মানু বালা কোন দিন কল্পনাও করতে পারেননি এমন একটি দিনের কথা। স্বামী হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই তাকে দেখতে হবে পাঁচ সন্তানের লাশ।
কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনাই তার জীবনে বয়ে আনলো এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা। মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পিকআপ ভ্যানের চাপায় মারা যান পাঁচ ভাই।
সেই সঙ্গে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন আরো তিনজন। পরিবারের উপার্জনক্ষম পাঁচ সদস্যের মৃত্যুতে হতবিহবল হয়ে পড়েছেন স্বজন ও আশপাশের মানুষরাও।
নিহতরা হলেন- অনুপম সুশীল, দীপক সুশীল, চম্পক সুশীল, নিরুপম সুশীল ও স্মরণ সুশীল। আহতরা হলেন প্লাবন সুশীল, রক্তিম সুশীল, ও বোন হীরা সুশীল।
আহত তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মাত্র ১০ দিন আগে বাবা সুরেশ চন্দ্র সুশীল মারা গেলে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বানানো হয়েছিলো প্যান্ডেলটি। আর সেখানে কিনা ঠাঁই হলো তাঁরই পাঁচ সন্তানের মৃতদেহ।
কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের মালুমঘাট খ্রিস্টান হাসপাতালের সামান্য উত্তরে রিংভং হাসিনাপাড়ায় সেই বাড়িতে এখন শুধুই শোকের মাতম।
গত ২৮ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান সুরেশ চন্দ্র। তার সৎকার পরবর্তী সব নিয়ম পালন করতে শুরু করেন সুরেশ চন্দ্র শীলের ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে।
মৃত্যুর ১১ দিন পর হবে বাবার শ্রাদ্ধ। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ভোরে আট ভাই-বোন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বসে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সারছিলেন।
ঠিক তখনই তাদের চাপা দেয় একটি পিকআপ ভ্যান। ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় চার ভাইয়ের। পরে এ ঘটনায় গুরুতর আহত অপর দুই ভাই ও দুই বোনকে দ্রুত নেয়া হয় হাসপাতালে।
কাছের খ্রিস্টান হাসপাতালে নেয়া হলে সকাল ১১টার দিকে এক ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরপর পাঁচ ভাইয়ের মরদেহ আনা হয় বাড়ির উঠানে।
এ সময় প্রিয় সন্তানদের মরদেহ দেখে পাথর হয়ে যান ১১ দিন আগে স্বামী হারানো মানু বালা শীল। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
এলাকার জনপ্রতিনিধি জানান, অদক্ষ চালকের অনিয়ন্ত্রিত ড্রাইভিংয়ের কারণে প্রতিদিনই মহাসড়কে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।
কক্সবাজারমুখী পিকআপটি জব্দ করা হলেও পিকআপভ্যানের চালককে শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।