করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। আক্রান্তের তালিকাতেও প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন অসংখ্য নাম। এই অবস্থায় সংক্রমণ হার বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে ঢাকায় লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় ভাগ করে শুরু হলো এলাকাভিত্তিক ভিন্নমাত্রার লকডাউন। আর লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনীও।
লকডাউন করার বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান বলেন, `লকডাউনের ফলে এখন এই এলাকা থেকে কেউ বের হতে পারবে না এবং কাউকে প্রবেশ করতেও দেওয়া হবে না।`
প্রাথমিকভাবে লকডাউন চলবে ১৪ দিন। ফলে সেখান প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষকে ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হবে। এলাকাটিতে অন্তত ৩১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
লকডাউন নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও কাজ করছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। পূর্ব রাজাবাজার এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় রাত থেকে পরীক্ষামূলক লকডাউন শুরু হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই লকডাউন নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা মাঠে কাজ করবে। এজন্য সেনা টহল জোরদার করা হয়েছে। সেনা সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে লকডাউন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
মঙ্গলবার মধ্যরাত ১২টা থেকে ঢাকার প্রথম এলাকা হিসেবে সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে পুরোদমে লকডাউন কার্যকরের তৎপরতা শুরু হয়। রাত ১২টার পর রাজাবাজারের গলিগুলোতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় ওই এলাকায় সেনা সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা যায়।
গতরাতে রাজাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব রাজাবাজার মসজিদ গলির শেষ মাথায় বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা আছে- `করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষামূলক রেড জোন চিহ্নিত করে পূর্ব রাজাবাজার এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রবেশ নিষেধ।`
অপরদিকে গ্রিন রোডে অবস্থিত আইবিএ হোস্টেলের পাশের সড়কের প্রবেশপথও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ওই পথ দিয়ে চলাচলরত সাধারণ নাগরিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাত ১২টার পর এই সড়ক দিয়ে আর কেউ বের হতে পারবেন না। পাশাপাশি প্রবেশও করতে পারবেন না। সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই টানা ৬৬ দিনের ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন নির্দেশনা মানা সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ থাকা গণপরিবহনও (বাস, লঞ্চ, ট্রেন) চালু হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি নেই। বরং দিন দিন অবস্থা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এজন্য নতুন করে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। পূর্ব রাজাবাজারের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর শুরু হলো।’
গত সোমবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবেলার লক্ষ্যে ডিএনসিসি এলাকার জন্য গঠিত কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় পূর্ব রাজাবাজার ‘লকডাউন’ করার সিদ্ধান্ত হয়।
ডিএনসিসি পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লকডাউন চলাকালে পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় বসবাসরত লোকজন বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাইরের লোকজন এই এলাকায় ঢুকতে পারবেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী অনলাইনের মাধ্যমে কেনা যাবে, যা বাসায় পৌঁছে দেয়া হবে। এটুআই ও ইক্যাব যৌথভাবে এটি পরিচালনা করবে। হোম ডেলিভারির জন্য ইতিমধ্যে একদল প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী তৈরি করা হয়েছে। যাদের অনলাইন সুবিধা নেই, নগদ অর্থে খাদ্যসামগ্রী কিনতে চান, তাদের জন্য দুই-একটি শাক-সবজি, মাছ-মাংসের ভ্যান, ভ্যানচালক ও পণ্যসামগ্রী সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করে ভেতরে প্রবেশ করানো হবে। কর্মহীন, অসহায় ও দুঃস্থ মানুষদের তালিকা অনুযায়ী ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হবে। রোগীদের জন্য টেলিমেডিসিন সেবা চালু থাকবে।
এলাকার নাজনীন স্কুল এন্ড কলেজে কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এটি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
গুরুতর রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারবে। জরুরি সেবার কর্মীরা এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন। থাকবে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা দল।