ছাত্রলীগের বিবাদে বন্ধ হল, বিপাকে আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা
5, December, 2021, 10:46:22:PM
ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ শাখাকে জেলার অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ নিয়ে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের বিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহ। এমন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অনির্দিষ্টকালের জন্য হল বন্ধের ঘোষণা দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ঘোষণা পর শনিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে ছাত্ররা হল ছাড়েন এবং রোববার (৫ ডিসেম্বর) সকালে হল ছাড়েন ছাত্রীরা। একমাস না হতেই আবারও হল বন্ধে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার সকালে শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাসের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, ১ ডিসেম্বর হলে উঠেছি। ছাত্রলীগের বিবাদে হঠাৎ শনিবার রাত থেকে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। বাড়ি থেকে কষ্ট করে এসে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে। কয়েকদিন পরে ফাইনাল পরীক্ষা কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।
আরেক ছাত্রী শারমিন সুলতানা বলেন, এমনিতেই করোনার জন্য পড়াশোনায় আমাদের খুব ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার হল বন্ধ করা হয়েছে। আমাদের এমন ভোগান্তিতে পড়তে হবে কখনো ভাবিনি। আশা করবো কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে চিন্তে দ্রুত হল খোলার সিদ্ধান্ত নেবে।
মুন্নি জাহান নামে এক ছাত্রী বলেন, ২৯ ডিসেম্বর আমাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা। বাড়ি থেকে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আসছি। গত দেড়বছর আগে হলে সিট কেটে ১ ডিসেম্বর উঠেছি। তবে হঠাৎ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জন্য আমাদের হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এটা কেমন হলো বুঝতে পারছি না। তাদের জন্য আমাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হলো।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের ছাত্র রিয়াদ হাসান বলেন, হঠাৎ করে হল বন্ধের সিদ্ধান্তে আমাদের সব শিক্ষার্থীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাতে হল ছেড়ে এক বন্ধুর মেসে উঠেছি। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষ দ্রুত হল খুলে দিবে বলে আশা করি।
অন্যদিকে, হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আনন্দ মোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একাংশ নেতাকর্মীরা। হল খোলার দাবি জানিয়ে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন।
জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্র ওয়াহেদুর রহমান সবুজ বলেন, প্রায় দুবছর পর অনেক আশা ভরসা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে উঠেছে। তুচ্ছ ঘটনায় হল বন্ধের সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছে। আমরা হল খোলার সিদ্ধান্তে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি।
আনন্দ মোহন কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহজাহান করিম জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের উত্তেজনার মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে হল বন্ধ করা হয়েছে। উভয়ের মধ্যে সমঝোতা হলে আবারো হল খুলে দেওয়া হবে। ছাত্ররা রাতেই হল ত্যাগ করেছে এবং ছাত্রীরাও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হল ছেড়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, সকাল থেকেই আনন্দ মোহন কলেজের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। ছাত্রীরা নিরাপদে হল ছেড়েছে। কিছু শিক্ষার্থী হল বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করলে তাদের শান্ত করা হয়েছে।
৩ ডিসেম্বর রাতে আনন্দ মোহন কলেজ শাখা জেলার অন্তর্গত ইউনিট হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তাদের এমন সিদ্ধান্তে মহানগর ছাত্রলীগের অনুসারীরা আন্দোলনে নামেন।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দিনভর কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। উত্তেজনার মুখে সন্ধ্যার দিকে কলেজের হল বন্ধের নির্দেশনা দেয় কর্তৃপক্ষ।