রতিদিন পৃথিবীতে প্লাষ্টিক বর্জ্যের সংখ্যা অপরিকল্পিত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৩০ বছরে এসকল বর্জ্যের পরিমাণ এতটাই বৃদ্ধি পাবে যে, পৃথিবীর মহাসাগরগুলোতে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের সংখ্যাই বেশি হবে। সাম্প্রতিককালে একটি প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অবস্থিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রথম দিনের সম্মেলনে গ্লোবাল স্টাডি নামের একটি সংস্থা এই ফলাফল প্রকাশ করে।
গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন প্রতিদিন বর্জ্য হিসেবে যে সকল পদার্থ আবর্জনার স্তূপে জমা হয় তার মধ্যে প্লাস্টিকের সংখ্যাই বেশি। যে কারণে আমাদের বাস্তুসংস্থান প্রতিনিয়নত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। ধারণা করা হয় প্রায় প্রতিবছর প্রায় আট মিলিয়ন প্লাস্টিকের সর্বশেষ গন্তব্যস্থান হয় মহাসাগরগুলোতে। গত বছরের মাঝামাঝি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অপর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, সমুদ্রে বর্তমানে মাছের খাবার হচ্ছে প্লাস্টিক, আর এই অপচনশীল প্লাস্টিক মাছের খাদ্য হওয়ায় অনেক মাছই অস্বাভাবিক মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ ভারতের মুম্বাইয়ের সমুদ্র সৈকতে প্রায় অর্ধশতাধিক তিমি মাছ ভেসে ওঠার ঘটনাটি আমাদের সামুদ্রিক বিপর্যয়ের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
গবেষণায় আরো বলা হয়, প্রতি বছর ৯৫ শতাংশ প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে ১২০ মিলিয়ন ডলার আয় করা হয়। প্লাস্টিকের মোড়ক ব্যবহার বন্ধ করা হলে এই শিল্প তার প্রতি বছরের এই বিপুল পরিমান আর্থিক আয় হারাবে। প্লাস্টিকের বর্জ্য প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর এই বিষয় নিয়ে সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের উদ্যোগে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হলে সেখানে উপস্থিত বক্তারা কিভাবে ব্যবহারের পর প্লাস্টিক ধ্বংস করা য়ায় এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। সেখানে আরো বলা হয় মহাসাগরগুলোতে আগে যেখানে প্রতি তিন টন মাছের জন্য একটন করে বর্জ্য ফেলা হতো। কিন্তু বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে এমন দাড়িয়েছে যেখানে মাছের চেয়ে বর্জ্যের সংখ্যাই বেশি। এখানে উল্লেখ্য যে, অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি প্লাস্টিকের অতিক্ষুদ্র কণাকে কৃত্তিম উপায়ে ধ্বংস করার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তাদের পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রকৃতিতে গুটি পোকাই একমাত্র প্রাণী যারা প্লাস্টিক খেয়ে হজম করতে পারে।
অর্থনৈতিক ফোরামের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা গ্রহন করতে না পারলে বাস্তুসংস্থানের উপর এর বিরুপ প্রভাব পড়বে। তবে প্লাস্টিক শিল্পের কথা মাথায় রেখে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে নতুন কিছু উদ্ভাবনের কথাও বলা হয় সেমিনারটিতে। ব্যবসায়ীদের তাদের পণ্য প্লাস্টিকের মোড়কে সংরক্ষনের পরিবর্তে এর বিকল্প কিছু ব্যবহার করার আহ্বান জানানো হয়। তবে কিছু প্লাস্টিক আছে যেগুলো একবার ব্যবহারের পরে আর ব্যবহার করা যায় না, সেগুলো প্লাস্টিক শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেসকল প্লাস্টিক পুণরায় ব্যবহার করা যায় সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর মাধ্যমে সার্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো সুরক্ষিত করা যায়।