আওরঙ্গজেব কামালঃ
ক্যান্সার চিকিৎসা যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি দেশে চাহিদার
তুলনায় এই মরণব্যাধির চিকিৎসাসেবাও অপ্রতুল। মানুষের চিকিৎসার একমাত্র
ভরসা জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল । আর এই হাসপাতালের
যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। ঢাকায় জাতীয়
ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগের যেন
শেষ নেই। প্রতিনিয়ত রোগীদের হয়রানী,দালাল চক্রের উৎপাত,এবং ওষধ কোম্পানীর
অত্যাচারে অতিষ্ট রোগীরা। এছাড়া হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে
চিৎসকদের ব্যবহারে রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এছাড়া চিকিৎসকরা ওষুধ
কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে রোগীদের হয়রানী করছে এমন
অভিযোগ উঠেছে।রাজধানীর একমাত্র সরকারি ক্যান্সার হাসপাতালে এরকম আরও নানা
অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন চরম আকার ধারন করেছে। সব সময় লক্ষ করা যায় এই
হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসক রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে রোগীদের সাথে
খারাপ আচারন করে এবং কিছু চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের নিয়ে বসে
খোশ গল্প করে অথচ প্রচুর রোগীর ভীড় থাকলেও তারা সে বিষয়ে তোয়াক্কা করেন
না। এবিষয়ে চিকিৎসকদের কিছু বলতে গেলে তাদেরকে নানাবিধ হুমকী ধমকী এমন কি
দালাল চক্র দিয়ে ঐ ব্যাক্তিকে নাজেহাল করেন। অথচ ‘জনগণের টাকায় তারা বেতন
পায় তারা৷ রোগীদের সাথে এরকম আচরণ করেন এবিষয়ে যেন দেখার কেহ নেই।
ডাক্তার আর নার্সদের দাপটে রোগীদের অসহায় হয়ে থাকতে হয় সব সময় ,কোনো কথা
বলা তো যায় না! আর কী বলব ভাই, এদের কুকর্ম আর অনিয়মের কথা লিখতে গেলে
যেন বলতে গেলে শেষ হবে না এমন মন্তব্য এক রোগী। সরেজমিনে যেয়ে দেখাযায়
রেডিও থ্যাপীর ফলোআপ রুম ১১৪ সেখানে বাইরে বসে আছে অসংখ্য ওষুধ কোম্পানীর
প্রতিনিধি। রোগীদের জন্য কোন চেয়ারখালী নেই। সব চেয়ার তাদের দখলে। আর
ভিতরে অনেক চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানীর উৎকোচ নিতে ব্যস্ত কিন্ত বাইরে
রোগীদের আহাজারী। কোন রকম একটি ব্যবস্থাপত্র বাহির হলে ওষুধ কোম্পানীর
প্রতিনিধিরা তার ছবি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কারন যে পরিমান চুক্তি আসে সে
পরিমান ওষুধ চিকিৎসকরা লিখছেন কিনা।এবিষয় কথা বলতে গেলেই তেড়ে আসে
চিকিৎসকসহ দালালরা। এমন চিত্র প্রতিনিয়ত এই হাসপাতালে প্রতিটি দপ্তরে।
বাথরুম গুলি অত্যন্ত নোংড়া প্রচন্ড দূরগন্ধ যেন যাওয়া উপযোগী নেই।অধিকাংশ
চিকিৎসক ও নার্সের ব্যবহারে বা খামখেয়ালী পনায় রোীদের ভোগান্তির আর শেষ
থাকে না। অনেকে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ী ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
চিকিৎসকের সামনে রোগী মারা যাচ্ছে কিন্ত চিকিৎসকের এবিষয়ে কোন খেহাল নেই।
বাংলাদেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা যা আছে, তা একদিকে অপ্রতুল এবং
অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ব্যয়বহুল। আক্রান্তদের অনেকে বলেছেন,
চিকিৎসা ব্যয় সামলাতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করে পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে
পড়ছে। তার পর চিকিৎসকরা রোগীদের শুধু ঘোরাতে থাকে নানা বিধ পরিক্ষা
নিরিক্ষা দিয়ে রোগীদের হয়রানী করে। এছাড়া অধিকাংশ চিকিৎসকের নিজিস্ব
দালাল রয়েছে তারা রোগীদের বুঝিয়ে নিজেদের ক্লিনিক বা চেম্বারে নিয়ে যায়
এরপর শুরু হয় কসাই কারবার। আবার এদের বিরুদ্ধে কিছু লিখলে আন্দোলনের
হুমকী দেয়। বাংলাদেশের গরিব ক্যান্সার রোগীদের একমাত্র ভরসা জাতীয়
ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এখানে চিকিৎসা নেওয়া ছাড়া
রোগীদের আর কোন যায়গা নেই।আর সেই হাসপাতালে যদি এমন হয় তাহলে রোগীরা যাবে
কোথায়? ক্যান্সার নিয়ে গবেষণাকারী একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ২০১৮ সালের
রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার মানুষ
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এছাড়াও, প্রতিবছর আরও প্রায় দেড় লাখ
মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। সেখানে রোগীদের কয়েকজন বলেছেন,
বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় সরকারি এই হাসপাতালে খরচ কিছুটা কম। কিন্তু
লম্বা সময় ধরে সেটাও সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর এর একমাত্র
কারন দালাল চক্র। টাকা দিলে সব হয় আর টাকা না দিলে লম্বা সময় অপেক্ষা
করতে হয়। রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে তো আর কথা নেই। যেন সময়মতো হাসপাতালে
ভর্তি হয়ে চিকিৎসা পাওয়া আর চাদে যাওয়া সমান কথা। ভোগান্তি পোহাতে
পোহাতে রোগী ও স্বজনরা দিশেহারা হয়ে দালালদের পাতানো জালে পা দেয়।
হাসপাতারে কেমোথেরাপি দিতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয় এবং রেডিও
থেরাপির সিরিয়াল পেতে ৫ মাস থেকে বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে।
অপারেশনেই এরকম সময় লাগছে। ফলে রোগীরা উপয় না পেয়ে এসব দাললদের মাধ্যমে
প্রতাড়িত হচ্ছে। উল্লেখ্য,জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও
হাসপাতালের আইসিইউয়ের জন্য আটটি অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি
ভেন্টিলেটর (এআরভি) কেনার ১২ বছরেও তা স্থাপন না করায় চরম ক্ষোভ জানিয়ে
ছিল হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, হাসপাতালটির চরম অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বশীল
ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলা শুধু দুঃখজনকই নয়, তা নিন্দনীয় ও উদ্বেগের
বিষয়।
লেখক ও গভেষকঃ
আওরঙ্গজেব কামাল
সভাপতি
ঢাকা প্রেস ক্লাব
|