বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে পুরুষের তুলনায় নারীদের গড় আয়ু বেশি। বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু পুরুষদের তুলনায় ৪ বছর বেশি।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল বা ইউএনএফপিএর ’বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২১’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৫ বছর, যেখানে পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ বছর। এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৪.২ বছর। আর পুরুষদের ৭১.১ বছর।
শিশুকাল থেকে শুরু করে বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত একজন পুরুষ ও নারীর যে সংগ্রাম, সেখানেই কিছুটা ছন্দপতন রয়েছে। পরিশ্রম করছে দুজনই, তারপরও কেন গড় আয়ুর এত পার্থক্য? এ প্রশ্ন হয়তো ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনেই। বিশেষজ্ঞরা এর কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তাদের মতে, নারীর গড় আয়ু বেশি বা কম হওয়ার পেছনে নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কাঠামো জড়িত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক বেল্লাল হোসেন জানান বাংলাদেশে নারীর এই গড় আয়ু ২০০৩-০৫ এর মধ্যেই বৃদ্ধি হতে থাকে।
তার মতে, প্রায় দুই থেকে তিন দশক আগেও নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি ভীষণ অবহেলিত ছিল। নারীরা অপুষ্টিতে ভুগতেন, নারীর স্বাস্থ্যসেবা বিশেষ করে মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। যার কারণে নারীদের গড় আয়ু ছিল কম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে।
অন্যদিকে, নারী পুরুষের আয়ুষ্কালের মধ্যে এ পার্থক্য নতুন কিছু নয়, বরং বিশেষজ্ঞরা এটি দশকের পর দশক ধরে লক্ষ্য করছেন।
অস্ট্রেলিয়ার সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা পারমিন্দার সাচদেব মানুষের আয়ুষ্কাল নিয়ে গবেষণা করেছেন।
তার মতে, কেন নারীরা বেশিদিন বাঁচেন? এ ব্যাপারে জনপ্রিয় কিছু তত্ত্ব আছে, এর কিছু কিছু জীববিজ্ঞানের সাথে জড়িত; আবার কিছু কিছু মানব আচরণের সাথে জড়িত।
তার মতে, পুরুষেরা তুলনামূলকভাবে বেশি ধূমপান করেন, মদ্যপান করেন এবং অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হয়ে যান। তারা প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক্তার দেখাতেও অনাগ্রহী এবং রোগ ধরা পড়লে তারা নিয়মিত চিকিৎসাও নেন না।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, পুরুষেরা অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ, জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ-এসব কাজ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নেন।
এই যেমন- গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া কিংবা ঝগড়া-লড়াই। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক প্রমাণও রয়েছে। পুরুষের শরীরে থাকা মেল সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে তাদেরকে এরকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দিকে বেশি ধাবিত করে।
ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের সম্পর্ক রয়েছে।
পারমিন্দার সাচদেব এর মতে, পুরুষের হরমোনকে দোষ দেয়া যায় না; বরং নারীদের হরমোনই তাদের বিশেষ কিছু সুবিধা দিয়ে যায় আজীবন। এস্ট্রোজেন নামের হরমোন নারীদের বলতে গেলে সুরক্ষাই দেয়; এর একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভূমিকা আছে।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এন্ডোক্রিনোলজি এর ২০১৩ সালের রিভিউতে দেখা যায়, ডিএনএ ক্ষতিকে প্রতিরোধ করতে পারে এস্ট্রোজেন।
রিভিউ থেকে আরও জানা যায় যে, এস্ট্রোজেন কোষের কার্যক্রমকে স্বাভাবিক ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এরকম নানা ধরনের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল নারীদের অধিক আয়ুষ্কাল সম্পর্কেই যুক্তি দেয়।