গর্ভকালীন সময় প্রত্যেক নারীর জীবনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময় সবারই উচিত নিজের ডায়েটের দিকে নজর রাখা। এই সময়ে অস্বাস্থ্যকর ডায়েট মা এবং শিশুর উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় সুষম ডায়েটের মধ্যে অবশ্যই বিভিন্ন প্রকারের ফল অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থায় ফলের মধ্যে তরমুজ খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি, ভিটামিন সি, এ, বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় তরমুজ গর্ভবতী নারীদের জন্য একটি আদর্শ ও স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে চলুন জেনে নেয়া যাক গর্ভবতীদের জন্য তরমুজের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো-
প্রাতঃকালীন অসুস্থতাকে নিয়ন্ত্রণ করে
গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েকটি মাস বেশিরভাগ নারীরাই বমিভাবযুক্ত অস্বস্তিতে ভোগেন। এটি সারাদিনে যেকোনো সময় ঘটতে পারে। যার ফলে খাবার খেতেও অরুচি দেখা দেয়। এই অস্বস্তিকে দূর করতে তরমুজ খুবই উপকারী। সকালে অল্প কিছু খাওয়ার পর তরমুজের টুকরো বা এক গ্লাস রস পান করলে শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। তাই গর্ভবতীদের জন্য দিনের প্রথম খাবার হিসেবে তরমুজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডিহাইড্রেশন দূর করে
গর্ভাবস্থায় অনেকেই ডিহাইড্রেশনে ভোগেন। এটি এসময় খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। এর ফলে দেখা দিতে পারে নানারকম জটিলতা। যেমন ক্লান্তি, অলসতা, শারীরিক শক্তির অভাব ইত্যাদি। তরমুজের প্রায় নব্বই শতাংশই পানি। তাই এ সময় ডিহাইড্রেশন দূর করতে তরমুজ খুবই কার্যকরী।
ইডিমা বা ফোলাভাব রোধ করতে
প্রায় গর্ভবতী নারীদের হাত ও পা ফুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। যা ইডিমা নামে পরিচিত। যখন মূত্রের স্বল্পতা, রক্তহীনতার কারণে শরীরের কিছু নির্দিষ্ট টিস্যুতে অস্বাভাবিকভাবে তরল জমা হয়ে ফুলে ওঠে, তখন তাকে ইডিমা বলা হয়। এই ফোলাভাব বা ইডিমা গর্ভাবস্থার একটি সাধারণ সমস্যা। তরমুজ কার্যকরভাবে পেশী এবং শিরাগুলোতে তৈরি হওয়া বাধাগুলোকে ঠিক করে। তাই হাত পায়ের ফোলাভাব দূর করতে এবং রোধ করতে আপনি এসময় তরমুজ খেতেই পারেন।
অম্বল নাশক হিসেবে কাজ করে
গর্ভাবস্থায় দেহে হরমোনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এই পরিবর্তনগুলো গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে আসে। যার ফলে খাবারে অরুচি দেখা দেয়। আর দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা বা হজমের সমস্যার কারণে অম্বলের সৃষ্টি হয়। তাই এই সময়ে অল্পকিছু খাওয়ার পর তরমুজ কেটে খেতে পারেন। এটি হজম ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং অ্যাসিডিটি বা অম্বল থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়াও পাচনতন্ত্রের সমস্যায় দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তরমুজের রস বা টুকরো তরমুজ খান।
দেহকে ডিটক্সিফায়িং করে
তরমুজের মধ্যে মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা দেহের বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করতে এবং দেহের ইউরিক অ্যাসিড হ্রাস করতে সহায়তা করে। তরমুজের এই বৈশিষ্ট গর্ভাবস্থায় লিভার এবং কিডনিকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি ত্বকের এসপিএফ বাড়াতেও সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
গর্ভাবস্থায় নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাত্রা হ্রাস পায়। যার ফলে এই সময়ে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তরমুজের লাল অংশে লাইকোপেন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা অনাক্রম্যতার স্তরকে বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ থাকায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
এসময় কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই সাধারণ এবং অস্বস্তিকর সমস্যা। এই সময় গর্ভবতী নারীদের যে কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে তরমুজ খেতে পারেন। কারণ তরমুজে থাকা ফাইবার মল গঠনে সহায়তা করে। যা পেটের সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনই অল্প করে তরমুজ খেতে পারেন।
ভ্রূণের হাড় গঠনে সাহায্য করে
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়ার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, এটি গর্ভে থাকা শিশুর হাড় এবং দাঁত গঠনে সহায়তা করে। তরমুজে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম। যা ভ্রূণের সঠিক হাড়ের বিকাশের জন্য সহায়ক।
এছাড়াও তরমুজের রয়েছে আরো অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। গর্ভাবস্থায় এটি অন্যান্য ফলের পাশপাশি খুবই দরকারি। তাই এসময় প্রতিদিনই আপনি এক গ্লাস তরমুজের রস পান করতে পারেন। আবার টুকরো করে কেটেও খেতে পারেন।