মীর্জা লাল বেগ মুসলিম সম্প্রদায়ের নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। চিকন ইটে নির্মিত দেয়ালে নকশা করা মসজিদটি উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেলান নদীর পূর্ব ধারে মির্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত। ওই এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা ধারণা করেন এক সময় মসজিদটির আশপাশে মুসলিম জনবসতি ছিল। যে কারণে এখানে ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ব্রিটিশ সরকারের আমলে অথবা অন্য কোন কারণে তারা মসজিটির আশপাশ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। ফলে এটি অযত্ন-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে। বর্তমানে সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মসজিদটি। তবে মির্জা লাল বেগের ওই মসজিদকে ঘিরে মির্জার মাঠে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যা পরে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এছাড়াও একই স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মির্জার মাঠ আওকরা মসজিদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে আরও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, মির্জা সাহেব মসজিদটি প্রতিষ্ঠার সময় কি নাম রেখেছেন তাও কেউ বলতে পারে না। লোকজন মসজিটির পাশ দিয়ে বয়ে চলা রাস্তায় যাওয়ার সময় এটির মধ্যবর্তী অংশের দূর থেকে দাঁড়িয়ে কথা বললে এক সময় জোরে প্রতিধ্বনির সৃষ্টি হত। তাই শুনে তারা ভাবত মসজিদটি তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে। এ থেকে মসজিদটির নাম হয়ে যায় ‘আওকরা মসজিদ’ অর্থাৎ কথা বলা মসজিদ। এখনও এটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শব্দ করে কথা বলে প্রতিধ্বনি শোনার আশায়। কিন্তু মসজিদের দেয়াল ফেটে গিয়ে নষ্ট হওয়ায় এবং এর গায়ে আগাছা পরিপূর্ণ হওয়ায় আগের মত আর আওয়াজ হয় না। ওই এলাকার একাধিক প্রবীণ লোকজনের সাথে আলোচনা করেও মসজিদটিতে সর্বশেষ কত সালে নামাজ আদায় হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে মীর্জা লাল বেগের ওই মাঠে উজ্জ্বলময় দুটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও উপজেলার একমাত্র পুরাকীর্তি ও ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদটির প্রতি সরকারি বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা ধর্মভীরম্ন মুসলিম বিত্তশালীরা কেউই এটির প্রতি দৃষ্টিপাত করছেন না। ফলে মসজিদটির যে টুকু অংশ এখনও অবশিষ্ট রয়েছে তাও ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী দাবি করেন এ অবস্থাতেও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কিংবা সরকারি কোনো পদক্ষেপ নিয়ে মসজিদটির সংস্কার করা হলে, এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে হতে পারে