মোঃ আফজাল হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি পার্বতীপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ সেল্স এন্ড সোসাইটি লিমিটেডের বিতর্কিত (অবৈধ) সভাপতিদ্বয়ের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও টাকা আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু প্রাথমিক সমিতির সদস্যবৃন্দরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করলেও এক দেড় বছর যাবত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে আছে। ১৯৩৮ সালে স্থাপিত পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর উপজেলা নিয়ে ৩৬টি সমিতি সমন্বয়ে এর কার্যক্রম। পরবর্তীতে পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী উপজেলার ইউনিয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ ও গভীর নলকুপ কৃষি সমবায় সমিতি লিঃ ২৬টি প্রাথমিক সদস্য নিয়ে পেডি সেল এন্ড সাপ্লাই লিঃ গঠন করা হয় এর সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪ হাজারে ১৯৪৩ সালে সংশোধনের মাধ্যমে পার্বতীপুর সেন্ট্রাল পেডি সেল এন্ড সাপ্লাই নামে সংশোধিত হয়। ১৯৬২ সালে পুনরায় সংশোধনের মাধ্যমে পার্বতীপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ সেল্স এন্ড সোসাইটি লিঃ নামে পরিচালিত হয়ে আসছে, রেজি নং ৮৯, ১৪/৬/১৯৬২ খ্রিঃ। এই কো-অপারেটিভের প্রধান কার্যালয় অফিস পার্বতীপুরে অবস্থিত।
জানা যায়, পার্বতীপুর সেন্ট্রাল কো-অপরেটিভ সেল্স এন্ড সোসাইটি লিঃ এর বিতর্কিত সভাপতি হারুনুর রশীদ ও তার মরহুম পিতা শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফুলবাড়ী শ্রী সংকর রাইচ মিলের ৪.৭৩ একর সম্পত্তির মধ্যে ০.১৩ একর পাকা নির্মাণকৃত অফিস ও বাসাবাড়ী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয় ও সমবায় অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া ২৪/২৫ লক্ষ টাকায় ২০১৪ইং সালে জনৈক শ্রী অর্জুন কুমার ঘোষ ও অসীম কুমার ঘোষের কাছে রেজিষ্ট্রির মাধ্যমে বিক্রি করে। যাহা আদালতে মামলা চলছে এমনকি ফুলবাড়ী রাইচ মিলের নিজস্ব স্থাপনের জায়গা টাকার বিনিময়ে এককালিন পজেশন হস্তান্তর অর্থাৎ বিক্রি করেছে। তাছাড়া এই রাইচ মিলের চাতালের অগ্রীম ভাড়া ভাড়াটিয়া আব্দুল খালেক ও মোহসীন আলীর কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করে। তাতে দেখা যায় স্ত্রী সংকর রাইচ মিলের খরচ বাবদ দেখিয়ে সর্বমোট কোটি টাকার বেশী আত্মসাত করেছেন।
সাবেক সভাপতি মরহুম শরিফুল ইসলাম সমবায় অধিদপ্তরে চাকুরীকালিন মন্মথপুর এলাকায় কো-অপারেটিভ সেল্স এন্ড সোসাইটি লিমিটেড রাইচ মিলের খোস কবলাকৃত ২.২৪ একর জমি মোঃ মফিজ উদ্দিন প্রামানিক ও মোঃ ফজলুল হক প্রামানিকের কাছে সাব কবলা দলিল মুলে পার্বতীপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে যার দলিল নং- ৪৪৮১ ও ৪৪৯৩ তাং- ১০/০৪/১৯৮২। বর্তমান এই জমির বাজার মূল্য ৫০-৬০ লক্ষ টাকা। ইতিপূর্বে আরজি আতরাই ইউসিএমপিএস এর সভাপতি মোঃ শামসুল হুদা ও হলদিবাড়ী ইউসিএমপিএস এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন অবৈধ সভাপতি মরহুম শরিফুল ইসলাম ও হারুনুর-রশিদ এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে টাকা আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করলে তারা খুব্ধ হন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা রংপুর বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক ও দিনাজপুর জজ আদালতে মামলা দায়ের করে বিপদে ফেলেন। আরজি আতরাই ইউসিএমপিএস লিঃ ও হলদিবাড়ী ইউসিএমপিএস লিঃ সমিতি দুটিকে সমিতির পূর্বে আরজি আতরাই ও হলদিবাড়ী নাম থাকায় অজুহাতে সমিতির সভাপতি দুটি সমিতির নিবন্ধন বাতিল বলে ঘোষণা করে। পরে দুটি সমিতির সদস্যবৃন্দ মামলা করে সভাপতির বাতিলকৃত সমিতির মামলা খারিজ করে দেন। এই দুটি সমিতি নিবন্ধন বাতিল করা সভাপতির এখতিয়ার বহিঃভর্‚ত। এই মামলা চলাতে ৩/৪ বছর সময় ব্যয় করা হয়েছে এর মধ্যে অবৈধ সভাপতি কোন সদস্য অভিযোগ না করার সুযোগ বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেছে।
এরপর পার্বতীপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ সেল্স এন্ড সোসাইটি লিঃ এর বেশ কিছু প্রাথমিক সমিতি অবসায়নের অন্তভর্‚ক্ত হয় আরজি আতরাই ইউসিএমপিএস লিঃ অবসায়নের আদেশ হয়। জনাব মোঃ শামসুল হুদা উক্ত সমিতির অবঃশায়ন আদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপজেলা সমবায় অফিসারের মাধ্যমে জেলা সমবায় অফিসারের দপ্তরে প্রেরণ করেন। অবঃশায়ন আদেশ প্রত্যাহারের সব কাগজপত্র সঠিক থাকা সত্তে¡ও হারুন-উর-রশিদের সলাপরামর্শে জেলা সমবায় অফিসার মোঃ শাহজাহান সাহেব তার সমিতিকে অবসায়নের আদেশ প্রত্যাহার করা গেল না মর্মে শামসুল হুদাকে ৯/১২/২০১৮ইং তারিখে পত্র প্রেরণ করেন। পরে সমিতির সভাপতি অবসায়নের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য বৈধ কাগজপত্র প্রেরণ করা সত্তে¡ও জেলা সমবায় অফিসার প্রত্যাহারের আদেশ না দেওয়ার জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট শামসুল হুদা অভিযোগ করেন। পরে তিনি বাধ্য হয়ে অবসায়নের আদেশ ১৯ মাস পর প্রত্যাহার করেন। অবসায়ন আদেশ প্রত্যাহারের জন্য সমিতির সভাপতি হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে।
হারুন-উর-রশিদ পার্বতীপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ সেলস এন্ড সোসাইটি লিঃ এ ভুয়া নির্বাচন করে সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করার পরিপ্রেক্ষিতে গোবিন্দপুর গভীর নলকুপ সমবায় সমিতি লিঃ এর ৩০ জন সমিতির সদস্য দিনাজপুর জেলা সমবায় অফিসারের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক সমবায় দপ্তরের পরিদর্শক বর্তমান জেলায় সমবায় অফিসে চাকুরীরত অডিট অফিসার মোঃ সরোয়ার মোর্শেদ তদন্ত করে নির্বাচন সংক্রান্ত কাগজপত্র ও রেকর্ড পত্র হারুন-উর-রশিদ তদন্তকালে উপস্থাপন করতে পারেননি এবং সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়া ভুয়া প্রমানিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের স্মারক নং-৪৭.৬১.২৭০০.০০০.৩৭.০০৪.১৭ ৭৭৬/১/২ তারিখ ২৫/৪/২০১৮ইং। কিন্তু দুঃখের বিষয় অফিসারের সহযোগিতায় ও আর্থিক সুবিধা ভোগে অবৈধ সভাপতির দায়িত্ব পদটি চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
এসব দুর্নীতির অভিযোগ সমিতির সদস্যবৃন্দ রংপুর বিভাগীয় যুগ্ম-নিবন্ধকের কাছে তদন্ত করার জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তিনি ঘোড়াঘাট উপজেলা সমবায় অফিসার জনাব প্রদীব কুমারের কাছে তদন্ত করার জন্য দায়ীত্ব দেন। তিনি সাবেক সভাপতি মরহুম শরিফুল ইসলাম ও ওয়ারিশ সুত্রে (নিয়মবহিভর্‚ত) ভুয়া নির্বাচিত হয়ে তার ছেলে সভাপতি হারুনুর রশীদের পক্ষে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মিথ্যা তদন্তকার্য সম্পন্ন করেন। তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায় অভিযোগগুলি সত্য গোপন করে সভাপতি হিসাবে পিতা ও পুত্রের পক্ষে তদন্ত কর্মকর্তা সাফাই করে যান। ইতিপূর্বে মরহুম সাবেক সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও তার সন্তান হারুনুর রশীদ কোন সমিতির সদস্যভুক্ত না হওয়া সত্তে¡ও নির্বাচন না করে ছেলে ওয়ারিশ সুত্রে সভাপতি হয়ে কো-অপারেটিভের সম্পত্তি বিক্রি ও স্থাপনা পজেশন হস্তান্তর ও কো-অপারেটিভ রাইচ মিলের ভাড়ার টাকা উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করলেও সংশ্লিষ্ট দফতরের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই বরঞ্চ তাদেক সহযোগিতা করে অফিসারেরা আর্থিক ফায়দা নিয়েছেন।
ঘোড়াঘাট উপজেলা সমবায় অফিসার জনাব প্রদীপ কুমারের মিথ্যা তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী সদস্যগণেরা ক্ষুব্দ হয়ে রংপুর বিভাগীয় যুগ্ম-নিবন্ধক জনাব আমীর আযম সাহেবের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বাদী, বিবাদী ও তদন্তকারী অফিসারকে অফিসে ডেকে নিয়ে সবার বক্তব্য শুনে তদন্ত কার্য্য সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই তদন্ত রিপোর্ট পড়ে দেখা যায় সাবেক যুগ্ম-নিবন্ধক আমীর আযম মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে অবৈধ সভাপতি হারুনুর রশীদের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পরবর্তীতে সমিতির পূর্বের আবেদনকারী সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ গং সাবেক যুগ্ম-নিবন্ধক জনাব আমীর আযমের বিরুদ্ধে মিথ্যা তদন্ত কার্য সম্পন্ন করায় ঢাকাস্থ সমবায় অধিদপ্তেেরর নিবন্ধক ও মহাপরিচালকের বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। নিবন্ধক সাহেব রংপুর বিভাগীয় সাবেক যুগ্ম-নিবন্ধক আবুল বাশার সাহেবকে তদন্ত কার্য্য করার নির্দেশ দিলে তিনি নীলফামারী জেলা সমবায় অফিসার জনাব আব্দুস সবুর সাহেবকে তদন্ত করার জন্য দায়ীত্ব দেন। বর্তমানে এক দেড় বছর হল জেলা সমবায় অফিসার আব্দুস সবুর সাহেব তদন্ত কার্য সম্পন্ন করতে গড়িমসি করছেন। তদন্ত কার্য্য আলোয় মুখ দেখতে না পাওয়ায় তা ফাইলবন্ধী হয়ে পড়ে আছে। সমিতির সদস্যরা বর্তমান রংপুর বিভাগীয় যুগ্ম-নিবন্ধক জনাব মোঃ মোখলেছুর রহমানের কাছে তদন্তকারী অফিসারের দ্বারা শীঘ্রই তদন্ত কার্য্য সম্পন্ন করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছেন।