রাজধানীতে আবারও বেড়েছে বায়ু দূষণ। এতে ঢাকার বাতাসে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াসা। আজ সকাল থেকে ঢাকার বাতাস রয়েছে অতি অস্বাস্থ্যকর মাত্রায়। বিশ্বব্যাপী বায়ুমান যাচাই সফটওয়্যার এয়ার ভিজ্যুয়ালের বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে এখন বাংলাদেশের অবস্থান সবার উপরে। এমন অবস্থায় মাস্ক ছাড়া নগরবাসীর রাস্তায় বের হওয়া চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।এয়ার ভিজ্যুয়াল বলছে, বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় ঢাকার বাতাস মানুষের স্বাভাবিক সহ্য ক্ষমতার তুলনায় ৪ গুণ বেশি দূষিত পাওয়া গেছে। এসময় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে ঢাকার বাতাসের মান ছিল ২৪৮ একিউআই। অথচ বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের মানমাত্রায় ৫০ একিইউআই মানের পর্যন্ত বাতাসকে ভালো ধরা হয়।
সফটওয়্যারটির র্যাংকিংয়ে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। ২১৬ একিউআই মানমাত্রার বায়ু নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা শহর।
এয়ার ভিজ্যুয়াল আরও জানায়, বেলা ১২টায় ঢাকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর সূক্ষ্ম ধূলিকনার উপস্থিতি ছিল ১৯৮ মাইক্রোগ্রাম। এই অবস্থায় রাজধানীবাসীকে সাইকেল না চালাতে, জানালা খোলা না রাখতে এবং একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছে সফওয়্যারটি। একান্ত প্রয়োজনে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরারও পরামর্শ দিয়েছে এয়ার ভিজ্যুয়াল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও বায়ুমান গবেষক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বাংলাভিশনকে বলেন, আজ ভোর থেকে ঢাকার বায়ুমান ক্ষতিকর মাত্রায় (৩০০ একিউআই) চলে গিয়েছিল। এখন ধিরে ধিরে একটু কমছে। সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ৩০০ একিউআই এর উপরে টানা ৩ ঘণ্টার বেশি থাকলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। কারণ এতটা দূষিত বায়ু গ্রহণ করলে শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন রোগ বেড়ে যাবে। বিশেষ করে শিশুদের রেসপিরেটরি সিস্টেম দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এজন্যই এমন পরিস্থিতিতে কম বের হতে বা বের হলেও মাস্ক পরতে বলি।
হঠাৎ দূষণ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকে ঢাকার বায়ুদূষণ বাড়ে। তবে এবার নভেম্বর মাসটা আমরা এতটা খারাপ বায়ু পাইনি। এর বড় কারণ নভেম্বরে এবার তাপমাত্রা তেমন একটা কমেনি, বাতাসের গতিবেগও ঠিক ছিল। তাছাড়া, মেট্রোরেলের নিচের স্তরের কাজ প্রায় শেষ হওয়ায় এখানেও দূষণ কমেছে। তবে বিআরটি প্রকল্প এলাকা সেসময়ও দূষিত ছিল।
‘কিন্তু ডিসেম্বরের শুরু থেকে তাপমাত্রা কমে এসেছে, বাতাসের গতিবেগও বেড়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যপকভাবে বর্জ্য পোড়াতে দেখা যাচ্ছে। আর গাড়ির কালো ধোয়াতো আছেই। বায়ুপ্রবাহ কমে যাওয়ায় এই ধোয়াগুলো বায়ুমণ্ডলে গিয়ে জমে যাচ্ছে। ফলে একটি ধোঁয়াসা তৈরি হয়ে দূষিত বায়ুকে আটকে দিচ্ছে। বৃষ্টি বা বায়ুপ্রবাহ থাকলে এতটা থাকতো না’। বলেন, বায়ুমান বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।